Saturday, July 27, 2024
spot_img
Homeধর্মহৃৎপিণ্ডে রক্তপ্রবাহের আবিষ্কারক ইবনে নাফিস

হৃৎপিণ্ডে রক্তপ্রবাহের আবিষ্কারক ইবনে নাফিস

হৃদযন্ত্রে রক্ত সঞ্চালন তত্ত্ব আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে একটি মৌলিক ও যুগান্তকারী আবিষ্কার। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের সংজ্ঞা অনুযায়ী পালমনারি সঞ্চালন মানে হলো হৃদযন্ত্রের ডান প্রকোষ্ঠ থেকে শিরার মধ্য দিয়ে ফুসফুসে রক্ত চলাচল করা এবং ফুসফুসে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন গ্রহণ করার পর শিরার মধ্য দিয়ে হৃদযন্ত্রের বাম প্রকোষ্ঠে পুনরায় রক্ত ফিরে যাওয়া। হৃদযন্ত্রে রক্তপ্রবাহের এ আবিষ্কার হচ্ছে বিখ্যাত মুসলিম বিজ্ঞানী ইবনুল নাফিসের অমর কীর্তি। তাঁর পূর্ণ নাম আলাউদ্দিন আবুল হাসান আলী ইবনে আবিল হাজম ইবনুল নাফিস আল কোরাইশি আল মিসরি আশশাফি।

বিজ্ঞাপনসংক্ষেপে তিনি ‘ইবনুল নাফিস’ নামেই সর্বাধিক পরিচিত। মিসরের বামারিস্তান আল নুরী নামক একটি মেডিক্যাল কলেজ থেকে তিনি শিক্ষা লাভ করেন। আল নুরি হাসপাতাল তখন আল মানসুরিয়া হাসপাতাল নামে পরিচিত ছিল। (স্বর্ণযুগে মুসলিম বিজ্ঞানীদের আবিষ্কার, পৃ: ১৫২)

তবে এনসাইক্লোপিডিয়া অব ব্রিটেনিকার তথ্যমতে, তিনি প্রথম দামেস্কে পড়াশোনা করেন, পরবর্তী সময়ে মিসরের কায়রো নাসিরি হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করতে চলে যান।

চিকিৎসাবিজ্ঞান ও আইনশাস্ত্রে তাঁর অবদান অবিস্মরণীয়। ইবনুন নাফিস মানবদেহে রক্তসঞ্চালন পদ্ধতি, ফুসফুসের সঠিক গঠন পদ্ধতি, শ্বাসনালি, হৃিপণ্ড, শরীরের শিরা-উপশিরায় বায়ু ও রক্তের প্রবাহ ইত্যাদি সম্পর্কে বিশ্বের জ্ঞানভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করেন। তিনি মানবদেহে রক্ত চলাচল সম্পর্কে গ্যালেনের মতবাদ নাকচ করে দেন এবং এ সম্পর্কে নিজের মতবাদ সুস্পষ্টভাবে প্রকাশ করেছেন। (টিচার্স ডটগভডটবিডি)

এনসাইক্লোপিডিয়া অব ব্রিটেনিকার তথ্যমতে, ইবনুল নাফিস নামক এই আরব চিকিৎসক সর্বপ্রথম রক্তের পালমোনারি সঞ্চালন বিষয়ে সঠিক বর্ণনা দিয়েছেন। তবে তার এই অমূল্য তত্ত্ব বহু দিন মানুষের অজানা ছিল, এমনকি পশ্চিমারাও সম্ভবত এ বিষয়ে জ্ঞাত ছিল না। পরবর্তী সময়ে ২০ শতকে এটি জনসাধারণের সামনে আসে।

১৯২৪ সালে মিসরীয় চিকিৎসক ডা. মহিউদ্দিন আলতাবি জার্মানির আলবার্ট লুগউইগ বিশ্ববিদ্যালয়ে মেডিক্যাল ফ্যাকাল্টিতে চিকিৎসা বিজ্ঞানে আরবদের ইতিহাস নিয়ে থিসিস করছিলেন। এ সময় তিনি বার্লিনে প্রুশীয় স্টেট লাইব্রেরিতে ‘শরহে তাশরিহ কিতাব আল-কানুন ফিল তিব্বি ইবনে সিনা। ’ (কমেন্টারি অন দি এনাটমি অব ক্যানন অব আবিসিন) শিরোনামে ৬২২৪৩ নম্বর একটি স্ক্রিপ্ট উদ্ধার করেন। পাণ্ডুলিপি ছিল ইবনুল নাফিসের লেখা। ডা. মহিউদ্দিনের থিসিস বিজ্ঞান বিষয়ক কোনো পত্রিকায় প্রকাশিত না হওয়ায় অথবা তিনি নিজের কোনো বই প্রকাশ না করায় ইবনুল নাফিসের আবিষ্কার সম্পর্কে বিশ্ববাসী জানতে পারেনি। তবে তিনি তাঁর সন্দর্ভে মন্তব্য করেন যে ইবনুল নাফিসই হলেন হৃদযন্ত্রে রক্ত সঞ্চালনের প্রকৃত আবিষ্কারক। পরবর্তী সময়ে ১৯৫১ সালে ডাক্তার আব্দুল করিম শিহাদি প্যারিসে আরেকটি সন্দর্ভে অভিন্ন মতামত প্রদান করেন। ডা. মহিউদ্দিন ও ডা. শিহাদির মতো পল গালিউনজি এবং সালমান কাতায়া ইবনুল নাফিসের পাণ্ডুলিপি নিয়ে ব্যাপক গবেষণা করেন। তাঁরাও একই মত পোষণ করেন। কিন্তু তাঁদের মতামতের কোনো ক্রিয়া-প্রতিক্রিয় হয়নি। (স্বর্ণযুগে মুসলিম বিজ্ঞানীদের আবিষ্কার, পৃ: ১৫৩)

এভাবেই মুসলিম মনীষীরা জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রতিটি অধ্যায়ে ভূমিকা রেখে গেছেন, যা আলোচনায় না থাকার কারণে নতুন প্রজন্মের অজানা রয়ে যাচ্ছে। 

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments