Friday, March 29, 2024
spot_img
Homeনির্বাচিত কলামঅবৈধ ইটভাটা কার্যক্রম

অবৈধ ইটভাটা কার্যক্রম

গতকাল নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার একটি ইটভাটার ছবি ছাপা হয়েছে। এতে দেখা যাচ্ছে, ইটভাটার চিমনি দিয়ে বিষাক্ত কালো ধোঁয়া বেরোচ্ছে।

এতে দূষিত হচ্ছে বিস্তীর্ণ এলাকার পরিবেশ। বস্তুত দেশে ইট তৈরির পুরোনো পদ্ধতি চালু থাকায় বায়ুদূষণ ঘটছে মারাত্মকভাবে। নষ্ট হচ্ছে ফসলি জমি।

ধ্বংস হচ্ছে গাছপালা। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয়, এ পদ্ধতিতে ইট তৈরির কারণে মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে জনস্বাস্থ্যের। তারপরও বন্ধ হয়নি পরিবেশ বিধ্বংসী ইটভাটার কার্যক্রম।

এক হিসাবে জানা যায়, সারা দেশে প্রায় ৮ হাজার ইটভাটার কার্যক্রম চলছে। এর মধ্যে ৩ হাজার ২০০টিই অবৈধ। উল্লেখ্য, ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩ (সংশোধিত) ২০১৮ অনুযায়ী আবাসিক, সংরক্ষিত ও বাণিজ্যিক এলাকা, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা বা উপজেলা সদর ও কৃষিজমিতে ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না। অথচ এ আইন লঙ্ঘন করেই

চলছে অবৈধ ইটভাটাগুলোর কার্যক্রম। এগুলোর কার্যক্রম বন্ধ করা জরুরি হয়ে পড়েছে।

বস্তুত দেশের সব ইটভাটার কার্যক্রমই পর্যায়ক্রমে বন্ধ করে ভবন নির্মাণে ইটের বিকল্প পরিবেশবান্ধব ব্লক ব্যবহারে যেতে হবে সংশ্লিষ্টদের। দেশে এ প্রক্রিয়া শুরুও হয়েছে।

বেসরকারি পর্যায়ে ব্লক তৈরির কমপক্ষে ৮০টি কারখানা গড়ে উঠেছে। তবে এ ব্যাপারে সরকারের তেমন কোনো উদ্যোগ নেই। অথচ ২০২৫ সালের মধ্যে সব ধরনের সরকারি নির্মাণে ব্লক ব্যবহারের নির্দেশ রয়েছে।

এ হিসাবে চলতি বছরের জুনের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রার ৩০ শতাংশ পূরণের কথা থাকলেও এ ক্ষেত্রে অগ্রগতি সামান্য। অথচ ব্লকের প্রসার ঘটলে কম খরচে মানসম্মত নির্মাণকাজ করা সম্ভব হবে।

বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গবেষণায় দেখা গেছে, পৃথিবীর শহরগুলোর মধ্যে বায়ুদূষণে ঢাকার অবস্থান একেবারে শীর্ষপর্যায়ে। শুধু ঢাকা শহর নয়, সুইজারল্যান্ডভিত্তিক দূষণ প্রযুক্তি সংস্থা আইকিউএয়ারের ২০২১ সালের তালিকায় টানা চতুর্থবারের মতো পৃথিবীর সবচেয়ে দূষিত দেশের তকমা পেয়েছে বাংলাদেশ। আর এ দূষণের একটি অন্যতম কারণ ইটভাটা। জানা যায়, ইটভাটায় জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার হয় আমদানিকৃত নিুমানের কয়লা। এ কয়লা পোড়ানোর ফলে প্রচুর পরিমাণ ছাই তৈরি হয়।

অন্যদিকে ইটভাটা থেকে বায়ুমণ্ডলে দূষিত উপাদানও যোগ হচ্ছে। এসব দূষিত উপাদানের মধ্যে রয়েছে পার্টিকুলেট ম্যাটার, কার্বন মনোঅক্সাইড, সালফার অক্সাইড ও কার্বন ডাইঅক্সাইড। গবেষণায় দেখা গেছে, পার্টিকুলেট ম্যাটার মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।

এটি মানবদেহে শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে প্রবেশ করলে রেসপিরেটরি সিস্টেম বা শ্বাসপ্রণালী ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়।

এ কারণে ইটভাটার আশপাশে বসবাসরত মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যগত সমস্যা দেখা যায় বেশি। এছাড়া ইটভাটা থেকে নির্গত ছাই পার্শ্ববর্তী নদী বা জলাশয়ে নিষ্কাশিত হয়। ওই বর্জ্য পানিতে মিশে বিভিন্ন ধরনের বিষাক্ত উপাদান যেমন-লেড, ক্যাডমিয়াম, জিংক ও ক্রোমিয়াম জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণীর মাধ্যমে খাদ্যশৃঙ্খলের দ্বারা মানুষের শরীরে প্রবেশ করছে। ফলে মানুষ বিভিন্ন ধরনের জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

কৃষিজমির ওপরও ইটভাটার ক্ষতিকর প্রভাব রয়েছে। জমির উর্বরতা শক্তি কমছে। কাজেই সব দিকে বিবেচনা করে ইটের পরিবর্তে ব্লকের ব্যবহারকে উৎসাহিত করতে সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর ইটভাটাগুলোর কার্যক্রম বন্ধ করে দিতে হবে দ্রুত।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments