ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম আয়োজিত ‘বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নতুন চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এ মাসেই মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশে পৌঁছার আশঙ্কা ব্যক্ত করা হয়েছে। বিষয়টি যে গভীর উদ্বেগজনক, তা বলাই বাহুল্য। বস্তুত মধ্যমেয়াদি অর্থনৈতিক সংকটে রয়েছে বাংলাদেশ, যা আরও তীব্র হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এ কারণে মূল্যস্ফীতির চাপ সহসাই কমবে না বলে ধরে নেওয়া যায়। মূলত জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে সবকিছুর ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে; উপরন্তু মুদ্রাবাজারে লক্ষ করা যাচ্ছে অস্থিরতা। এ অবস্থায় পরিকল্পিত মুদ্রানীতি প্রণয়নের ওপর গুরুত্ব দেওয়া জরুরি। সরকার অবশ্য সরবরাহ বাড়ানোর মাধ্যমে মূল্যস্ফীতির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার চেষ্টা করছে।
কিন্তু বাস্তবতা হলো, দেশে এ বছর চালের উৎপাদন কম হয়েছে; বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় আমনের চাষ নিয়েও শঙ্কা রয়েছে। এ অবস্থায় অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় বিচক্ষণতার প্রমাণ দিতে হবে। এতে পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটবে বলে আশা করা যায়।
চলতি অর্থবছরের শুরুতে মূল্যস্ফীতির হার ৫ দশমিক ৩ শতাংশের মধ্যে রাখার ঘোষণা দেওয়া হলেও নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে তা ধরে রাখা যায়নি। সরকারের তরফ থেকে এর পক্ষে যুক্তি দিতে গিয়ে বলা হচ্ছে, বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশেও মূল্যস্ফীতি হচ্ছে; বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় তা সমন্বয় করতে দেশে এর দাম বাড়ানো হয়েছে। এর ফলে অনিবার্যভাবেই পণ্য ও সেবা খাতের ব্যয় বেড়েছে, যা মূল্যস্ফীতির হারে উল্লম্ফন ঘটিয়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, মূল্যস্ফীতি ইতোমধ্যে জনজীবনে বড় ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করেছে।
করোনা মহামারির কারণে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড প্রায় স্থবির হয়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষের আয়ের ওপর এর ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। অনেকে কাজ হারিয়েছেন, অনেকের ব্যবসা বন্ধ হয়েছে। এতে আয় কমেছে দেশের একটি বড় অংশের মানুষের। এ অবস্থায় অর্থনীতির পুনরুদ্ধার কার্যক্রম জোরদার করা প্রয়োজন। পাশাপাশি উদ্যোক্তাদের উৎপাদিত পণ্য বিপণনের সুযোগ ও বিনিয়োগ থেকে মুনাফা আসার বিষয়টিও নিশ্চিত করতে হবে।
মূল্যস্ফীতির চাপে দেশের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মানুষ বড় ধরনের ভোগান্তিতে পড়েছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। এ প্রেক্ষাপটে যে কোনো উপায়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখার প্রয়াস চালাতে হবে। তা না হলে মুদ্রার বিনিময় হারসহ আমদানি ও রপ্তানি খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে, যার পরিণাম শুভ হবে না। এ কথাও সত্য যে, বর্তমানে মূল্যস্ফীতি সারা বিশ্বেই উদ্বেগের কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে। আমেরিকায় ৪৯ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি হয়েছে। অন্যদিকে ১৮ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতির শিকার হয়েছে কানাডা। এছাড়া জার্মানির মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা ২৯ বছরের রেকর্ড ছাড়িয়েছে।
দেশে মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে, সরকারের তরফ থেকে এমনটি বলার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে বাস্তবতার সঙ্গে সরকারের বক্তব্যের যথেষ্ট ফারাক রয়েছে। এ অবস্থায় প্রকৃত অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। দেশের অর্থনীতি ও সামাজিক জীবনে যাতে বিপর্যয় নেমে না আসে, সেজন্য মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকার আরও মনোযোগী হবে, এটাই প্রত্যাশা।