এত সড়ক দুর্ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না
করোনা মহামারির কারণে গত দু’বছর ঈদুল ফিতর কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় উদযাপন করতে পারেনি দেশবাসী। ওই দুই ঈদে স্বল্পসংখ্যক মানুষ ঢাকা ছেড়েছিলেন। এবার যেন সেই ঘাটতি পূরণে তৎপর হয়েছেন বিপুলসংখ্যক রাজধানীবাসী। সবচেয়ে বড় খবর হলো, এবারের ঈদযাত্রায় দুর্ভোগ বা ভোগান্তির মাত্রা ছিল নিতান্তই কম। বলা চলে, রাজধানীবাসী এক নির্মল আনন্দযাত্রায় পৌঁছেছেন যার যার ঠিকানায়। দেশের সর্বত্র ঈদ উদযাপিত হয়েছে মহাধুমধামে। কিন্তু হরিষে বিষাদ হলো, বেপরোয়া যান চলাচল ও অন্যান্য কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে অনেক বেশি এবং তাতে হতাহত হয়েছেন কয়েকশ’ মানুষ। রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের হিসাবমতে, গত ২৫ এপ্রিল থেকে ৫ মে পর্যন্ত সারা দেশে ১৭৮টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে এবং এতে নিহত হয়েছেন মোট ২৪৯ জন। নিহতদের মধ্যে মোটরসাইকেল আরোহী ছিলেন ৯৭ জন, যা মোট মৃত্যুর ৩৮ দশমিক ৫৯ শতাংশ। এ হিসাবের বাইরে গতকালও নাটোরে দুটি বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে ৭ জন নিহত হয়েছেন। এবার ঈদে শুধু মহাসড়কে নয়, রাজধানীতেও বেশ কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটেছে।
আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছি, বেপরোয়া গতিতে যানবাহন চালানো এক স্বাভাবিক নিয়মে পরিণত হয়েছে। বিশেষত তরুণ ও যুবক শ্রেণি যখন মোটরসাইকেল চালায়, তখন তাদের মধ্যে এক বিপজ্জনক বেপরোয়াপনা লক্ষ করা যায়। দ্রুতগতিতে এঁকেবেঁকে মোটরসাইকেল চালানো একশ্রেণির যুবকের নেশায় পরিণত হয়েছে যেন। এ প্রবণতা থেকে তাদের বের করে আনতে হবে। বস্তুত এখন আইন করার প্রয়োজন পড়েছে যে, নির্দিষ্ট গতিসীমার অতিরিক্ত গতিতে কেউ মোটরসাইকেল চালাতে পারবে না। গতি বেঁধে দিয়ে এবং গতি পরিমাপক যন্ত্র ব্যবহার করে চালকদের ওই নির্দিষ্ট গতি মেনে চলতে বাধ্য করতে হবে। হেলমেট পরিধান ও স্বল্পগতিতে চালানো-এ দুই ব্যবস্থা হতে পারে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা থেকে মুক্ত থাকার উপায়। যুবসমাজকে বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল চালনা থেকে বিরত রাখার লক্ষ্যে প্রচারাভিযানও চালানো যেতে পারে।
সড়ক দুর্ঘটনার কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে বিশেষজ্ঞদের পক্ষ থেকে নানা ধরনের পরামর্শ ও সুপারিশ প্রদান করা হলেও সেগুলো যে অরণ্যে রোদনে পর্যবসিত হচ্ছে, সড়ক-মহাসড়কে প্রতিদিন ঘটা সড়ক দুর্ঘটনাগুলো এর বড় প্রমাণ। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে আইনের যথাযথ প্রয়োগ, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দক্ষ চালক এবং সড়কে চলাচল উপযোগী ভালো মানের যানবাহন খুবই প্রয়োজন। তবে সবচেয়ে জরুরি হলো, যানবাহনের চালক ও জনসাধারণের সচেতনতা।