Saturday, April 20, 2024
spot_img
Homeজাতীয়‘অন্য দেশে আশ্রিত হয়ে আর কত দিন?’

‘অন্য দেশে আশ্রিত হয়ে আর কত দিন?’

অন্য দেশে আশ্রিত হয়ে আর কত দিন থাকব? আর বিলম্ব নয়, আমারা আমাদের বাপ-দাদার ভিটেমাটি মিয়ানমারে ফিরতে চাই। আমাদের নাগরিক অধিকার ফিরিয়ে দিন, সম্মানজনকভাবে আমাদের ফিরিয়ে নিন।

বৃহস্পতিবার সকালে কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন ও সমাবেশে এসব কথা বলেছেন রোহিঙ্গা কমিউনিটির নেতারা।

নিজ দেশ মিয়ানমারে ২০১৭ সালের এই দিনে (২৫ আগস্ট) রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন, গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণসহ নিপীড়নে প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসার পঞ্চম বর্ষ অতিক্রমের দিনে গণহত্যার বিচার ও সম্মানজনকভাবে ঘরে ফেরার দাবিতে এ মানববন্ধন ও সমাবেশ এবং মিছিল করেন রোহিঙ্গারা। পরে মিছিল করেন তারা।

১৩ নম্বর ক্যাম্পের তাজনিমার খোলা খেলার মাঠে আয়োজিত সমাবেশে বি ব্লকের হেডমাঝি মো. ইব্রাহিম, হেড মাঝি মুহাম্মদ আলী ও রোহিঙ্গা নেতা মোজাম্মেল হকসহ অন্যরা বক্তব্য রাখেন।

এ সময় রোহিঙ্গা নেতা মোজ্জামেল হক বলেন, বাংলাদেশ আমাদের আশ্রয় দিয়েছে এজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতার শেষ নাই। আমরা বাংলাদেশে মিয়ানমারের চেয়ে শতগুণ ভালো আছি এ জন্য আল্লাহর কাছে শুকরিয়া। তবে এভাবে অন্যদেশের আশ্রয়ে আর কত? আর  বিলম্ব নয়, আমরা এবার রোহিঙ্গা পরিচয়ে আমাদের বাপ-দাদার ভিটেমাটি মিয়ানমারে ফিরে যেতে চাই।

রোহিঙ্গা নেতারা বলেন, আমরা বিশ্ববাসীর কাছে দাবি জানাচ্ছি আমাদের ২০১৭ সালের গণহত্যার বিচার করুন, মা-বোনদের ধর্ষণের বিচার করুন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিচার করুন। আর আমাদের দেশে, ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা করুন। আমাদের সহায় সম্বল ফিরিয়ে দিন। 

সমাবেশ থেকে আন্তর্জাতিক আদালতে গণহত্যার বিচার, নিরাপদ প্রত্যাবাসনের দাবিসহ নানা দাবিতে সোচ্চার ছিলেন সমাবেশে অংশ নেওয়া রোহিঙ্গারা।

সমাবেশে মোনাজাতকালে রোহিঙ্গাদের অনেকেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। মানববন্ধন, সমাবেশ শেষে পৃথকভাবে মিছিল করেন রোহিঙ্গারা। এ সময় তাদের- গো ব্যাক হোম ও উই ওয়ান্ট জাস্টিস বলে স্লোগানে দিতে দেখা যায়।

একইভাবে চরম বর্বরতায় গণহত্যার বিচার দাবি ও পূর্ণ নাগরিক অধিকার দিয়ে মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন দাবিতে উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের তাজনিমারখোলার ১৩নং রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও সুলিমুল্লাহ কাটা এলাকায় ১৬নং ক্যাম্পের মতো কুতুপালং লম্বাশিয়া, বালুখালী পানবাজার ক্যাম্পসহ অন্তত ২৫টি ক্যাম্পে শান্তিপূর্ণ এ মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছেন রোহিঙ্গারা। 

এসব সমাবেশ ও মিছিলে বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা শিশুরাও অংশগ্রহণ করে। শিশুদের হাতে আমরা রোহিঙ্গা, আমাদের দেশ মিয়ানমার। এসব লেখা সম্বলিত প্ল্যাকার্ড শোভা পায়।

রোহিঙ্গা নেতা মাস্টার কামাল হোসেন বলেন, ৫ বছর হয়ে গেলেও তাদের ফিরিয়ে নেয়ার ব্যাপারে কোনো আগ্রহ দেখায়নি মিয়ানমার। শিগগিরই তারা নিজ দেশে ফিরতে চাই। সেজন্য মিয়ানমারের প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপ প্রয়োগ করার দাবি জানান তিনি।

রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তায় দায়িত্বরত ৮ এপিবিএনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. কামরান হোসেন বলেন, ৮ এপিবিএনের আওতাধীন ১৩ ও ১৬ নম্বর ক্যাম্পসহ আশপাশের ২০টি ক্যাম্পের পৃথক স্থানে রোহিঙ্গারা স্বদেশে ফেরার আকুতি জানিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে।

সকাল ৯টা হতে নির্দিষ্ট জায়গায় জড়ো হতে থাকে রোহিঙ্গারা। সোয়া ১০টার দিকে তারা ব্যানার ও ফেস্টুন নিয়ে মানববন্ধনে দাঁড়িয়ে যান। তেমন কোনো প্রচারণা না থাকলেও ধীরে ধীরে রোহিঙ্গা সমাগম বেড়ে সমাবেশে পরিণত হয় মানববন্ধন।

সেখানে বক্তব্য দিতে গিয়ে পুরনো স্মৃতি উল্লেখ কালে রোহিঙ্গা কান্নায় ভেঙে পড়েন। সবার একবাক্যে দাবি গণহত্যার বিচার ও সম্মানজনক প্রত্যাবাসন। রোহিঙ্গা সংকটের ৫ বছর উপলক্ষে সকল ক্যাম্পে নিত্যদিনের চেয়ে নিরাপত্তা জোরদার ছিল। এপিবিএনের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্য বিভাগও সতর্কাবস্থায় দায়িত্ব পালন করেছে।

এদিকে দেশে রোহিঙ্গা ঢলের ৫ বছর পূর্তির দিনে তাদের দ্রুত প্রত্যাবাসন দাবিতে মানববন্ধন করেছে রোহিঙ্গা প্রতিরোধ কমিটি কক্সবাজার। বৃহস্পতিবার (২৫ আগস্ট) সকালে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি মাহবুবুর রহমানের সভাপতিত্বে ও প্রচার সম্পাদক নেজাম উদ্দিনের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন- কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট তাপস রক্ষিত, কক্সবাজার খেলাঘর আসরের সভাপতি আবুল কাসেম বাবু, কক্সবাজার সোসাইটি সভাপতি গিয়াস উদ্দিন প্রমুখ।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, রোহিঙ্গা সংকটের ৫ বছর পূর্ণ হয়েছে। অথচ এখনো তাদের প্রত্যাবাসনের কোনো প্রক্রিয়া দৃশ্যমান নয়। কয়েকবার তাদের প্রত্যাবাসনের কথা আসলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। ফলে রোহিঙ্গাদের কারণে মাদকের আগ্রাসন, চুরি ডাকাতিসহ সমাজে অপরাধ বেড়েছে। রোহিঙ্গার কারণে স্থানীয় নাগরিকদের রোহিঙ্গা নয় মর্মে প্রত্যয়ন নিতে হয়। এটা আমাদের জন্য লজ্জাজনক। কক্সবাজারবাসী আজ অতিষ্ঠ। এ থেকে মুক্তির একমাত্র পথ প্রত্যাবাসনের মাধ্যমে কক্সবাজারকে রোহিঙ্গামুক্ত করা।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট দেশটির সেনাবাহিনী  রোহিঙ্গাদের ওপর নির্বিচারে হত্যা ও নির্যাতন শুরু করে। ওই সময় বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ঢল নামে। তখন সীমান্ত অতিক্রম করে লাখ লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশের কক্সবাজারে এসে আশ্রয় নেয়। ওই দিনটিকে স্মরণে কক্সবাজারের বিভিন্ন ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা ‘রোহিঙ্গা গণহত্যা দিবস’ পালন করে আসছে।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments