Thursday, March 28, 2024
spot_img
Homeজাতীয়আইভী বললেন গডফাদার শামীম ওসমানের প্রার্থী তৈমূর

আইভী বললেন গডফাদার শামীম ওসমানের প্রার্থী তৈমূর

আগামী ১৬ই জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন। আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী তৈমূর আলম খন্দকারের সঙ্গে লড়ছেন ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। নির্বাচনে আইভীকে বিজয়ী করতে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতারা ঝাঁকে ঝাঁকে নারায়ণগঞ্জ আসছেন।

নৌকার ভোট চেয়ে ২৭টি ওয়ার্ডে বিরামহীন প্রচারণা চালাচ্ছেন তারা। সরগরম জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়। প্রার্থী (আইভী) নিজেও ছুটছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। যদিও নির্বাচন ঘিরে নানা টানাপড়েন চলছে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরে। তবে তা ছিল পরোক্ষ। বিশেষ করে সিটি নির্বাচনে শামীম ওসমানের নীরবতা নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন চূড়ান্ত হওয়ার পর থেকে তিনি মুখে কুলুপ এঁটেছেন। কোনো বক্তব্য বা মন্তব্য করছেন না নির্বাচন নিয়ে। নৌকার বিপক্ষেও তাকে কথা বলতে দেখা যায়নি। ফলে তাকে নিয়ে আওয়ামী লীগ শিবিরে নানা আলোচনা ঢালপালা ছড়ায়। শুধু তাই নয়, আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ ও মেয়র প্রার্থী আইভী প্রচারণায় নেমে গণমাধ্যমের প্রশ্নের সম্মুখিত হন শামীম ওসমানকে নিয়ে। শামীম ওসমান মাঠে নামছেন না কেন? তিনি কী আপনার সঙ্গে আছেন? তার বলয়ের নেতাকর্মীদের নির্বাচনী মাঠে দেখা যাচ্ছে না কেন? এমন নানা প্রশ্ন। একপর্যায়ে ২৮শে ডিসেম্বর দুপুরে প্রতীক বরাদ্দ পেয়ে মুখ খোলেন আইভী। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, শামীম ওসমান আমার বড় ভাই। উনি একজন এমপি। এমপি হওয়ার কারণে উনি প্রচারণায় আসতে পারবেন না। যেহেতু উনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের কর্মী, শেখ হাসিনার কর্মী সেহেতু উনি নৌকার বাইরে যাবেন না। উনিও কিন্তু নৌকা প্রতীক নিয়েই নির্বাচন করেন। মান-অভিমান, দলের মধ্যে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা থাকতেই পারে। তার এই বক্তব্যে কিছুটা বরফ গলে। কিন্তু সেই বরফ যে নীরবে আবার জমাট বাঁধছিল তা টের পাওয়া যায়নি গত ১১ দিনে। ভোটের মাত্র ৭ দিন আগে বোমা ফাটালেন আইভী। গতকাল সকালে বন্দরের ২৪নং ওয়ার্ডের দেউলি চৌরাপাড়া এলাকায় নির্বাচনী প্রচারে নেমে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইভী বলেন, তৈমূর আলম গডফাদার শামীম ওসমানের প্রার্থী। উনি বিএনপির প্রার্থী নন, স্বতন্ত্রও নন। উনি শামীম ওসমান এবং সেলিম ওসমানের প্রার্থী।

আইভী আরও বলেন, তৈমূর আলম শুক্রবার বন্দরে সেলিম ওসমানের জাতীয় পার্টির (জাপা) ৪ জন চেয়ারম্যানকে নিয়ে প্রচারণা চালিয়েছেন। এতেই প্রমাণিত হয়েছে তৈমূর আলম গডফাদার শামীম ওসমানের ক্যান্ডিডেট। ওই সময় সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে আইভী বলেন, আওয়ামী লীগে দ্বন্দ্ব স্পষ্ট হল কি না জানি না। সব নেতাকর্মী আমার সঙ্গে আছে। প্রতিটা ওয়ার্ড লেভেল পর্যন্ত নেতাকর্মীরা আমার পাশে আছে। একমাত্র তিনি (শামীম ওসমান) বাইরে গিয়ে তার লোকজনকে তৈমূর সাহেবের সঙ্গে দিচ্ছেন।

সাবেক এই মেয়র বলেন, তার (তৈমূর আলম) চারপাশে বিএনপির লোকজন আছে। শুক্রবার জাতীয় পার্টির (জাপা) লোকজনও তার সঙ্গে যোগ দিয়েছে। নারায়ণগঞ্জের কথিত গডফাদার শামীম ওসমানের লোকজনরাও তার পাশে আছে। যেহেতু নির্বাচনটা দলীয় প্রতীকে হচ্ছে তাই তিনি (তৈমূর আলম) বিএনপির প্রার্থী হলে ধানের শীষ প্রতীক পেতেন। তিনি যেহেতু ধানের শীষ পাননি, সেহেতু তিনি বিএনপির প্রার্থী নন। তিনি সেলিম ওসমান, শামীম ওসমানের প্রার্থী।

আওয়ামী লীগের এই মেয়র প্রার্থী আরও বলেন, হাইকমান্ড শুক্রবার সব দেখেছেন। এখানে অনুষ্ঠান হয়েছে, পত্রিকায়ও খবর এসেছে। তারা দেখেছেন এবং এ বিষয়ে দেখবেন। আমি নির্বাচন করি জনতার শক্তিতে। জনতাই আমার শক্তি, দল আমার মনোবল। এসব মিলিয়ে আমি নির্বাচন করি। আমি কোনো গডফাদারের দিকে তাকিয়ে নির্বাচন করি না। আমি বলেছি শুক্রবার জাপার চেয়ারম্যানরা প্রকাশ্যে নেমেছেন। এতেই প্রমাণ হয় কারা তার (তৈমূর) সঙ্গে আছেন, কারা তাকে সাপোর্ট দিচ্ছেন।

এদিকে নির্বাচনের মাত্র ৭ দিন আগে আইভীর এমন বক্তব্যে তোলপাড় চলছে আওয়ামী লীগের স্থানীয় রাজনীতিতে। চরম মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে শামীম ওসমান শিবিরে। ফলে আওয়ামী লীগের পুরোনা বিরোধ আবারো প্রকাশ্যে চলে আসলো। এই বিরোধ ভোটের মাঠে চরমভাবে প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নৈতাকর্মী, সমর্থক ছাড়াও নগরবাসী।

উল্লেখ্য, নির্বাচনে তৈমূর আলমকে যখন তার দল বিএনপি একা করে দিতে চেয়েছিল তখন শুক্রবার ঘটেছে এক অভূতপূর্ব ঘটনা। শুক্রবার সকালে তৈমূর আলম বন্দরে ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে গণসংযোগ শুরু করেন। ওই সময় তার সঙ্গে যোগ দেন আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য বর্তমানে নাগরিক ঐক্য’র কেন্দ্রীয় নেতা এসএম আকরাম। পরে আরও যোগ দেন জাতীয় পার্টির জেলা ও মহানগরের নেতৃবৃন্দ। ফলে তৈমূরের গণসংযোগটি একটি বিশাল শোডাউনে পরিণত হয়। এ ঘটনাকে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী এডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকারের একের পর এক ম্যাজিক হিসেবেই দেখছেন স্থানীয়রা।
তৈমূর আলমের গণসংযোগে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য এসএম আকরাম, বন্দর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আতাউর রহমান মুকুল, জেলা জাতীয় পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন, ও এহসান উদ্দিন আহমেদ, মাকসুদ হোসেন ও মহানগর জাতীয় পার্টির নেতা কামাল হোসেন।

বিএনপি নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এটিএম কামাল, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক কাজী নজরুল ইসলাম টিটু, বন্দর থানা বিএনপির সভাপতি নুর উদ্দিন, সদর থানা ছাত্রদলের সভাপতি কাজী নাহিদুল ইসলাম সাদ্দামসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।
ওদিকে শুক্রবারের এই ঘটনা আওয়ামী লীগ তথা নৌকার প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভীর শিবিরে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। বিষয়টিকে হালকাভাবে দেখতে নারাজ তারা। রীতিমত ভোটের মাঠে এ ঘটনাটি স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী এডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকারের একের পর এক ‘চমক’ হিসেবে চাউর হয় নগরজুড়ে। আর তখনই আইভীর কণ্ঠে আলোচনায় উঠে আসে শামীম ওসমান। তবে শেষ পর্যন্ত আইভীর তীর্যক বক্তব্যের রেশ কতদূর যায় তা দেখার অপেক্ষায় নগরবাসী।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments