Friday, March 29, 2024
spot_img
Homeজাতীয়৬ মাসের ব্যবধানে সব পণ্যেরই লম্বা লাফ

৬ মাসের ব্যবধানে সব পণ্যেরই লম্বা লাফ

কোনো কোনোটির দাম বেড়েছে দ্বিগুণ, তিনগুণ

দেশের বাজারে নানা অজুহাতে অসাধু ব্যবসায়ীরা নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়েছেন। গত ৬ মাসের ব্যবধানে কোনো কোনো পণ্যের দাম বেড়ে দ্বিগুণ, তিনগুণ হয়েছে। এরমধ্যে আমদানি করা পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে সবচেয়ে বেশি। চাল থেকে শুরু করে ডাল, ভোজ্য তেল, আটা-ময়দা, মসলা পণ্য, মাছ-মাংস, ডিম, শিশুখাদ্যের মধ্যে গুঁড়া দুধ, চিনি এমনকি লবণের দামও বেড়েছে। বাধ্য হয়ে স্বল্প আয়ের মানুষ ও মধ্যবিত্ত শ্রেণি কমিয়ে দিয়েছেন দৈনন্দিন খরচ। এতে ব্যয়ের সঙ্গে সমন্বয় করতে না পেরে অনেকে সঞ্চয় ভেঙে খাচ্ছেন।

কয়েক মাস ধরেই নিত্যপণ্যের দাম ক্রমাগত বাড়ছে। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)’র হিসাবে গত ৬ মাসে (২রা জানুয়ারি থেকে ২রা জুন) নিত্যপণ্যের এই মূল্যবৃদ্ধির তালিকায় আছে চাল, আটা, ময়দা, ভোজ্য তেল, ডাল, ডিম, আলু, পিয়াজ, রসুন, আদা, শুকনা মরিচ, চিনি ও লবণ। তবে বাজারে টিসিবির মূল্যবৃদ্ধির তালিকায় থাকা পণ্যের বাইরে গম, ডিটারজেন্ট, টুথপেস্ট, গুঁড়া দুধ, তরল দুধ, বেকারি পণ্য ইত্যাদির দামও বেড়েছে।

টিসিবি’র জরিপ বলছে, চলতি বছরের গত ২রা জানুয়ারি সরু চালের প্রতি কেজি ছিল ৫৯-৬৮ টাকা। আর মোটা চালের কেজি ছিল ৪৫-৪৯ টাকা। অন্যদিকে, ২রা জুন বৃহস্পতিবার সরু চাল প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ৬০-৭২ টাকায়।

আর মোটা চাল বিক্রি হয়েছে ৪৮-৫২ টাকায়। 

গত ২রা জানুয়ারি আটা (খোলা) প্রতি কেজি ছিল ৩৪-৩৮ টাকা। আটা (প্যাকেট) প্রতি কেজি ছিল ৪০-৪৫ টাকা। ময়দা (খোলা) প্রতি কেজি ছিল ৪৫-৫০ টাকা। ময়দা (প্যাকেট) প্রতি কেজি ছিল ৫০-৫৫ টাকা। অন্যদিকে, ২রা জুন বৃহস্পতিবার আটা (খোলা) প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ৪৬-৫০ টাকায়। আটা (প্যাকেট) প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ৫০-৫৪ টাকায়। ময়দা (খোলা) প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ৫৮-৬২ টাকায়। ময়দা (প্যাকেট) প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ৬৫-৭০ টাকায়।

গত ২রা জানুয়ারি সয়াবিন তেল (লুজ) প্রতি লিটার ছিল ১৩৮-১৪০ টাকা। সয়াবিন তেল (বোতল) প্রতি লিটার ছিল ১৫০-১৬০ টাকা। সয়াবিন তেল (বোতল) ৫ লিটার ছিল ৭০০-৭৫০ টাকা। অন্যদিকে ২রা জুন বৃহস্পতিবার সয়াবিন তেল (লুজ) প্রতি লিটার বিক্রি হয়েছে ১৮২-১৯০ টাকায়। সয়াবিন তেল (বোতল) প্রতি লিটার বিক্রি হয়েছে ১৯৫-২০০ টাকায়। সয়াবিন তেল (বোতল) ৫ লিটার বিক্রি হয়েছে ৯৭৫-৯৯০ টাকায়। 

গত ২রা জানুয়ারি মসুর ডাল (বড় দানা) প্রতি কেজি ছিল ৯০-৯৮ টাকা। মসুর ডাল (মাঝারি দানা) প্রতি কেজি ছিল ১০০-১০৫ টাকা। ছোট দানা প্রতি কেজি ছিল ১১০-১২০ টাকা। অন্যদিকে ২রা জুন বৃহস্পতিবার মসুর ডাল (বড় দানা) প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ১০৫-১১০ টাকায়। মসুর ডাল (মাঝারি দানা) প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ১২৫-১৩০ টাকায়। ছোট দানা প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ১৩০-১৩৫ টাকায়।

গত ২রা জানুয়ারি গরুর মাংস প্রতি কেজি ছিল ৫৬০-৬০০ টাকা। ব্রয়লার মুরগির প্রতি কেজি ছিল ১৮০-২০০ টাকা। আর দেশি মুরগির প্রতি কেজি ছিল ৪২০-৪৫০ টাকা। অন্যদিকে ২রা জুন বৃহস্পতিবার গরু প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ৫৬০-৬৮০ টাকায়। ব্রয়লার মুরগির প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ১৩৫-১৫০ টাকায়। আর দেশি মুরগির প্রতি কেজি ছিল ৫২০-৫৫০ টাকায়।
এই জরিপ টিসিবি রাজধানীর কাওরান বাজার, মালিবাগ কাঁচাবাজারসহ ১৩টি খুচরা বাজারের পণ্যের মূল্য যাচাই করে তৈরি করেছে।

টিসিবির নিত্যপণ্যের তালিকা অনুযায়ী, আলোচ্য সময়ে বিভিন্ন পণ্যে ১ থেকে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত মূল্যবৃদ্ধির তথ্য পাওয়া গেছে। অবশ্য এর মাঝে কিছু পণ্যের দাম বেড়ে কমেছে। গত ৬ মাসের বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ৬ মাসে সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে ২৫০ টাকা, ডাল ২০ টাকা, মিনিকেট চাল কেজিতে ৫-৭ টাকা, চিনি ১৫-১৮ টাকা, ২ কেজি প্যাকেট আটা ২৫-২৭ টাকা। এছাড়া পিয়াজের দাম বেড়েছে ১৫ টাকা।

জিনিসপত্রের দাম বাড়লে সরকারি হিসাবে তা মূল্যস্ফীতি দিয়ে প্রকাশ করা হয়। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) মূল্যস্ফীতির হিসাব করে। দেশে গত তিন মাস ধরে টানা মূল্যস্ফীতি হয়েছে, যা ৬ শতাংশের ওপরে আছে। সর্বশেষ গত এপ্রিল মাসে মূল্যস্ফীতি ছিল ৬.২৯ শতাংশ। 
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, পণ্য নিয়ে কারসাজি রোধে বাজার তদারকি জোরদার করা হয়েছে। 

রাজধানীর কাওরান বাজারের পণ্য কিনতে আসা আসমা ইসলাম বলেন, সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়েছে। এতে ব্যয় বেড়েছে। কিন্তু আয় আগের মতোই রয়েছে। এতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। 
কনজ্যুমারস্‌ এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, বাজারে সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়েছে। বছরের ব্যবধানে এই মূল্যবৃদ্ধির তালিকায় থাকা পণ্যের দামের ব্যবধান আরও বাড়ছে। এছড়া কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ী বিশ্ববাজার পরিস্থিতির অজুহাতে কারসাজিতে লিপ্ত। এ বিষয়ে তদারকি সংস্থাগুলোর দেখভাল করতে হবে। অনিয়ম পেলে কঠোর ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নিতে হবে।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments