যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার ইস্টার্ন ক্যাথলিক ধর্মযাজক ছিলেন ফাদার হিলারিয়ান হেইগি। সম্প্রতি এক ব্লগ পোস্টে তিনি ইসলাম ধর্ম নিয়ে নিজের আগ্রহ ও দীর্ঘ যাত্রার কথা জানান। মুসলিম হওয়ার পর নিজের নাম পরিবর্তন করে রাখেন সায়িদ আবদুল লতিফ। মার্জিত রুচিবোধ ও বিনয়ী ব্যক্তি হিসেবে সমাদৃত হেইগির নতুন পথচলাকে স্বাগত জানাচ্ছে অনেকে। গত শনিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের একটি পেইজে তিনি এসব কথা জানান। নতুন যাত্রা সম্পর্কে মিডিয়াম ডটকম-এ লেখা তাঁর ব্লগটি পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো—
‘ইসলামের প্রতি দীর্ঘ আগ্রহের পর আমি মুসলিম হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমার ইসলাম গ্রহণ মূলত আবারও ইসলামে ফিরে আসার মতো। যেন আমি নিজ বাড়িতে ফিরে এলাম। তাই সাধারণত নওমুসলিমরা এটাকে ‘ধর্মান্তর’ বলে না; বরং তারা আমাদের আদিবিশ্বাস ‘ইসলামে ফেরার’ কথা বলে। ফিরে আসার এক দীর্ঘ পরিক্রমার কথাই তারা বলে। তা হলো ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ।’
পবিত্র কোরআনের আয়াত উল্লেখ করে তিনি লিখেছেন, ‘জন্মের আগে আমরা একমাত্র আল্লাহরই উপাসনা করেছি এবং তাঁর কাছে আত্মসমর্পণ করেছি। তাই এটি আমার কাছে বাড়ি ফেরার মতো। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘স্মরণ করুন, যখন আপনার রব আদম সন্তানদের পৃষ্ঠদেশ থেকে তাদের বংশধরদের বের করেন এবং তাদের নিজেদের সম্পর্কে সাক্ষ্য নেন, তিনি বলেছিলেন, আমি কি তোমার রব নই? তারা বলেছিল, ‘হ্যাঁ, অবশ্যই, আমরা সাক্ষী দিলাম। তা এ জন্য যেন তোমরা কিয়ামতের দিন না বলো, ‘আমরা তো এ বিষয়ে জানতাম না।’ (সুরা আরাফ, আয়াত : ১৭২)
নতুন পথ চলার অনুভূতি জানিয়ে তিনি লিখেছেন, ‘ক্যালিফোর্নিয়া থেকে পূর্ব দিকের পথে আমার যাত্রা শুরুর পর প্রায় দেড় মাস হয়ে গেছে। তবু তা আমার কাছে জীবনের অন্যান্য অংশের মতো মনে হচ্ছে। কয়েক দশক ধরে ইসলামের প্রতি আমি আকৃষ্ট হওয়ার পর অবশেষে আমি তা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। যা-ই হোক, একটি ক্যাথলিক মঠে বাস করায় আমার শারীরিক পদক্ষেপের প্রয়োজন ছিল। সাধারণত কেউ প্রকাশ্যে ধর্মযাজন ও সন্ন্যাসী এবং ব্যক্তিগতভাবে মুসলিম হতে পারে না। অবশেষে ক্রমবর্ধমান ব্যক্তিগত চিন্তার ফলে বছরের একটি ভালো অংশ হওয়ার জন্য এমনটি ঘটেছে। এখন আমাকে অজানা পথে পা ফেলতে হয়েছে। তাতে নিরাপত্তার কিছু নেই। শুধু আল্লাহর ওপর ভরসা রাখুন।’
তিনি আরো লিখেন, ‘একজন মুসলিম হিসেবে নতুন জীবন শুরু করতে পূর্ব দিকে ফিরে যাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমার কাছে তা বাড়ি ফেরার মতো। অবশ্য প্রায় বিশ বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাপালেশিয়ার জং বেল্টের বিশ্ববিদ্যালয় শহরের একটি ইসলামিক সেন্টারে আমার ইসলামের যাত্রা শুরু হয়েছিল। টিএস এলিয়টের চারটি চরণ মনে পড়ল : ‘এই প্রেমের অঙ্কন ও এই আহ্বানের কণ্ঠ দিয়ে আমরা অনুসন্ধান ছেড়ে দেব না। এবং আমাদের সব অন্বেষণ শেষ হলেও যেখান থেকে শুরু করেছি আমাদের সেখানে পৌঁছাতে হবে। এবং প্রথমবারের জন্য জায়গাটি সম্পর্কে জানব।’
‘এখন পর্যন্ত মুসলিম সম্প্রদায়ের কাছ থেকে যে উষ্ণতা ও আতিথেয়তা দেখেছি ও পেয়েছি তা অসাধারণ। এমন আতিথেয়তার অভিজ্ঞতা আমি কখনো পাইনি। অবশ্য আমার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। কারণ অন্ধকারের ঝাঁপ সব সময় কিছুটা উদ্বেগ তৈরি করে।’
ইসলামবিষয়ক গভীর জ্ঞানার্জনের আশা প্রকাশ করে তিনি লিখেন, ‘উম্মাহের মধ্যে শিশুর প্রথম পা রাখার মতো আমার পথচলা শুরু হলো। বাড়ি ছাড়াই অল্প টাকা, পুরনো ফোর্ড, একগুচ্ছ বই ও পিঠের কাপড় নিয়ে পূর্ব দিকে আমার নতুন পথে চলা শুরু হয়। এতেই আমি প্রশান্তি ও আনন্দ অনুভব করি। ইসলামের সঙ্গে দুই দশকের সম্পর্ক আমাকে নিজ ঘরে এসেছে। এখন ঈমানের গভীরে প্রবেশের কাজ শুরু করব। দ্বিনের গভীর জ্ঞান ও উম্মাহর প্রতি ভালোবাসা এবং রাসুল (সা.)-এর প্রতি ভালোবাসাই আমার কাজ। এটিই মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে ফেরার অন্তহীন যাত্রার প্রথম ধাপ। সুবহানাল্লাহ!’
সূত্র : মিডল ইস্ট মনিটর ও আলজাজিরা