Tuesday, March 28, 2023
spot_img

হারাণ

মা তাকে পেটে ধরেছিল বটে,
তবে ধরে রাখতে পারেনি বুকে! 
জন্ম হয়েছিল তার স্কুলের এক ঘরে।
রাতের আঁধারে ফেলে রেখে,
চলে যায় মা তার সরে।

যে মানুষটি তাকে বুকে তুলেছিলেন,
তিনি আমার নিজের এক কাকা।
কাকা বললেন কুড়িয়ে পেয়েছি স্কুলের ঘরে,
এখন দেখি সমাজ কী করে!

এই ফেলে রেখে যাওয়া ছেলেটির একটি নাম তো চাই!
আমার মা বললেন, কোনো এক শরণার্থীর ছেলে,
হিন্দু নাম রাখলে গ্রামের মানুষ কী বলবে? 

কাকা বললেন, লোকে তো কত কিছু বলবে,
তাই বলে নাম ছাড়া কি চলবে?
আচ্ছা ঠিক আছে ভাই, 
তা ছেলেটির নাম হারাণ রাখলে কেমন হয়?
হারাণ একাত্তরের ফেলে রেখে যাওয়া এক প্রতিবন্ধী।
তাকে নিয়ে যুদ্ধের নয় মাস গ্রামে চলেছে সন্ধি।
যুদ্ধ শেষে হারাণকে আমার এক দাদার কাছে রাখা হলো। 
দাদা বাজারের মসজিদের মুয়াজ্জিম,
সময়মতো আজান দেন আর নামাজ শেষে
রেস্টুরেন্টে বসেন।
হারাণ না পারে ঠিকমতো কথা বলতে, 
না পারে হাঁটতে।
সকাল বিকাল সন্ধ্যায় চলাফেরা করে হারাণ হামাগুঁড়ি দিয়ে,
বাজারের এপাশ থেকে ওপাশে।

হঠাৎ একদিন শোনা গেল হারাণ হারিয়ে গেছে। 
কোথায় তা কেউ আজও জানে না!

চলছে যুদ্ধ ইউক্রেনে,
সব কিছু ফেলে রেখে অনেকে আশ্রিত হচ্ছে বিশ্বের নানা দেশে। 
হারাণের মতো কেউ হারিয়ে গেলে তাতে কারই বা কী যায় আসে! 
আকাশজুড়ে আসছে আঁধার, সূর্য যাবে সরে! 
হারাণের মতো শত শত প্রতিবন্ধী রয়েছে বিশ্ব ভরে।

তাদেরকে খুঁজে পেলে হবো আমি ধন্য,
আমার এ ছোট্ট কবিতা লিখা গোটা বিশ্বের জন্য।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments