Friday, April 19, 2024
spot_img
Homeবিজ্ঞান ও প্রযুক্তিইশরাকের কোডেজি

ইশরাকের কোডেজি

কোডেজি কী

গ্রামারলি সফটওয়্যারের সঙ্গে কম্পিউটার ও ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা কমবেশি পরিচিত। টাইপ করার সময় ব্যাকরণগত কোনো ভুল হলে সেটা ঠিক করে দেয় এবং একই সঙ্গে ভুলের কারণও ব্যাখ্যা করে গ্রামারলি। ঠিক তেমনি কম্পিউটারের ভাষায় একজন প্রগ্রামার কোড লেখার সময়ও নানা ভুল করে। এসব ভুলের কারণে ঠিকমতো কাজ করে না প্রগ্রামটি।

এসব ক্ষেত্রে সাধারণত প্রগ্রামারের লেখা প্রগ্রামটি থেকে ভুল খুঁজে বের করে সেটি সংশোধন করতে হয়। কাজটি বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই জটিল এবং বেশ সময়সাপেক্ষ হয়ে থাকে। ঠিক এই সমস্যাটিই সমাধান করার চেষ্টা চালাচ্ছে কোডেজি। এটি ব্যবহার করে প্রগ্রামিংয়ে কোড লেখার সময় কোনো ভুল করলে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংশোধন করে দেবে এবং কেন সেটি ভুল তার ব্যাখ্যাও জানিয়ে দেবে।

কোডিং ও ইজি মিলিয়ে কোডেজি। এককথায় বলতে গেলে কোডিং সহজ করার উদ্দেশ্য নিয়ে যাত্রা শুরু করা এই সফটওয়্যারের আরো কিছু ফিচার রয়েছে। এটি ব্যবহার করে একটি প্রগ্রামিং ভাষায় লিখিত কোড অন্য প্রগ্রামিং ভাষায় কনভার্ট (রূপান্তর) করা, লিখিত কোনো প্রগ্রামকে অপটিমাইজ করার কাজও করা যাবে।

জন্ম ঢাকায়ই

যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী বাংলাদেশি তরুণ ইশরাক খানের জন্ম ঢাকার উত্তরায়। ২০১১ সালে পরিবারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান তিনি। সেখানকার হাই স্কুলে পড়াশোনার সময় প্রগ্রামিং ক্লাসে তাঁকে কোড লিখতে হতো। সেই সময় কোডিংয়ে নানা ভুলভ্রান্তি হওয়ার কারণে সেটি ঠিক করতে একদিকে যেমন তাঁর বেশ সময় লাগছিল, একই সঙ্গে ভুলের কারণে অনেক ক্ষেত্রে প্রগ্রামিংয়ে নিজের আগ্রহও কমে যাচ্ছিল। সেটি অনুধাবন করে তিনি চিন্তা করেন এমন কিছু তৈরি করা যায় কি না, যা কোডিংয়ের সময় ভুল ধরিয়ে দেবে। সেই ভাবনা থেকেই আসলে কোডেজির যাত্রা শুরু।

বর্তমানে ইশরাক যুক্তরাষ্ট্রের স্টানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে পড়াশোনা করছেন। সেই সঙ্গে চালিয়ে যাচ্ছেন কোডেজির কাজকর্মও। প্রথমে একা শুরু করলেও তাঁর প্রতিষ্ঠানে এখন ১০ জন কর্মী কাজ করছেন।

যেভাবে কাজ করে কোডেজি

কোডেজি বানাতে মেশিন লার্নিং প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। জাভা ল্যাঙ্গুয়েজ দিয়ে শুরু হওয়া কোডেজি বর্তমানে প্রায় ১৭টি প্রগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ সমর্থন করে। মেশিন লার্নিং প্রযুক্তিতে অনেক ডাটা ইনপুটের দরকার হয়। এটির আরেকটি সুবিধা হলো যত বেশি ব্যবহারকারী এটিকে যত বেশিবার ব্যবহার করবে সফটওয়্যারটির উন্নতি তত হতে থাকবে, বাড়বে সক্ষমতাও। সফটওয়্যারটি বর্তমানে বেটা (পরীক্ষামূলক) অবস্থায় আছে এবং কোডেজি ওয়েব প্ল্যাটফরম থেকে এটি ব্যবহার করা যাবে। তবে শিগগিরই এটির চূড়ান্ত সংস্করণও উন্মুক্ত করা হবে এবং প্রায় সব আইডির জন্য অ্যাড-অন হিসেবে ব্যবহার করা যাবে।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

বর্তমানে ১১০টির বেশি দেশ থেকে ১০ লাখের মতো ব্যবহারকারী কোডেজি ব্যবহার করছে বলে জানান ইশরাক। এটি বিনা মূল্যে ব্যবহার করা যায়। ইশরাক মনে করেন, শেখার জন্য টাকা নেওয়া উচিত নয়। তাঁর এই ভাবনা থেকেই কোডেজির কমিউনিটি সংস্করণটি প্রগ্রামারদের শেখার জন্য ফ্রি রাখতে চান তিনি। তবে প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে ব্যবহারের ক্ষেত্রে এটির এন্টারপ্রাইজ সংস্করণ ব্যবহারে সাবস্ক্রিপশন আকারে পেমেন্ট করতে হবে। বিগিনার, ইন্টারমিডিয়েট, প্রফেশনাল—সব ধরনের প্রগ্রামারের কথা মাথায় রেখেই কোডেজিকে একটি পূর্ণাঙ্গ সফটওয়্যার হিসেবে তৈরি করতে চান ইশরাক। এটি ব্যবহার করে যেমন একেবারে ছোটদের প্রগ্রামিং শেখানো যাবে আবার তেমনি ইন্টারমিডিয়েট ও প্রফেশনাল প্রগ্রামারদের কাজেও সহায়ক হবে।

ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা কেমন

কোডেজি ব্যবহার করে এমন প্রগ্রামারের বাস্তব অভিজ্ঞতা জানার চেষ্টা করা হয়েছে। দেশের একটি মাল্টিন্যাশনাল সফটওয়্যার ফার্মে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করা আশফ-উদ-দৌলা বাপ্পি জানান, কোডেজি ব্যবহার করে প্রগ্রামিংয়ের ক্ষেত্রে সময় সাশ্রয় হয় এবং এটি প্রগ্রামিং শেখার ক্ষেত্রে অত্যন্ত সহায়ক।

কথা হয় কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে স্নাতক পর্যায়ে অধ্যয়নরত বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গেও। তাঁদের অভিজ্ঞতাও আশফ-উদ-দৌলা বাপ্পির অনুরূপ।

বাংলাদেশ ও দেশীয় তরুণদের নিয়ে ইশরাকের ভাবনা

নিজের আগ্রহ থেকে শুরু করা কোডেজিকে বর্তমান অবস্থায় নিয়ে আসতে তাঁর পরিবার বিশেষ করে মা-বাবা যথেষ্ট সাহস ও সমর্থন জুগিয়েছেন বলে জানান তিনি।

কোডেজির মতোই কিছু উদ্যোগ নিয়ে দেশের নানা রকম সমস্যার সমাধানের জন্য কাজ করতে চান তিনি। ঢাকার যানজট সমস্যাটির সমাধানে কোনো কাজ করা যায় কি না, সেটি নিয়ে তাঁর পরিকল্পনা রয়েছে এবং সুযোগ পেলে সেটি নিয়ে কাজও করতে চান তিনি। দেশের তরুণ ও শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে তাঁর রয়েছে ভিন্ন ভাবনা। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের তরুণরা যথেষ্ট মেধাবী। তবে বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় সবাইকে জোর করেই ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার বানানোর চেষ্টা করা হয়। এটি না করে সবার প্রতিভার জায়গা খুঁজে বের করে সেটি নিয়ে কাজ করার সুযোগ দেওয়া উচিত। তাহলে সবার ভেতর থেকে সেরাটা পাওয়া যাবে। ’

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments