দেশ থেকে অর্থ পাচার রোধে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে; কিন্তু এর কোনোটিই কার্যকর হয়নি। অবশেষে পাচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে আনার জন্য বাজেটে পাচারকারীদের দেওয়া হয়েছে প্রণোদনা।
কিন্তু এর কার্যকারিতা ও নৈতিক দিক নিয়ে দেখা দিয়েছে প্রশ্ন। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সরকারের প্রণোদনার সিদ্ধান্তে অর্থ ফেরত আসা তো দূরের কথা, পাচারকারীরা হবে আরও উৎসাহিত।
উল্লেখ্য, অতীতে নির্দিষ্ট অঙ্কের কর পরিশোধ করে কালোটাকা বা অপ্রদর্শিত আয়কে বৈধ করার সুযোগ দেওয়া হলেও তাতে আশানুরূপ সাড়া মেলেনি। প্রণোদনা দিয়ে পাচারের অর্থ ফেরত আনার ক্ষেত্রেও ঘটবে একই ঘটনা।
কারণ কেউ অর্থ পাচারকারী হিসাবে চিহ্নিত হতে চাইবে না। সরকারের এ সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে নৈতিকতার প্রশ্নটি আরও বড়। অর্থ পাচার একটি বড় অপরাধ। মূলত ঘুস-দুর্নীতির টাকা দেশ থেকে পাচার করা হয়।
এই অপরাধীদের নির্দিষ্ট অঙ্কের করের বিনিময়ে বৈধতা দেওয়া তাদের দায়মুক্তি দেওয়ার শামিল। এটি বৈষম্যমূলকও বটে। কারণ একজন পাচারকারী মাত্র ৭ শতাংশ কর দিয়েই পাচারের অর্থের বৈধতা পাবে। অথচ একজন নিয়মিত করদাতাকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত কর দিতে হয়। কাজেই অর্থ পাচার রোধে এটি কোনো কার্যকর পদক্ষেপ হতে পারে না।
দেশ থেকে অর্থ পাচার হচ্ছে নানা পন্থায়, নানা কৌশলে এবং দিন দিন তা বাড়ছে। গত বছরের ডিসেম্বরে প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থা গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৬ বছরে দেশ থেকে পাচার হয়েছে ৪ হাজার ৯৪৫ কোটি ডলার, যা স্থানীয় মুদ্রায় দাঁড়ায় সাড়ে ৪ লাখ কোটি টাকায়। গড়ে প্রতিবছর পাচার হচ্ছে প্রায় ৭৫ হাজার কোটি টাকা, যা তিনটি পদ্মা সেতু নির্মাণব্যয়ের সমান।
কাজেই অর্থ পাচার বন্ধ করতে হবে অবশ্যই। তবে তা অকার্যকর ও অনৈতিক পন্থায় নয়। দেশে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন রয়েছে। এ আইন অনুযায়ী পাচার করা সব অর্থ বাজেয়াপ্ত করতে হবে। যে পরিমাণ অর্থ পাচার করা হয়েছে, তার দ্বিগুণ জরিমানা করতে হবে।
এছাড়া ৪ থেকে ১২ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডের বিধানও রয়েছে আইনে। তবে তার আগে পাচারের অর্থ কোথায় যায়, তা চিহ্নিত করতে হবে এবং সেসব দেশের সঙ্গে চুক্তি করতে হবে। একইসঙ্গে দেশ থেকে অর্থ পাচারের ছিদ্রগুলো শনাক্ত করে তা বন্ধ করতে হবে।
অর্থ পাচারের একটি বড় কারণ হলো দুর্নীতি। দুর্নীতি বৃদ্ধি পাওয়ায় অর্থ পাচারের হারও দিন দিন বাড়ছে। কাজেই দুর্নীতি রোধেও নিতে হবে কার্যকর পদক্ষেপ।