হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের হ্যাঙ্গারে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের দুটি উড়োজাহাজের সংঘর্ষের ঘটনা শুধু অনাকাঙ্ক্ষিত নয়, উদ্বেগজনকও বটে। এ সংঘর্ষের কারণে বিমানের একটি বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআর উড়োজাহাজের লেজের হরিজেন্টাল স্ট্যাবিলাইজার ভেঙে গেছে।
অপর একটি উড়োজাহাজ বোয়িং ৭৩৭-এর ককপিটের একটি অংশ ছিদ্র হয়েছে এবং নোজের বড় অংশ দুমড়ে-মুচড়ে গেছে। ধারণা করা হচ্ছে-এ ঘটনায় বিমানের ক্ষতির পরিমাণ অর্ধশত কোটি টাকারও বেশি। তাছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত উড়োজাহাজ দুটিকে এক মাসের বেশি সময় মেরামতের জন্য হ্যাঙ্গারে থাকতে হবে। এ কারণে ফ্লাইট চালাতে না পারায় বিপুল অঙ্কের টাকা লোকসান দিতে হবে রাষ্ট্রীয় এ সংস্থাকে। ফ্লাইট শিডিউলেও পড়বে এর নেতিবাচক প্রভাব। উল্লেখ্য, দুটি উড়োজাহাজই বিমানবহরে নতুন।
প্রশ্ন দেখা দিয়েছে বিমানবন্দরের হ্যাঙ্গারে দুই উড়োজাহাজের সংঘর্ষের কারণ নিয়ে। এটি কি নিছক দুর্ঘটনা, নাকি নাশকতা? কারণ উদ্ঘাটনে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আমরা এর রিপোর্টের অপেক্ষায় থাকলাম। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ দুর্ঘটনা ঘটেছে টোম্যানের অনভিজ্ঞতার কারণে।
জানা যায়, ড্যাশ-৮ কিউ ৪০০ উড়োজাহাজের অনভিজ্ঞ ট্যোম্যানকে দিয়ে হ্যাঙ্গার থেকে বোয়িং ৭৩৭ উড়োজাহাজটি বের করতে গিয়ে এ সংঘর্ষ ঘটে। উল্লেখ্য, ড্যাশ-৮ কিউ ৪০০ বিমানবহরের সবচেয়ে ছোট উড়োজাহাজ। আর বোয়িং ৭৩৭ হলো এর দ্বিগুণেরও বড়। এক উড়োজাহাজের টোম্যানকে দিয়ে আরেক উড়োজাহাজ হ্যাঙ্গার থেকে বের করতে দেওয়া মোটেই সঠিক সিদ্ধান্ত হতে পারে না। অর্থাৎ, এক্ষেত্রে যে একটি অব্যবস্থাপনা বা অবহেলা রয়েছে তা স্পষ্ট।
বিমানের ম্যানেজমেন্ট এর দায় এড়াতে পারে না। এর আগেও আমরা দেখেছি, বিমানের সবচেয়ে ব্যয়বহুল ও অত্যাধুনিক উড়োজাহাজ ড্রিমলাইনার (বি-৭৮৭) চালানোর ক্ষমতা দেওয়া হয় এমন পাইলটকে, যার এ উড়োজাহাজ চালানোর অভিজ্ঞতা নেই। এরও আগে এক খবরে জানা যায়, বিমানের বোয়িং ৭৭৭-৩০০ উড়োজাহাজ বহরে এমন ৯ পাইলটের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ নিশ্চিত করতে তৎপর হয়ে উঠেছিল একটি সিন্ডেকেট, যারা এ উড়োজাহাজ চালনায় অনভিজ্ঞ। তাদের কেউ কেউ বারবার পরীক্ষা দিয়েও বিদেশি এয়ারলাইন্সে ক্যাপ্টেন হতে পারেননি।
এসব ঘটনায় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, বিমানে হচ্ছেটা কী? উড়োজাহাজের পাইলট ও টোম্যান নিয়োগ বা নির্বাচনের মতো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়ে এ হেলাফেলা কেন? যে কোনো যানবাহনের চালক নিয়োগের ক্ষেত্রে দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। তবে উড়োজাহাজের ক্ষেত্রে তা সবচেয়ে বেশি জরুরি। আমরা আশা করব, বিমানের অব্যবস্থাপনা ও অবহেলার বিষয়ে সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে দৃষ্টি দেওয়া হবে। প্রকৃত দক্ষ ও অভিজ্ঞদেরই উড়োজাহাজ পরিচালনাসংক্রান্ত বিভিন্ন পদে নিয়োগ দিতে হবে বিমান কর্তৃপক্ষকে। কারও অবহেলা ও খামখেয়ালিপনা উড়োজাহাজের ক্ষতির কারণ হলে তার বিরুদ্ধে বিমানের বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নিতে হবে। এসব ক্ষেত্রে কোনো সিন্ডিকেটের তৎপরতা বরদাশত করার সুযোগ নেই। কারণ এর সঙ্গে রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী সংস্থার ভাবমূর্তির প্রশ্ন জড়িত।