Friday, April 19, 2024
spot_img
Homeকমিউনিটি সংবাদ USAআমেরিকা পশ্চিমাঞ্চলের প্রান কলোরাডো শুকিয়ে যাচ্ছে

আমেরিকা পশ্চিমাঞ্চলের প্রান কলোরাডো শুকিয়ে যাচ্ছে

আমেরিকার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রাণ কলোরাডো নদী ডেনভার থেকে লস এঞ্জেলস পর্যন্ত অন্তত ৪ কোটি মানুষের জন্য পানি সরবরাহ করে থাকে। নয়নাভিরাম গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন গিরিখাতের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ২ হাজার ৩৩৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সুবিশাল এই নদীতে লেক মেড এবং লেক পাওয়েল বাঁধ ৪ কোটিরও বেশি লোকের জন্য বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে থাকে। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তন এবং দুর্বল নীতিমালার কারণে বিপজ্জনকভাবে শুকিয়ে যাচ্ছে কলোরাডো।

আমেরিকার সব থেকে বড় জলাধার লেক মেডে মোট ধারণ ক্ষমতার মাত্র ৩৪ শতাংশ পানি রয়েছে। বাদ নেই লেক পাওয়েলও। সেখানেও আর মাত্র ৩২ শতাংশ পানি রয়েছে। দুই জলাধারের পানির স্তর সমানে কমছে। এর ফলে হুভার বাঁধ এবং গ্লেন ক্যানিয়ন থেকে ভবিষ্যতে পানি কম ছাড়া হবে। যার সরাসরি প্রভাব পড়বে এই বাঁধগুলোর নিম্নবর্তী অঞ্চলে।

ইতিমধ্যে মার্কিন সরকার ১৬ আগস্ট আনুষ্ঠানিকভাবে নদীটির অববাহিকায় বিভিন্ন অঞ্চলে পানির ব্যবহার সীমিত ঘোষণা করেছে। যার ফলে অ্যারিজোনা, নেভাডা, এবং মেক্সিকোতে পানিসঙ্কট দেখা দেবে আগামী দিনে। এবার থেকে অ্যারিজোনা ১৮ শতাংশ, নেভাডা ৭ শতাংশ, এবং মেক্সিকো ৫ শতাংশ কম পানি পাবে। সব থেকে বেশি প্রভাবিত হবে কলোরাডো নদীর গতিপথের নীচের দিকে থাকা দেশগুলো।

গত বছর মার্কিন কর্মকর্তারা প্রথমবারের মতো নদীতে পানির ঘাটতি ঘোষণা করেন। পাশাপাশি, বাইডেন প্রশাসনের নির্ধারিত পূর্ববর্তী ড্রট-কমার্জেন্সি পরিকল্পনার নীতি অনুযায়ী আগামী বছরের মধ্যে অববাহিকার মধ্যে থাকা ৭টি রাজ্যকে ৪০ লাখ একর-ফুট (৪.৯ বিলিয়ন ঘন মিটার) পর্যন্ত নদীর পানির উপর নির্ভরতা হ্রাস করতে হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এটি নদীর বার্ষিক প্রবাহের প্রায় এক তৃতীয়াংশ বা প্রায় সমগ্র ক্যালিফোর্নিয়ার বার্ষিক পানি ব্যবহারের সমতুল্য।

১৯০০ সাল থেকে কলোরাডোর পানির স্তর প্রায় ২০ শতাংশ কমে গিয়েছে এবং এখন অববাহিকাটির টিকে থাকার জন্য যা প্রয়োজনীয় স্তরের চেয়েও অনেক নীচে অবস্থান করছে। অববাহিকায় থাকা অঞ্চলগুলি তাদের পানির ব্যবহারে সামঞ্জস্য করতে অক্ষম হলে, সঙ্কট আরও খারাপ হবে। কলোরাডো নদীর ৮০ শতাংশ পানি কৃষিতে ব্যবহৃত হয়। আমেরিকান পশ্চিমে তুষারের চাকগুলি সঙ্কুচিত হওয়ার সাথে সাথে ভবিষ্যতে খরা দীর্ঘস্থায়ী হবে, আরও পানি বাষ্পীভূত হবে (অর্থাৎ নদীর স্তর আরও নেমে যাবে) এবং কৃষিজমি পানিশূন্য হয়ে যাবে।

কলোরাডো শুকিয়ে যাওয়ার মূল কারণ হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তন। গত ২৩ বছর ধরে এই অঞ্চলে মহাখরা চলছে। বৃষ্টি কম হচ্ছে। পাশাপাশি, পাল্লা দিয়ে বাড়ছে তাপমাত্রা। যার ফলে নদীর পানি দ্রুত শুকিয়ে যাচ্ছে। বিজ্ঞানীদের তরফে দাবি করা হচ্ছে যে, এই পরিস্থিতি দিন দিন আরও খারাপ হবে। শুধু কলোরাডোরই পানির পরিমাণ কমছে তা নয়, কমছে এঅঞ্চলের ভূগর্ভস্থ পানির স্তরও। প্রতি ১ ডিগ্রি তাপমাত্রা বাড়লে কলোরাডোতে ৯.৩ শতাংশ জলপ্রবাহ কমছে।

জলবায়ু পরিবর্তন যে মানবজীবনকে ঠিক কতটা প্রভাবিত করতে পারে, তার মাশুল গুণতে শুরু করেছে বিশ্ববাসী। ক্রমশ আরো পানিশূণ্যতা দেখা দেবে পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চলেও। এবং এত বছর ধরে ঘটানো যথেচ্ছ দূষণ, অতিরিক্ত মাত্রায় গ্রিন হাউজ গ্যাস নির্গমনের প্রভাব যে কতটা ভয়ঙ্কর, তা আরও স্পষ্টতর হয়ে উঠবে। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের হার দ্রুত হ্রাস করতে না পারলে নদীটির পানি স্বল্পতা মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছাবে, যা কয়েক কোটি মানুষকে ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে ফেলতে পারে। সূত্র: দ্য ইকোনোমিস্ট।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments