Monday, March 27, 2023
spot_img
Homeআন্তর্জাতিকহিন্দুত্ববাদীরা বিশ্বে ছড়াচ্ছে সহিংসতা

হিন্দুত্ববাদীরা বিশ্বে ছড়াচ্ছে সহিংসতা

২০১৪ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে নরেন্দ্র মোদি হিন্দুত্ববাদের প্রসারের পাশাপাশি একটি অত্যন্ত বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইন সংস্কারের তত্ত¡াবধান করেছেন, অধিকৃত জম্মু-কাশ্মীরকে সাংবিধানিকভাবে ভারতে অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিতে স্বায়ত্তশাসন বাতিল করেছেন, যা দেশটির মুসলিমদের প্রতি বৈষম্যমূলক। তিনি ১৯৯২ সালে হিন্দু চরমপন্থীদের ভেঙে ফেলা ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদের জায়গায় রাম মন্দির নির্মাণ করেছেন এবং ক্রমাগত তার বিরোধী দলের নেতা-কর্মী ও সমালোচকদের নাজেহাল করে চলেছেন। হিন্দুত্ববাদের প্রতিশ্রæতি পূরণে মোদির সাফল্য বিদেশের মাটিতেও তার প্রবাসী সমর্থকদের সদম্ভে নৈরাজ্যবাদী আচরণে অনুপ্রাণিত করেছে, যা এখন একটি বৈশ্বিক সমস্যায় পরিণত হয়েছে।

যুক্তরাজের লিসেস্টারের সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো ইঙ্গিত দেয় যে, মোদি এবং তার অনুসারীদের হিন্দু জাতীয়তাবাদ প্রচারের স্বপ্ন, তাদের রাজনৈতিক দর্শন নতুন উপায়ে ভারত থেকে দূরে অন্যান্য দেশের রাস্তায় হিংস্রভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে। মে মাসে এক মুসলিম কিশোরের ওপর হিন্দুদের প্ররোচিত সহিংস হামলার পর তাকে লিসেস্টারে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছিল। আগস্টে একটি ক্রিকেট ম্যাচে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের জয়ের পর একটি হিন্দু দল একজন শিখ ব্যক্তিকে আক্রমণের আগে ‘পাকিস্তানের মৃত্যু হোক’ সেøাগান দিয়ে রাস্তায় পদযাত্রা করেছিল। ভারত-পাকিস্তান দুই দেশের মধ্যে দ্বিতীয় ক্রিকেট ম্যাচে ভারত হেরে যাওয়ার পর একই ধরনের খবর পাওয়া যায়। গত ১৭ সেপ্টেম্বর তরুণ হিন্দুরা ‘জয় শ্রী রাম; সেøাগান দিয়ে লিসেস্টারের রাস্তায় মিছিল করে, যা এখন হিন্দু জাতীয়তাবাদের যুদ্ধের জন্য উস্কানি দিচ্ছে এবং মুসলিমদের সহিংসভাবে আক্রমণ করছে।

যুক্তরাজ্যে হিন্দু জাতীয়তাবাদীদের এবং দেশটির কনজারভেটিভ বা ডানপন্থীদের পারস্পারিক সহযোগিতার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। ২০১৬ সালে লন্ডনের মেয়র নির্বাচনে কনজারভেটিভ প্রার্থী জ্যাক গোল্ডস্মিথ তার মুসলিম প্রতিপক্ষ লেবার পার্টির সাদিক খানকে নামানোর জন্য হিন্দু এবং শিখদের কাছে মুসলিমবিরোধী প্রচারমূলক লিফলেট পাঠান। ২০১৯ সালের দেশটির সাধারণ নির্বাচনের প্রাক্কালে খবর ছিল যে, সেখানকার হিন্দু জাতীয়তাবাদী দলগুলো রক্ষণশীল প্রার্থীদের পক্ষে সক্রিয়ভাবে প্রচারণা চালাচ্ছে, যেহেতু লেবার পার্টির তৎকালীন নেতা জেরেমি করবিন ভারত-শাসিত কাশ্মীরে মোদি সরকারের ২০১৯ সালের নিপীড়নের সমালোচনা করেছিলেন। এদের মধ্যে অনেকেরই বিজেপির সাথে সরাসরি যোগসূত্র রয়েছে এবং তাদের কাজগুলো বিদেশী নির্বাচনকে প্রভাবিত করার প্রচেষ্টাকে প্রতিনিধিত্ব করে।

যুক্তরাজ্যের মতো হিন্দু জাতীয়তাবাদীরা যুক্তরাষ্ট্রেও ডানপন্থী ইসলামবিদ্বেষী প্রার্থীদের জন্য সক্রিয়ভাবে প্রচারণা চালিয়েছে। এটা ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় স্পষ্ট বোঝা গিয়েছিল, যখন হিন্দু দলগুলো রিপাবলিকান প্রার্থীদের জন্য হিন্দু আমেরিকানদের একত্রিত করার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়েছিল। ২০১৫ সালে মোদির ঘনিষ্ঠ শিকাগো-ভিত্তিক ব্যবসায়ী শালভ কুমার ভারতীয় আমেরিকান দালাল গোষ্ঠী ‘রিপাবলিকান হিন্দু কোয়ালিশন (আরএওইচসি)’ দ্বারা চালু গঠন করেন, যার সদস্যরা প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রচারণায় অর্থ ঢেলেছিল এবং তাকে সমর্থন করেছিল। ফলে, ভোটের আগে গোষ্ঠীর সাথে একটি ইভেন্টে, ট্রাম্প ঘোষণা করেন যে, ‘হোয়াইট হাউসে ভারতীয় ও হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন সত্যিকারের বন্ধু থাকবে’।

ট্রাম্প মোদিকে একজন ‘মহান মানুষ’ বলে প্রশংসা করেন এবং হিন্দু আমেরিকানদের প্ররোচিত করার জন্য একটি নির্বাচনী ভিডিও প্রকাশ করেন। যুক্তরাষ্ট্রে হিন্দু উগপন্থীরা এখন নির্বাচনী প্রচারণা থেকে বেরিয়ে রাস্তায় শক্তি প্রদর্শনের দিকে চলে গেছে। এ বছরের আগস্টে মোদি এবং উত্তর প্রদেশের বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের পোস্টার সজ্জিত কতগুলো বুলডোজার নিউ জার্সির এডিসনে ভারতীয় স্বাধীনতা দিবসের প্যারেডে উপস্থিত করা হয় মূলত ভারতে স্থানীয় সরকারগুলোর হাতে মুসলিম আন্দোলনকর্মীদের বাড়িঘর ভেঙে ফেলার পদক্ষেপ উদযাপন করতে।

কানাডায়ও হিন্দু জাতীয়তাবাদীরা মুসলিম ও সংখ্যালঘু বিদ্বেষের ঢেউ তুলেছে। গত বছর ডিসেম্বরে একটি শিখ স্কুলের বাইরে শিখবিরোধী সেøাগান ও হিন্দু স্বস্তিকা দেখা যায়। মোদি সরকারের সমালোচনা করার জেরে প্রবাসী হিন্দুত্ববাদ সমর্থকদের দ্বারা কানাডিয়ান শিক্ষাবিদরা হয়রানির শিকার হন এবং মৃত্যু ও ধর্ষণের হুমকির সম্মুখীন হন। জুনে কানাডিয়ান হিন্দু জাতীয়তাবাদী রন ব্যানার্জি প্রকাশ্যে মুসলিম ও শিখদের গণহত্যার আহŸান জানান। একটি ইউটিউব চ্যানেলে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘মোদি যা করছেন তা অসাধারণ। আমি ভারতের প্রজাতন্ত্রে মুসলিম ও শিখদের হত্যাকে সমর্থন করি কারণ তারা মরার যোগ্য।’

ট্রাম্প থেকে প্রাক্তন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এবং ইসরাইলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু থেকে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জেইর বলসোনারো পর্যন্ত একাধিক উগপন্থী রাজনীতিবিদ নিজেদেরকে মোদির বন্ধু হিসাবে উপস্থাপন করেছেন। এমনকি, সেই সমস্ত পশ্চিমা নেতা, যাদের বিশেষ কোনো ডানপন্থী এজেন্ডা নেই, তারাও মোদি সরকারের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ন্যাক্কারজনক রেকর্ডের থেকে চোখ ফিরিয়ে নিয়ে ভারতের সাথে তাদের অর্থনৈতিক ও কৌশলগত সম্পর্ক স্থাপন এবং বিকাশে আগ্রহী। মুসলিমদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ এবং ঘৃণামূলক প্রচারণা এখন ভারতের জনসাধারণের এবং পররাষ্ট্রনীতির বিষয় প্রতীয়মান হচ্ছে। তাদের আন্দোলন আন্তর্জাতিক ইসুতে রূপ নিয়েছে এবং অন্যান্য দেশেও ক্রমবর্ধমানভাবে সহিংতা ছড়াচ্ছে। এটি এখন বিশে^র সর্বত্র গণতান্ত্রিক নীতি, সাম্য ও মানবাধিকারের প্রতি হুমকিতে পরিণত হয়েছে। সূত্র : আলজাজিরা।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments