লিমা আক্তার ও জামাল মিয়ার বাড়ি দক্ষিণ সুনামগঞ্জের পাগলা পশ্চিমপাড়া গ্রামে। ১৬ বছর আগে বিয়ে হয় তাদের। সংসারে তিন ছেলে, বড়টার বয়স ১২ বছর। অথচ সাত বছর আগে তুচ্ছ বিষয় নিয়ে ঝগড়ার একপর্যায়ে স্ত্রীকে তালাক দিয়ে বসেন জামাল। বাবার বাড়িতে গিয়ে ওঠেন লিমা। সেই সঙ্গে স্বামীর বিরুদ্ধে যৌতুকের জন্য নির্যাতনের অভিযোগে আদালতে মামলা ঠুকে দেন। গতকাল সেটি বুধবার আপসে নিষ্পত্তি হয়। মামলা থেকে খালাস পেয়ে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে হাসিমুখে বাড়ি ফেরেন জামাল মিয়া। রায় ঘোষণার পর আদালতের কর্মীরা তাদের ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। শুধু জামাল মিয়া ও লিমা আক্তারই নন, সুনামগঞ্জের আরও ৪৬ দম্পতির বিষয়েই এমন রায় এসেছে।
পারিবারিক নানা বিরোধে যৌতুকের জন্য নির্যাতনের অভিযোগে বিভিন্ন সময়ে করা ৪৭টি মামলার গতকাল বুধবার রায় দিয়েছেন সুনামগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. জাকির হোসেন। এর মধ্যে এক ব্যক্তির দুই স্ত্রী, তারা দুজনই স্বামীর বিরুদ্ধে একই অভিযোগে মামলা করেছিলেন। সবগুলোই আপসে নিষ্পত্তি হওয়ায় আদালত সব আসামিকে খালাস দিয়েছেন। এ সময় বাদী-বিবাদীর আইনজীবী ও তাদের পরিবারের লোকজন এবং সুনামগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট নান্টু রায় আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
এক অনন্য এই রায়ের মাধ্যমে স্বামীর ঘরে ফিরেছেন স্ত্রী। সন্তানদের কেউ কেউ ছিল মায়ের সঙ্গে, আবার কেউ বাবার সঙ্গে। এখন তারা মা-বাবা দুজনের সঙ্গেই থাকবে। তবে এসব দম্পতিকে মানতে হবে কয়েকটি শর্ত। এ ব্যাপারে আদালতে লিখিত অঙ্গীকার করেছেন তারা। আপসনামায় ৪৭ দম্পতি কথা দিয়েছেন, সন্তানাদি নিয়ে পরিবারের অন্যদের সঙ্গে শান্তিপূর্ণভাবেই তারা সংসারধর্ম পালন করবেন। শান্তি বিনষ্ট হয় এমন কোনো কাজই করবেন না। স্বামী স্ত্রীকে, স্ত্রী স্বামীকে যথাযোগ্য মর্যাদা দেবেন। স্ত্রী বা তার মা-বাবা কিংবা অভিভাবকের কাছে আর কোনো সময়ই যৌতুক দাবি করবেন না স্বামী। পারিবারিক বিষয় নিয়ে মনোমানিল্য ও বিরোধ দেখা দিলে নিজেরাই আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করবেন। স্বামী কখনো স্ত্রীকে নির্যাতন করবেন না, নির্যাতন বা যৌতুক দাবি করলে স্ত্রী আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে পারবেন।
আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট নান্টু রায় বলেন, ‘পৃথক ৪৭টি নারী-শিশু নির্যাতন দমন মামলায় আদালত একসঙ্গে যুগান্তকারী একটি রায় দিয়েছেন। আদালতে যে শুধু শাস্তিই হয় তা নয়, পরিবারে শান্তিও ফেরানো হয়; তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন হয়েছে এই রায়ে। আপসে মিলে যাওয়ার পর আদালতের পক্ষ থেকে ৪৭ দম্পতিকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়েছে।’