কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় তাঁর বিখ্যাত সেই কবিতায় ফুটিয়ে তুলেছিলেন, ৩৩ বছর বয়সী যুবকের হতাশার গল্প। ছেলেবেলার সেই বোষ্টমী থেকে যৌবনের বরুণা- কেউ কথা রাখেনি। কথা না রাখার, বারবার হৃদয় ভাঙার এই গল্প ছড়িয়ে আছে মানুষের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে; এমনকী ক্রিকেটেও! কিন্তু ক্রিকেটের সঙ্গে বিখ্যাত এই কবিতার সম্পর্ক কী? সুনীলবাবুর ‘৩৩ বছর’ এর জায়গায় ‘২১ বছর’ বসিয়ে দিন, পরিস্কার হয়ে যাবে ব্যাপারটা। হ্যাঁ, বাংলাদেশের টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার ২১ বছর!
২০০০ সালে টেস্ট মর্যাদা পেয়েছিল বাংলাদেশ। কথা ছিল, ভালো কিছু করার। বছরের পর পর এই আশ্বাসেই সকল পরাজয়ের গ্লানি ভুলেছেন দর্শকরা। কিন্তু কেউ কথা রাখেনি। বাংলাদেশ দলের খেলা দেখলে এখন যে কারও মনে হতে বাধ্য যে, ওরা টেস্ট খেলতেই ভুলে গেছে! ঢাকা টেস্টেই দেখুন, দেড় দিন সময় ছিল; উইকেটে টিকে থাকলেই ম্যাচ ড্র। ফলোঅন এড়ালেও পাকিস্তানকে আবার ব্যাট করতে পাঠানো যেত। পরাজয়ের কোনো সম্ভাবনাই নেই। কিন্তু সেই দেড় দিনের মধ্যে পরপর দুইবার অল-আউট হয়ে বাংলাদেশ ইনিংস ব্যবধানে পরাজয় বরণ করল! তাও আবার ঘরের মাঠে। নিঃসন্দেহে এই ঘটনা ক্রিকেট ইতিহাসেই বিরল!
২১ বছরে এখন পর্যন্ত ১২৬টি টেস্ট খেলেছে বাংলাদেশ। জিতেছে মাত্র ১৫টি! ড্র হয়েছে ১৭টি টেস্ট। বাকিগুলোতে জুটেছে পরাজয়। বেশিরভাগ পরাজয়ই হয়েছে ইনিংস ব্যবধানে। যা চরম লজ্জাজনক। ২১ বছর পরও এদেশে টেস্ট সংস্কৃতি গড়ে ওঠেনি। ঘরোয়া লংগার ভার্সনের ম্যাচগুলো নামকাওয়াস্তে আয়োজন করা হয়। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে যার পার্থক্য যোজন যোজন। বিশেষ দুই-একটা দলের দিকে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগও থাকে। এমনিতেই বাংলাদেশ টেস্ট খেলার সুযোগ খুব কমই পায়। তার ওপর জাতীয় দলের বেশিরভাগ ক্রিকেটার ঘরোয়া লংগার ভার্সনে খেলতে চান না।
প্রতিটি পরাজয়ের পর অধিনায়কেরা বলে থাকেন, ‘আমরা এই ম্যাচ থেকে শিক্ষা নিয়ে পরের ম্যাচে ভালো করব’। বিসিবি কর্তারা বারবার বলেন, দেশে টেস্ট সংস্কৃতি তৈরিতে কাজ করবেন। টেস্ট উপযোগী উইকেট এবং অবকাঠামো তৈরি করবেন। কিন্তু না, কেউ কথা রাখেনি। পাইপলাইনে ‘অনেক ক্রিকেটার’ থাকার গল্প শোনা গেলেও বাস্তবে তার কোনো হদিস নেই। নতুন কয়েকজনের অভিষেক হলেও সবাই ব্যর্থ। এই ব্যর্থতার পেছনের কারণ অনুসন্ধান করা হয় না। সুষ্ঠুভাবে অনুসন্ধান করলে হয়তো জানা যেত, কেন ২১ বছরেও কেউ কথা রাখল না।