বর্তমানে প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে ডিজিটাল পদ্ধতিতে প্রতারণা করে প্রতারকরা। অথচ প্রতারণা সর্বাবস্থায় নিষিদ্ধ। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে প্রতারণা করে সে আমার দলভুক্ত নয়। ’ (মুসলিম, হাদিস : ১০২)
নিম্নে অনলাইনকেন্দ্রিক কিছু প্রতারণা ও এগুলোর ভয়াবহতা তুলে ধরা হলো—
ফ্রিল্যান্সিংয়ের নামে প্রতারণা : ফ্রিল্যান্সিং বর্তমানে আকর্ষণীয় একটি পেশা।
তাই প্রতারকরা অনেক ক্ষেত্রে ফ্রিল্যান্সিংয়ের নামে ফাঁদ পাতে। বেকার ও উঠতি বয়সী ছেলেমেয়েদের আকৃষ্ট করতে অনলাইনে উপার্জনের বিভিন্ন চটকদার বিজ্ঞাপন দেয়। বিভিন্ন ইউটিউবার ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সেলিব্রিটিদের দিয়ে প্রচারণা চালায়। ‘কোনো কাজে দক্ষতা অর্জন না করেই অনলাইনে উপার্জনের সুযোগ’—এমন বিজ্ঞাপন দেখে অনেকেই তাদের ফাঁদে পা দেয়। তাদের অর্থ দিয়ে প্রতারিত হয়। প্রতারকচক্র ভুয়া ওয়েবসাইট খুলে মানুষের টাকা নিয়ে উধাও হয়ে যায়। এভাবে ফ্রিল্যান্সিংয়ের নামে মানুষকে ধোঁকা দিয়ে তাদের সম্পদ আত্মসাৎ করা হারাম। কিয়ামতের দিন উপার্জনের উৎস সম্পর্কেও হিসাব দিতে হবে। (তিরমিজি, হাদিস : ২৪১৭)
পিটিসি সাইটে প্রতারণা : পিটিসির মূলরূপ হলো, পেইড টু ক্লিক। এর মানে হলো ক্লিক করার মাধ্যমে ইনকাম করা। এগুলোতে কাজ করতে তেমন কোনো দক্ষতার প্রয়োজন হয় না, তাই অনেকেই এগুলোতে ঝুঁকে পড়ে। অথচ বেশির পিটিসি সাইটই খোলা হয়, রেজিট্রেশনের নামে মানুষ থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা তুলে আত্মসাৎ করার জন্য।
মহান আল্লাহ আত্মসাৎকারীদের পছন্দ করেন না। আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘যে ব্যক্তি মিথ্যা কসমের মাধমে কোনো সম্পদ আত্মসাৎ করবে আল্লাহর সঙ্গে তার সাক্ষাৎ ঘটবে এমন অবস্থায় যে তিনি তার প্রতি রেগে থাকবেন। ’ (মুসলিম, হাদিস : ২৫৩)
ক্রিপ্টোকারেন্সি : ক্রিপ্টোকারেন্সি এক ধরনের ভার্চুয়াল মুদ্রা। ইন্টারনেটের মাধ্যমে লেনদেন হওয়া এ ধরনের মুদ্রার সংখ্যা এখন আট হাজারের বেশি। মানুষ মনে করে, ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে খুব সহজে কোটি কোটি টাকা আয় করা যায়। টাকা দ্বিগুণ করা যায়। মানুষের এই অজ্ঞতা কাজে লাগিয়েই এক শ্রেণির প্রতারক মানুষকে ঠকিয়ে যাচ্ছে, বিভিন্ন সাইট খুলে মানুষ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। ২০১৭ সালে একটি কম্পানি ক্রিপ্টোকারেন্সিতে বিনিয়োগ করে রাতারাতি বড়লোক হওয়ার স্বপ্ন দেখিয়ে ৩০ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে।
ইকমার্স প্রতারণা : আজকাল অনেকেই অনলাইনে কেনাকাটা করতে পছন্দ করে। যেকোনো পণ্য সহজে পেতে অনলাইন একটি সহজ মাধ্যম। তবে এখানে পণ্য কেনাবেচা করার ক্ষেত্রে অনেকেই প্রতারণার শিকার হয়। কারণ কম মূল্যে পণ্য দেওয়ার প্রলোভন দিয়ে অগ্রিম টাকা নিয়ে ব্লক করে দেওয়া হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘জেনে রাখো, যে ব্যক্তি ধোঁকাবাজি করে, আমার সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই। ’ (মুসলিম, হাদিস : ১৮৫)
যারা এ ধরনের প্রতারণার সাইটগুলো রেফার করে, মানুষকে প্রতারিত করতে এগুলোর মিথ্যা রিভিউ দেয়, তাদের পাপের মাত্রা আরো বেশি। যত মানুষ তাদের রিভিউ দেখে অথবা রেফারের কারণে প্রতারিত হবে এবং অন্যদের প্রতারিত করবে, সবার সমপরিমাণ প্রতারণার গুনাহ রেফারকারী/মিথ্যা রিভিউদানকারী ব্যক্তির হবে।
(আবু দাউদ, হাদিস : ৪৬০৯)