Thursday, April 18, 2024
spot_img
Homeধর্মইসলামী ফিকহশাস্ত্রের উদ্ভাবক

ইসলামী ফিকহশাস্ত্রের উদ্ভাবক

ইমাম আবু হানিফা (রহ.)

ইমাম আবু হানিফা (রহ.)-এর মূল নাম নোমান, উপনাম আবু হানিফা। এ নামেই তিনি পরিচিতি লাভ করেন। পিতার নাম সাবিত। তিনি ছিলেন একজন তাবেঈ।

হিজরি ৮০ সনে, মোতাবেক ৭০০ খ্রিস্টাব্দে কুফায় জন্মগ্রহণ করেন। বাল্যকাল হতেই তিনি তীক্ষ ধীশক্তির অধিকারী ছিলেন। প্রাথমিক জীবনে তিনি ব্যবসার কাজে নিজেকে আত্মনিয়োগ করেন। পরবর্তী সময়ে একজন বিশিষ্ট আলেমের পরামর্শে জ্ঞানার্জনে উৎসাহ লাভ করেন। একসময় রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর একান্ত খাদেম ও প্রসিদ্ধ সাহাবি আনাস (রা.) কুফায় আগমন করলে তিনি অল্প বয়সে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তৎকালীন কুফায় প্রথানুযায়ী ২০ বছরের আগে হাদিস বর্ণনার সুযোগ না থাকায় তিনি তাঁর কাছ থেকে কোনো হাদিস বর্ণনা করতে পারেননি। তবে তাঁকে দেখে বাল্য বয়সেই তাবেঈ হওয়ার সৌভাগ্য লাভ করেন। মাত্র ১৭ বছর বয়সে জ্ঞানার্জনে আত্মনিযোগ করেন। অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি ইলমে কালামে পূর্ণ পাণ্ডিত্য অর্জন করেন। অতঃপর পবিত্র কোরআন ও হাদিসের জ্ঞানার্জনে মনোনিবেশ করেন। ইমাম আবু হানিফা (রহ.) অসংখ্য গুণের অধিকারী ছিলেন। তিনি ছিলেন যুগশ্রেষ্ঠ আলেম, বিশিষ্ট আবেদ ও অতিশয় বুদ্ধিমান।

তাঁর সম্পর্কে মনীষীরা বিভিন্ন উক্তি করেছেন। যেমন—ইবনে মুবারক (রহ.) বলেন, আল্লাহ তাআলা যদি ইমাম আবু হানিফা ও সুফিয়ান সাওরি (রহ.) দ্বারা আমাকে সহায়তা না করতেন, তবে আমি অন্য মানুষের মতোই থাকতাম।

ইমাম শাফেয়ি (রহ.) বলেন, মানুষ ফিকহশাস্ত্রে ইমাম আবু হানিফা (রহ.)-এর পরিবার।

তিনি অন্যত্র বলেন, যে ব্যক্তি ফিকহশাস্ত্র শিখতে চায় সে যেন ইমাম আবু হানিফা (রহ.)-এর ছাত্রদের আঁকড়ে ধরে। ইবনে মুবারক (রহ.) বলেন, মানুষের মাঝে সবচেয়ে বড় ফিকহবিশারদ হলেন ইমাম আবু হানিফা (রহ.), আমি ফিকহশাস্ত্রে তাঁর মতো যোগ্য কাউকে দেখিনি।

ইবনে মুঈন বলেন, ইমাম আবু হানিফা (রহ.) হাদিসে সিকাহ (বিশ্বস্ত) ছিলেন।

সুলায়মান ইবনে আবু শায়ক বলেন, ইমাম আবু হানিফা (রহ.) একজন বুজুর্গ ও দাতা ছিলেন।

আবু নুয়াইম বলেন, তিনি মাসয়ালায় গভীর জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন। তিনি একাধিকবার প্রসিদ্ধ সাহাবি আনাস ইবনে মালেক (রা.)-এর সাক্ষাৎ লাভ করেন। সুতরাং তিনি তাবেঈ। তাঁর সময় চারজন সাহাবি জীবিত ছিলেন। যথা—আনাস ইবনে মালেক (রা.), আবদুল্লাহ ইবনে আবু আওফা (রা.), সাহল ইবনে সাদ (রা.) ও আবু তুফায়েল আমের ইবনে ওয়াসেলা (রা.)।

তিনি ফিকহশাস্ত্রের উদ্ভাবক। তিনি তাঁর ৪০ জন সুদক্ষ ছাত্রের সমন্বয়ে একটি ফিকহ সম্পাদনা বোর্ড গঠন করেন। এই বোর্ডের মাধ্যমে দীর্ঘ ২২ বছর কঠোর পরিশ্রম করে ফিকহশাস্ত্রকে একটি পূর্ণাঙ্গ শাস্ত্র হিসেবে রূপ দান করেন। বোর্ডের ৪০ জন সদস্য থেকে আবার ১০ জন সদস্য নিয়ে একটি বিশেষ বোর্ড গঠন করেন। ফিকহশাস্ত্র প্রচার ও প্রসারের ক্ষেত্রে এই বিশেষ বোর্ডের অবদান সবচেয়ে বেশি। যখন বোর্ডের সামনে কোনো একটি মাসয়ালা পেশ করা হতো, অতঃপর সবার ঐকমত্যের ভিত্তিতে তা লিপিবদ্ধ করা হতো। এভাবে ৯৩ হাজার মাসয়ালা কুতুবে হানাফিয়াতে লিপিবদ্ধ করা হয়। তিনি হিজরি ১৫০ সনে, মোতাবেক ৭৬৭ খ্রিস্টাব্দে খলিফা মনসুর কর্তৃক প্রয়োগকৃত বিষক্রিয়ার ফলে কারাগারে ইন্তেকাল করেন।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments