ইসরাইলের প্রতিষ্ঠান এনএসও গ্রুপ ইতোমধ্যেই বিশ্বের সবচেয়ে আধুনিক স্পাইওয়্যার নির্মাতা হিসাবে ‘কুখ্যাতি’ পেয়েছে। প্রতিষ্ঠানের ওপর এখন ঝুলছে বিতর্ক আর মামলার খড়্গ। মজার বিষয় হলো, ‘সফল’ এ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে স্রোতের গতিবেগ পালটে দিতে বড় ভূমিকা রেখেছিলেন এক সৌদি নারী।
এসব কিছুর শুরুটা হয়েছিল ওই সৌদি অধিকারকর্মীর আইফোনের ছোট একটি ‘গ্লিচ’ থেকে। ভুলটা করেছিল এনএসও’র স্পাইওয়্যারই। সৌদি অধিকারকর্মী লুজাইন আল-হাথলুলের আইফোনে একটি ভুয়া ছবি ভুলে রেখে গিয়েছিল এনএসও গ্রুপের স্পাইওয়্যার। সে ছবির সূত্র ধরেই ফোন হ্যাকিংয়ের প্রমাণ খুঁজে পেয়েছিলেন হাথলুল ও প্রাইভেসি গবেষকরা; প্রমাণ মিলেছিল হ্যাকিংয়ে এনএসও গ্রুপের সক্রিয় ভূমিকার।
যা ঘটেছিল : সৌদি আরবের সবচেয়ে সুপরিচিত অধিকারকর্মীদের একজন আল-হাথলুল, দেশের নারীদের গাড়ি চালানোর ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নিতে প্রতিবাদ-প্রচারণায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। জাতীয় নিরাপত্তা ক্ষতিগ্রস্ত করার অভিযোগে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত জেল খেটেছেন আল-হাথলুল।
জেল থেকে মুক্তির পরপরই গুগলের একটি মেইল পান আল-হাথলুল। সরকার সমর্থিত হ্যাকাররা তার জিমেইল অ্যাকাউন্ট হ্যাকিংয়ের চেষ্টা করছে বলে মেইলে সতর্ক করে দিয়েছিল প্রতিষ্ঠানটি। তারপর নিজের আইফোনটিও হয়তো হ্যাকিংয়ের শিকার হয়েছে এ আশঙ্কায় কানাডার গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিটিজেন ল্যাবের সঙ্গে যোগাযোগ করেন আল-হাথলুল। সিটিজেন ল্যাবের গবেষক বিল মার্কজাক ছয় মাস ধরে রেকর্ড ঘেঁটে অপ্রত্যাশিত এক আবিষ্কার করেন। নজরদারি সফটওয়্যারটির নিজস্ব ব্যবস্থায় এক ত্রুটির কারণে একটি ইমেজ ফাইলের কপি রয়ে গিয়েছিল ফোনে, লক্ষ্যবস্তুর মেসেজ চুরি করার পর নিজেকে মুছে দিতে পারেনি ওই ম্যালওয়্যার ফাইলটি। মার্কজাকের মতে, সাইবার হামলার পর রয়ে যাওয়া কম্পিউটার কোড থেকেই নজরদারি সফটওয়্যারটির সঙ্গে এনএসও গ্রুপের সরাসরি সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ মেলে। ‘এটা গেম চেঞ্জার ছিল,’ বলেন মার্কজাক। সিটিজেন ল্যাব এবং আল-হাথলুলের আবিষ্কারের ভিত্তিতেই ২০২১ সালের নভেম্বরে এনএসও গ্রপের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছে অ্যাপল।