৩০ বছরেরও বেশি আগে নিখোঁজ হয়েছিলেন পেনসিলভানিয়ার একজন নারী প্যাট্রিসিয়া কোপ্তা। আইনিভাবে তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়েছিলো। ৩১ বছর পর হঠাৎ তাঁকে পুয়ের্তো রিকোর একটি নার্সিং হোমে বসবাস করতে দেখা গেছে। স্বামী এবং ভাইবোনদের রেখে হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে যান প্যাট্রিসিয়া কোপ্তা। রস টাউনশিপে একটি সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয় ১৯৯৯ সালে প্রবীণদের হোমে নিয়ে যাবার আগে উত্তর পুয়ের্তো রিকোর রাস্তায় উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘুরছিলেন প্যাট্রিসিয়া। কোপ্তা, একসময় তার নিজ শহরে প্রচারক হিসাবে কাজ করতেন। পুয়ের্তো রিকোতে থাকাকালীন প্রাথমিকভাবে তার অতীত গোপন রেখেছিলেন। রস টাউনশিপের ডেপুটি পুলিশ চিফ ব্রায়ান কোহলহেপ বলেছেন ডিমেনশিয়ায় ভোগার কারণে ধীরে ধীরে তাঁর অতীত সামনে আসতে থাকে। গত বছর হোমের এক সমাজকর্মী ৮৩ বছরের কোপ্তা সম্পর্কে একাধিক তথ্য সংগ্রহের পর কর্তৃপক্ষকে জানান। কোহলহেপ বলেন এরপরই ডিএনএ পরীক্ষা কোপ্তার পরিচয় নিশ্চিত করে।
তার স্বামী বব কোপ্তা এবং বোন গ্লোরিয়া স্মিথ এখনো জীবিত। অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের সাথে টেলিফোন সাক্ষাত্কারে কোপ্তার জীবনের বিশদ বিবরণ সম্পর্কে জানান তাঁরা।প্যাট্রিসিয়া কোপ্তাকে “দ্য স্প্যারো” নামে ডাকা হতো। কারণ পিটসবার্গের উত্তরে যেখানে প্রায় ৩১,০০০ জন মানুষ বাস করেন সেখানে প্রায়শই ঘন ঘন পার্কিং লট ও ব্যস্ত রাস্তায় পথচারী এবং গাড়ি চালকদের বিশ্বের নানা খবর সতর্ক করতেন তিনি। অতীত জীবনে কোপ্তা একজন মডেল এবং নৃত্য প্রশিক্ষক ছিলেন। উচ্চ বিদ্যালয় থেকে স্নাতক হওয়ার পর, তিনি পিটসবার্গ প্লেট গ্লাস কোম্পানিতে কাজ করতেন এবং সপ্তাহের শেষে বলরুমে যেতেন নাচের ইভেন্টে যোগ দিতে। কোপ্তার বোন স্মিথ জানাচ্ছেন তিনি বিয়ের আগে প্রায়ই পুয়ের্তো রিকোতে তার বন্ধুদের সাথে ছুটি কাটাতে সমুদ্র সৈকতে ছুটে যেতেন। স্মিথ জানান যে তার বোন ১০ বছর পর গ্লাস কোম্পানিতে তার চাকরি ছেড়ে দিয়েছিলেন কারণ মাইগ্রেনের কারণে মানসিক চাপে প্রায়ই ভুগতেন। এরপর তিনি পিটসবার্গের আর্ট ইনস্টিটিউটে লিফট অপারেটর হিসেবে চাকরি পান। তখনই পরিবারের সদস্যরা তার মধ্যে পরিবর্তন লক্ষ্য করেন। ডাক্তাররা জানান প্যাট্রিসিয়ার মধ্যে সিজোফ্রেনিয়ার লক্ষণ রয়েছে। ১৯৯২ সাল নাগাদ নিখোঁজ হয়ে যান প্যাট্রিসিয়া। বব কোপ্তা এপিকে বলেন- ”আমি এক রাতে বাড়িতে ফিরে দেখি প্যাট্রিসিয়া বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে। ”২০ বছরের বিবাহিত জীবন ছিল তাঁদের। ববের বয়স এখন ৮৬। তিনি স্মরণ করেন পিটসবার্গের একটি নদীর কাছে একটি নৌকার মধ্যে তাঁর সাথে প্যাট্রিসিয়ার দেখা হয়েছিলো। ১৯৭২সালে, তারা বিয়ে করেন। প্যাট্রিসিয়ার এই নিখোঁজ হয়ে যাওয়া কর্তৃপক্ষ এবং পরিবারকে একইভাবে হতবাক করে। বব পুলিশকে জানান তাঁর স্ত্রী প্রায়শই পুয়ের্তো রিকোতে যেতে চাইতেন সেখানকার সুন্দর আবহাওয়ার জন্য। পুলিশ অনেক চেষ্টা করেও প্যাট্রিসিয়ার সন্ধান না মেলায় প্রায় সাত বছর পর তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। অবসরপ্রাপ্ত ট্রাক চালক বব কোপ্তা বলেন, “আমি অনেক কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে গেছি। প্রতিবারই পুলিশ কোনো লাশের সন্ধান পাবার পর আমাকে ডাকতো। আমার মনে হতো ‘এটা কি প্যাট্রিসিয়া? এটা কি প্যাট্রিসিয়া?’ বাড়ি ছাড়ার পর প্যাট্রিসিয়া কোপ্তা দ্বীপের উত্তরের শহর নারাঞ্জিটো, করোজাল এবং তোয়া আলতা ঘুরে বেড়ান, যা সান জুয়ানের রাজধানী থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত। কোহলহেপ বলেন, যখন তাকে প্রথম প্রাপ্তবয়স্কদের হোমে নিয়ে যাওয়া হয়, তখন ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে তিনি ইউরোপ থেকে একটি ক্রুজ জাহাজের মাধ্যমে পুয়ের্তো রিকোতে পৌঁছন। পেনসিলভেনিয়ায় পুলিশের সাথে যোগাযোগ করার পরে, প্যাট্রিসিয়ার ডিএনএ নমুনাগুলি নিশ্চিত করতে প্রায় এক বছর সময় লেগেছিল। স্ত্রী নিখোঁজ হয়ে যাবার পর বব কোপ্তা পরে আর বিয়ে করেননি। তিনি এখন অতীত ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করছেন, যদিও প্যাট্রিসিয়ার যত্ন নেওয়া হচ্ছে জেনে তিনি আশ্বস্ত হয়েছেন। অন্যদিকে স্মিথ তার বড় বোনকে দেখতে পুয়ের্তো রিকোয় যেতে চান। তিনি জানিয়েছেন প্যাট্রিসিয়া কোপ্তার এক যমজ বোন ইতিমধ্যেই মারা গেছেন। স্মিথ এখন অপেক্ষা করছেন কবে হারিয়ে যাওয়া বড় বোনের সাথে আবার দেখা হবে, আবার একে ওপরের গলা জড়িয়ে ধরবেন।
সূত্র : arabnews.com