Friday, March 29, 2024
spot_img
Homeধর্মঅন্তঃসত্ত্বা নারীর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় কোরআনের নির্দেশনা

অন্তঃসত্ত্বা নারীর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় কোরআনের নির্দেশনা

নারীর গর্ভকাল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর। এ সময় তার সঠিক পরিচর্যা না হলে এর প্রভাব অনাগত সন্তানের ওপর পড়তে পারে, যার প্রভাব অনাগত সন্তানকেও আজীবন বয়ে বেড়াতে হবে। তাই প্রত্যেকের উচিত গর্ভকালে অন্তঃসত্ত্বা নারীদের সঠিকভাবে পরিচর্যা করা। পবিত্র কোরআনের বর্ণনা মতে, মহান আল্লাহ মারিয়াম (আ.)-কে গর্ভকালে যে নির্দেশনাগুলো দিয়েছেন, তা প্রত্যেক গর্ভবতী নারীর জন্য পাথেয় হতে পারে।

একজন গর্ভবতী নারী যদি এই মৌলিক নির্দেশনাগুলো মেনে চলতে পারে, তাহলে এটি তার ও তার অনাগত সন্তানের জন্য অত্যন্ত উপকারী হবে। ইরশাদ হয়েছে, ‘তখন তার নিচ থেকে সে তাকে ডেকে বলল যে তুমি চিন্তা কোরো না, তোমার রব তোমার নিচে একটি ঝরনা সৃষ্টি করেছেন। আর তুমি তোমার দিকে খেজুরগাছের কাণ্ডে নাড়া দাও, সেটা তোমার ওপর তাজা-পাকা খেজুর ফেলবে। কাজেই খাও, পান করো এবং চোখ জুড়াও। ’ (সুরা : মারিয়াম, আয়াত : ২৪-২৬)

উল্লিখিত আয়াতগুলোতে মহান আল্লাহ ফেরেশতার মাধ্যমে (গর্ভবতী) মারিয়াম (আ.)-কে মৌলিক কয়েকটি নির্দেশনা দিয়েছেন। নিম্নে সেগুলো তুলে ধরা হলো—

চিন্তামুক্ত থাকা

পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ (গর্ভবতী) মারিয়াম (আ.)-কে নির্দেশনা দিয়েছেন, ‘তুমি চিন্তা কোরো না। ’ আয়াতের অংশ দ্বারা বোঝা যায়, গর্ভবতীদের জন্য দুশ্চিন্তা করা একদম উচিত নয়। বিজ্ঞানের দৃষ্টিতেও গর্ভবতী নারীদের জন্য দুশ্চিন্তা খুবই ঝুঁকিকর।

গবেষণা বলছে, কোনো নারী যদি গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত মানসিক চাপে থাকে, ওই সন্তান ৩০ বছর বয়সে পৌঁছানোর আগেই সে ‘পারসোনালিটি ডিস-অর্ডার’ বা ব্যক্তিত্ব বৈকল্যে আক্রান্ত হতে পারে। এমনকি গর্ভাবস্থায় মাঝারি মাত্রার মানসিক চাপ যদি দীর্ঘমেয়াদি হয়, তাহলেও সন্তানের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর তার নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, গর্ভবতী নারীদের মানসিক স্বাস্থ্যকে বিশেষভাবে বিবেচনায় নেওয়া উচিত। (বিবিসি)

হালকা পরিশ্রম করা

মহান আল্লাহ চাইলে (গর্ভবতী) মারিয়াম (আ.)-এর সামনে খাবার হাজির করতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা না করে, মারিয়াম (আ.)-কে নির্দেশনা পাঠিয়েছেন, ‘তুমি তোমার দিকে খেজুরগাছের কাণ্ডে নাড়া দাও, সেটা তোমার ওপর তাজা-পাকা খেজুর ফেলবে। ’

মহান আল্লাহর এই নির্দেশনা আমাদের ইঙ্গিত দেয়, গর্ভকালে সহনীয় পর্যায়ের মৃদু পরিশ্রম, শরীরচর্চা করা গর্ভবতীর জন্য উপকারী।

বিশেষজ্ঞদের মতে, গর্ভকালে হালকা ব্যায়াম মা ও শিশুর মধ্যে রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়। কোমর, পা ইত্যাদি ব্যথার উপশমে সাহায্য করে। সন্ধি, লিগামেন্ট, পেশিকে শিথিল করে। কাজে উদ্যম আনে, ফিটনেস বাড়ায়।

অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি থেকে বাঁচায়। পরিপূর্ণ ও গভীর ঘুমে সাহায্য করে। কোষ্ঠকাঠিন্য, অস্থিরতা, দুশ্চিন্তা ইত্যাদি দূর করে। পায়ের রক্তনালি ফুলে ওঠা দূর করে। স্বাভাবিক প্রসবে সাহায্য করে।

স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া

এরপর মহান আল্লাহ মারিয়াম (আ.)-কে নির্দেশনা দিয়েছেন, ‘খাও, পান করো। ’ অর্থাৎ খেজুরগাছের কাণ্ডে নাড়া দেওয়ার পর যে খেজুরগুলো পড়বে, সেগুলো খাও ও পর্যাপ্ত পরিমাণে পান করো। খাবারে অবহেলা কোরো না। এখানে মহান আল্লাহ দুটি নির্দেশনা দিয়েছেন—এক. পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যকর খাবার খাও। আমরা সবাই জানি, খেজুর অত্যন্ত পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যকর খাবার। আরেকটি নির্দেশনা হলো, খাবারে অবহেলা কোরো না।

গর্ভধারণের প্রথম তিন মাস বাদ দিয়ে বাকি সময়টায় গড়ে অন্তত ১০ কেজি ওজন বাড়া প্রয়োজন। পুষ্টি নিশ্চিত করা আর ওজন বাড়ানোর জন্য বাড়তি খাবার তো খেতেই হবে।

প্রফুল্ল থাকা

উল্লিখিত আয়াতে মহান আল্লাহ মারিয়াম (আ.)-কে প্রফুল্ল থাকতে বলেছেন। মানুষের অপবাদের ভয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ার থেকে বিরত থাকতে বলেছেন। এটিও গর্ভবতী মায়েদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘অন্তঃসত্ত্বা নারীদের শরীর ও মনের অবস্থা নাজুক থাকে। এই সময় তাকে মানসিকভাবে আঘাত করা বা সে কষ্ট পেতে পারে—এমন আচরণ করা মোটেও ঠিক নয়। ’

অর্থাৎ এ সময় তাদের উচিত মানসকি চাপকে পাত্তা না দিয়ে প্রফুল্ল থাকার চেষ্টা করা। আর আশপাশের মানুষগুলোর দায়িত্ব তাদের সঙ্গে এমন আচরণ না করা, যাতে তারা মানসিক চাপে পড়ে যায়।

সুবহানাল্লাহ, পবিত্র কোরআনের পবিত্র আয়াতেই মহান আল্লাহ চিন্তাশীল মুমিন ব্যক্তিদের জন্য অসংখ্য নির্দেশনা রেখে দিয়েছেন, যারা তা পালন করবে, তারা দুনিয়া-আখিরাতের সফলতা ও শান্তি অর্জনের সূত্র খুঁজে পাবে।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments