Saturday, July 27, 2024
spot_img
Homeধর্মহাজার বছর ধরে পঠিত তাফসির গ্রন্থের রচয়িতা যিনি

হাজার বছর ধরে পঠিত তাফসির গ্রন্থের রচয়িতা যিনি

আবু জাফর মুহাম্মাদ ইবনে জারির তাবারি (রহ.) (২২৪/২২৫ হিজরি, ৮৩৮/৮৩৯ খ্রিস্টাব্দে) অষ্টম আব্বাসীয় খলিফা মুতাসিম বিল্লাহর শাসনামলে ইরানের কাস্পিয়ান সাগরের তীরবর্তী পাহাড়ঘেরা তাবারিস্তানের আমূল শহরে এক অভিজাত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বাল্যকাল থেকেই তাঁর জ্ঞানপিপাসা অত্যন্ত প্রবল ছিল। সাত বছর বয়সে তিনি পবিত্র কোরআন মুখস্থ করেন। ফারসি ভাষা ও সাহিত্য এবং ইরানের ইতিহাস তিনি ছেলেবেলায় নিজ গৃহে অবস্থানকালেই অধ্যয়ন করেন।

নিজ শহরে প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণের পর মাত্র ১২ বছর বয়স থেকেই তিনি ইসলামী শিক্ষা কেন্দ্রগুলোতে যাতায়াত করতে থাকেন। প্রথমত, রায় ও তার নিকটস্থ শহরে সফর করেন। বাগদাদে তিনি আরবি ভাষা ও সাহিত্য, ইতিহাস, দর্শন, তর্কবিদ্যা ও ভূতত্ত্বে গভীর জ্ঞান অর্জন করেন। তিনি মক্কায়  কয়েক বছর অবস্থান করে পবিত্র কোরআনের বিশদ তাফসির ও হাদিস অধ্যয়ন করেন।

তিনি আরব ও মুসলিম বিশ্বের মূল্যবান ঐতিহাসিক তথ্যাদি সংগ্রহে আত্মনিয়োগ করেন। পরবর্তী সময় অধ্যাপনা ও গবেষণামূলক গ্রন্থ রচনায় জীবন অতিবাহিত করেন।  ইসলামের ইতিহাসে আবু জাফর ইবনে জারির তাবারি শ্রেষ্ঠ মুফাসসিরুল কোরআন ও ইতিহাসবেত্তা ছিলেন।

এক কথায় বলতে গেলে, তাফসির আর ইতিহাস প্রণয়নেই তাঁর সারা জীবন অতিবাহিত হয়েছে।

তাঁর অমর কীর্তি ৩০ খণ্ডে প্রকাশিত কোরআনের তাফসির ‘আল জামিআল বয়ান ফি তাফসির আল কোরআন’। এটি ১৩৩১ হিজরিতে মিসরের রাজধানী কায়রো থেকে ৩০ খণ্ডে প্রকাশিত হয়।১৯৮৮ খ্রিস্টাব্দে গ্রেট ব্রিটেনে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস তাফসিরে তাবারির প্রথম খণ্ডের ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশ করেন। প্রকাশনা উৎসবে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে উদ্বোধনী বক্তৃতা দেন।

তাবারি (রহ.)-এর বিখ্যাত ইতিহাস গ্রন্থের নাম ‘আখবারুল রুসুল ওয়াল মুলুক’ অর্থাৎ নবী ও রাজাদের ইতিহাস।

এ বইটি ইংরেজিতে ‘হিস্ট্রি অব দ্য প্রফেটস অ্যান্ড কিংস’ বলে পরিচিত আবার ‘তারিখে তাবারি’ নামেও পরিচিত। বর্তমানে ইতিহাস গ্রন্থটি ১৫ খণ্ডে প্রকাশিত হয়। মূলত তিনি ইতিহাস রচনা করেছিলেন ১৫০ খণ্ডে। ছাত্ররা তা অধ্যয়নে অক্ষমতা প্রকাশ করায় তিনি চিন্তিত হন। অতঃপর ছাত্রদের অধ্যয়নের সুবিধার্থে মাত্র ১৫ খণ্ডে তার সংক্ষিপ্ত সংস্করণ রচনা করেন। ১৫ খণ্ডে প্রকাশিত মানবজাতির এই ইতিহাস গ্রন্থে তিনি মানবেতিহাসকে পবিত্র  কোরআনে বর্ণিত সৃষ্টির ধারাবাহিকতার সঙ্গে মিলিয়ে উপস্থাপন করেছেন।সাধনা ও অধ্যবসায় তিনি অনন্য নজির স্থাপন করেন। তিনি একাধারে দীর্ঘ ৪০ বছর পর্যন্ত দৈনিক ৪০ পাতা করে মৌলিক রচনায় নিজেকে নিযুক্ত রেখেছিলেন। অর্থাৎ লাগাতার ৪০ বছর দৈনিক ৮০ পৃষ্ঠা করে লিখেছেন। কিরায়াত (কোরআন পাঠ পদ্ধতি), তাফসির, ফিকহ, ইতিহাস, কবিতা, চিকিৎসাবিজ্ঞান ইত্যাদি বিষয়ে তিনি অনেক মৌলিক গ্রন্থ রচনা করেন। পাশ্চাত্যের পণ্ডিতরা আজও তাঁর গ্রন্থের ঐতিহাসিক তথ্য সংগ্রহ করেন এবং তাত্ত্বিক সমালোচনামূলক গবেষণার জন্য ব্যবহার করে থাকেন।

৩১০ হিজরি মোতাবেক ৯২৩ খ্রিস্টাব্দে অষ্টাদশ আব্বাসীয় খলিফা আল-মুকতাদির বিল্লাহর আমলে মুসলিম জাহানের এই অনন্যসাধারণ প্রতিভাশালী ইমাম বাগদাদে ইন্তেকাল করেন।

লেখক : শিক্ষক ও অনুবাদক

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments