Sunday, April 2, 2023
spot_img
Homeজাতীয়১২ কোটি টাকা ফেরতে নারাজ রসিক

১২ কোটি টাকা ফেরতে নারাজ রসিক

রংপুর সিটি করপোরেশনের (রসিক) রাস্তা ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নে যানবাহন ও যন্ত্রপাতি কেনার জন্য ১১৪ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে প্রায় দুই বছর আগে। অপরিকল্পিতাভাবে রেট শিডিউল দিয়ে প্রকল্পটি অনুমোদন পাওয়ার পর দেখা গেল ঠিকাদারের দেওয়া দর প্রায় সাড়ে ১২ কোটি টাকা কম। এর পুরোটাই বেঁচে গেছে। দেশের এ অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যেও বেঁচে যাওয়া এই অর্থ ফেরত দিতে নারাজ রংপুর সিটি করপোরেশন। এ টাকা দিয়ে তারা নতুন যন্ত্রপাতি কিনতে চায়। এজন্য পরিকল্পনা কমিশনে আবেদনও করেছে তারা।

অবশ্য সংকটের এ সময়ে মন্ত্রণালয় অনুমোদন না দিলে নির্দিষ্ট কাজের মধ্যেই থাকবেন বলে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক।

‘রংপুর সিটি করপোরেশনের জন্য যানবাহন ও যন্ত্রপাতি ক্রয় প্রকল্প’ শীর্ষক প্রকল্পটি অনুমোদন পায় ২০২০ সালের শুরুতেই। ২০২১ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এ পর্যন্ত প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি মাত্র ৫০ শতাংশ। এ জন্য প্রকল্পের ব্যয় ৫ লাখ টাকা কমিয়ে আরও এক বছর সময় বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে রংপুর সিটি করপোরেশন।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, রংপুর সিটি করপোরেশনের যন্ত্রপাতি কেনার প্রকল্পটিতে ঠিকাদারদের সঙ্গে যে চুক্তিমূল্য তা প্রকল্প প্রস্তাবে দেওয়া মূল্যের চেয়ে অনেক কম। ফলে বেঁচে গেছে ১২ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। তবে তা মন্ত্রণালয়ে ফেরত না দিয়ে আরও ৯টি নতুন যন্ত্রপাতি কেনার আবেদন করেছে তারা। একইসঙ্গে ৫ লাখ ২১ হাজার টাকা ব্যয় কমিয়ে এক বছর সময় বাড়ানোর প্রথম সংশোধনী প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।

বাংলাদেশে ঠিকাদার বা মন্ত্রণালয়গুলোর প্রকল্পে বেঁচে যাওয়া অর্থ ফেরত দেওয়ার তেমন একটা নজির নেই। তবে নির্ধারিত সময়ের প্রায় ৭ মাস আগেই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহসড়কে কুমিল্লার দাউদকান্দির দ্বিতীয় মেঘনা-গোমতী সেতুর নির্মাণকাজ শেষ করার উদাহরণ তৈরি করেছিল জাপানের তিন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ২০১৯ সালে এ নির্মাণ প্রতিষ্ঠানগুলো মোট ৭৩৮ কোটি টাকা সরকারকে ফেরত দেওয়ার নজির রেখেছিল।

রংপুর সিটির বেঁচে যাওয়া অর্থ ফেরত না দেওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক মো. আবু তালেব সরকার গতকাল বুধবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা যে টেন্ডার দিয়েছিলাম তাতে অর্থ ব্যয় কম হয়েছিল। সাচিবিক দপ্তর থেকে বলা হয়েছে এ টাকা ফেরত দেওয়া যাবে না, কারণ আমাদের যন্ত্রপাতির দরকার আছে। আমাদের বলা হয়েছে, প্রকল্পের সংশোধনী দিয়ে মন্ত্রণালয়ে পাঠান, যদি অনুমোদন হয় তবে পরবর্তী ব্যবস্থা। আর যদি অনুমোদন না হয়, তাহলে মূল প্রকল্প প্রস্তাবে যেভাবে আছে সে আলোকেই কাজ শেষ করা হবে।’

প্রকল্পের কাজ নির্দিষ্ট সময়ে শেষ হচ্ছে না কেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ঠিকাদারকে যথারীতি ওয়ার্কঅর্ডার (কার্যাদেশ) দিয়েছিলাম, কিন্তু সে সময় তাদের কাছে ডলার সংকট থাকায় তারা ঠিক সময়ে ঋণপত্র খুলতে পারেনি। পরবর্তী সময়ে আবার কভিড মহামারীর কারণেও দেরি হয়েছে। আর ভৌত অগ্রগতি ৫০ শতাংশ হলেও, আর্থিক অগ্রগতি অনেক কম। নতুন মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন এ সিটিতে, উনি খুব শিগগিরই অর্থছাড় করবেন বলে আশা করছি।’

অর্থনৈতিক এ সংকটের সময়ে নতুন যন্ত্রপাতি আমদানি করার যৌক্তিকতা কী? এ প্রশ্নের জবাবে আবু তালেব সরকার বলেন, ‘আমাদের কাছে লেস মানি (অব্যয়িত অর্থ) ছিল, সেজন্য তা ফেরত না দিয়ে নতুন করে যন্ত্রপাতি কেনার আবেদন করেছি। মন্ত্রণালয় অনুমোদন না দিলে কিছু করার নেই।’

প্রকল্পটির মাধ্যমে সিটি করপোরেশনের যানবাহন ও যান্ত্রিক ব্যবস্থাকে শক্তিশালীকরণ, সড়ক ও নর্দমা উন্নয়ন, সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যবস্থাকে দক্ষ ও কার্যকরকরণ, বর্জ্য পরিবহনের দক্ষতা বাড়ানো ও বর্গা ব্যবস্থাপনা সহজতরকরণ এবং পয়ঃবর্জ্য ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণের কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্পটির সংশোধন প্রস্তাবের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য স্টিয়ারিং কমিটির সভায় পেশ করা হয়েছে।

সভায় প্রকল্প সংশোধনের কারণ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে জানানো হয়, প্রাক্কলিত ব্যয়ের অব্যয়িত অর্থ দিয়ে নতুন খাত যুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। ২টি স্কিড স্টিয়ার লোডার খাতে ২ কোটি ৪০ লাখ, ২টি হাইড্রোলিক বিম লিফটার খাতে ৩ কোটি ২০ লাখ, ২টি সার্চলাইট উইথ জেনারেটর ক্যারি অন দি ট্রাক চ্যাসিস মাউন্টেড ২ কোটি ৬০ লাখ, ১টি হুইল লোডার ৩ কোটি এবং ২টি মিনি ভাইব্রেটর রোলার খাতে ১ কোটি ২৫ লাখ টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে প্রকল্পের মোট প্রাক্কলিত ব্যয় সার্বিকভাবে ৫ লাখ ২১ হাজার টাকা কমেছে।

নতুন এ ৯টি যন্ত্রপাতি কেনার প্রস্তাবের বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক বলছেন, এতে প্রকল্পের উদ্দেশ্য অর্জনে সহায়ক হবে এবং প্রকল্পের মোট অনুমোদিত প্রাক্কলিত ব্যয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে। তবে প্রস্তাবিত সংশোধিত ডিপিপিতে (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) খাতভিত্তিক ব্যয় এবং নতুন যন্ত্রপাতি কেনার যৌক্তিকতাসহ প্রকল্প সংশোধনের কারণ সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করতে বলেছে কমিশন।

মূল প্রকল্প প্রস্তাব ঘেঁটে জানা গেছে, রাস্তা ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নের লক্ষ্যে রংপুর সিটি করপোরেশনের জন্য যানবাহন ও যন্ত্রপাতি ক্রয় প্রকল্প হাতে নিয়েছিল পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়।

২০১০ সালে বিভাগ ঘোষণার পর ২০১২ সালের ২৮ জুন রংপুর সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠা করা হয়। বর্তমানে এই সিটির রাস্তাঘাট, ড্রেন ও ফুটপাতের অবস্থা খুবই খারাপ। এছাড়া বর্জ্য ও পয়ঃবর্জ্য ব্যবস্থাপনাও নাজুক অবস্থায় রয়েছে। এরমধ্যে একটি উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে কিছু রাস্তার উন্নয়ন করা হয়েছে এবং সম্প্রতি অনুমোদিত অন্য একটি প্রকল্পের মাধ্যমে বেশ কিছু রাস্তা, ফুটপাত ও ড্রেনের উন্নয়ন করা হচ্ছে।

প্রকল্পের মূল কার্যক্রম হচ্ছে একটি অ্যাসফল্ট মিক্সিং প্ল্যান্ট, দুটি রেডি মিক্স কংক্রিট ক্যারিয়ার, একটি পেভার ফিনিশার, একটি মোটর গ্রেডার, দুটি এক্সাভেটর, একটি ভেকুয়াম সেপটিক ট্যাংক ক্লিনার, ১০টি গারবেজ, একটি ড্রেন ক্লিনিং জেট অ্যান্ড সাকার মেশিন এবং টায়ার রোড রোলার করা হবে।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments