Wednesday, October 4, 2023
spot_img
Homeধর্মহজের চলমান সংকট নিরসনে করণীয়

হজের চলমান সংকট নিরসনে করণীয়

চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ২৭ জুন ২০২৩ (৯ জিলহজ ১৪৪৪) মক্কা নগরীতে পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের দ্বিপক্ষীয় হজ চুক্তি অনুযায়ী, ২০২৩ সালে বাংলাদেশ থেকে মোট এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজে যেতে পারবেন। তাঁদের মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১৫ হাজার এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় এক লাখ ১২ হাজার ১৯৮ ব্যক্তি হজে যেতে পারবেন। অন্যদিকে এবার বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যয়বহুল হজ প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। এতে অনেকের পক্ষে হজ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। শেষ অবধি হজের নির্ধারিত কোটা পূরণ হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। হজের প্রাক-নিবন্ধনের চিত্র দেখে এই সন্দেহ আরো ঘনীভূত হচ্ছে। একাধিকবার প্রাক-নিবন্ধনের মেয়াদ বাড়ানো হলেও আশানুরূপ ফল না মেলার তথ্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এ অবস্থায় সংকট উত্তরণে কয়েকটি প্রস্তাব তুলে ধরা হলো :

বিমান কর্তৃপক্ষের প্রতি অসন্তোষ : হজের খরচ বৃদ্ধির গুরুত্বপূর্ণ কারণ হিসেবে অনেকে অস্বাভাবিক বিমানভাড়াকে দায়ী করছে। এভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস নিজেদের লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেখানোর জন্য প্রতিবছর হজযাত্রার বিমানভাড়া বাড়ায়। তাদের যুক্তি হলো, হজযাত্রীদের সৌদি আরব পৌঁছানোর পর ফাঁকা ফ্লাইট নিয়ে দেশে আসে। তাই তারা অতিরিক্ত ভাড়া দাবি করে।

কিন্তু সাধারণ মানুষ এটা বোঝে যে ফ্লাইট ফাঁকা এলে পরিচালনার খরচ অনেক কমে যায়, ট্যাক্সও লাগে না। তাই ভাড়া বাড়নো যুক্তিযুক্ত নয়। আমরা বাংলাদেশ এয়ারলাইনসকে ভাড়া যৌক্তিক করার আহবান জানাই। পাশাপাশি নিজেদের লোকসান পুষিয়ে নিতে ‘হজ মৌসুম’ পলিসি থেকে বের হয়ে আসার আহবান জানাই।

হজের জন্য সরকারি ভর্তুকি : বাংলাদেশ একটি ধর্মনিরপেক্ষ দেশ হলেও এখানে ধর্মীয় সম্প্রীতির ঐতিহাসিক নজির আছে। আর সব ধর্মের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় কর্মকাণ্ডে রাষ্ট্রীয়ভাবে সহযোগিতা করার বহু নজির আছে। তাই হজের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজে সরকার চাইলে ভর্তুকির ব্যবস্থা করতে পারে। একাধিক দেশে এর দৃষ্টান্ত দেখা যায়।

ভারতীয় গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, দেশটির মিনিস্ট্রি অব মাইনরিটি অ্যাফেয়ার্সের অধীনে হজ করলে বেসরকারি প্যাকেজের তুলনায় দেড় থেকে দুই লাখ রুপি কম খরচ হয়। ইন্দোনেশিয়া সরকারের হজ ফান্ড ম্যানেজমেন্ট এজেন্সি থেকেও ভর্তুকি দেওয়া হয়। বাংলাদেশ সরকার পবিত্র হজের ক্ষেত্রে কিছু ভর্তুকি দিতে পারে। এই ভর্তুকির পরিমাণ যে খুব বেশি হবে, তা নয়। মানুষের আর্থিক সক্ষমতা বিবেচনায় ভর্তুকি দিয়ে যৌক্তিক পর্যায়ে প্যাকেজ নির্ধারণ করা হলে হজ পালনে ইচ্ছুক অনেকে উপকৃত হবেন।

‘থার্ড ক্যারিয়ার’ একটি উত্তম বিকল্প : সব দেশে একাধিক বিমান সংস্থা প্রতিযোগিতামূলক দামে টিকিট বিক্রি করে হজযাত্রী পরিবহন করলেও বাংলাদেশে তা সম্ভব হয় না। বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের মধ্যে স্বাক্ষরিত হজ চুক্তি অনুযায়ী, ২০১২ সাল থেকে বিমান বাংলাদেশ ও সৌদিয়া এয়ারলাইনস হজযাত্রী পরিবহন করছে। এর পর থেকেই প্রতিষ্ঠান দুটি ভাড়ার ক্ষেত্রে একচেটিয়া সুবিধা ভোগ করে আসছে। অন্য বিমান সংস্থা বা থার্ড ক্যারিয়ারের অনুমোদন না থাকায় একদিকে যাত্রীদের চড়া দামে বিমান টিকিট সংগ্রহ করতে হয়, অন্যদিকে পরিবহনসংকটে হজের সময় বারবার বিমানের শিডিউল বিপর্যয় ঘটে।

আগে বাংলাদেশ বিমান ও সৌদিয়াসহ অন্য এয়ারলাইনস থার্ড ক্যারিয়ার (অন্য দেশ হয়ে সৌদি আরব যায়, এমন এয়ারলাইনস) হিসেবে হজযাত্রী পরিবহন করত। ফলে হজযাত্রী পরিবহনে সংকট হতো না। কিন্তু ২০১২ সাল থেকে থার্ড ক্যারিয়ার বন্ধ করে দেয় সরকার। তবে ২০২২ সাল থেকে বাংলাদেশ থেকে হজযাত্রী পরিবহনে নতুন ক্যারিয়ার হিসেবে অনুমোদন পেয়েছে সৌদি আরবের এয়ারলাইনস ফ্লাইনাস। আমরা মনে করি, আরো অনেক ‘থার্ড ক্যারিয়ার’ সংযুক্ত করে বিমানের টিকিটের ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা তৈরি করা দরকার। এতে বিমানভাড়া সহনীয় পর্যায়ে চলে আসবে।

জাহাজে হজ : প্রাচীন আমলে জাহাজে করেই বাংলাদেশ থেকে হজে যাওয়া হতো। ইদানীং জাহাজে করে হজে যাওয়ার কথা আলোচিত হচ্ছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে হজযাত্রীদের জন্য সাশ্রয়ী খরচে ২০২৪ সাল থেকে ৩২ তলাবিশিষ্ট জাহাজ চলাচল শুরু করার আশা ব্যক্ত করেছে দেশের জাহাজ নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্স লিমিটেড।

আমরা মনে করি, সরকারের উচিত দেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতা বিবেচনায় মানুষের হজের খরচ যৌক্তিক পর্যায়ে রাখা। হজে যাওয়া শুধু আকাশপথে সীমাবদ্ধ না রেখে নৌ ও স্থল পথে সাশ্রয়ে কিভাবে যাওয়া যায়, তা নিয়ে এখনই ভাবা উচিত।

সৌদি আরবে হজের খরচ কমাতে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ : হজের সময় পাঁচ দিন ধরে মিনা, আরাফাহ ও মুজদালিফায় হজযাত্রীদের বিভিন্ন পরিষেবা দেওয়া হয়। এর মধ্যে আছে তাঁবুর ব্যবস্থা করা, তাঁবুতে ম্যাট্রেস, বিছানা, চাদর, বালিশ, কম্বল, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র ও প্রতিদিনের খাবার সরবরাহ ইত্যাদি। এ বছর এই খাতের খরচ (প্রতি রিয়াল ২৮.৩৯ টাকা ধরে) এক লাখ ৬০ হাজার ৬৩০ টাকা।

আমরা মনে করি, পাঁচ দিনব্যাপী হজ কার্যক্রমে তাঁবু, বাসভাড়াসহ সৌদি আরবে হজের আনুষঙ্গিক খরচ কমিয়ে আনা দরকার। হজ ও ওমরাহ দ্বারা সৌদি সরকার প্রতিবছর হাজার হাজার কোটি টাকা আয় করছে। তাই পাঁচ দিনব্যাপী হজ কার্যক্রমে ব্যয় কমাতে তাদের অজুহাত কাম্য নয়। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে উদ্যোগ নিয়ে কাজ করতে পারে। এ উদ্যোগে ইন্দোনেশিয়া, ভারত, পাকিস্তান একমত হলে আশানুরূপ ফল পাওয়া যাবে। সঙ্গে তুরস্ক, মিসরসহ যেসব দেশে হজযাত্রী বেশি, তাদের সহযোগিতা নেওয়া যায়।

মহান আল্লাহ আমাদের মাকবুল হজ নসিব করুন।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments