‘ভালোবাসা’, যার ওপর ভর করে পৃথিবী সৃষ্টি হয়েছে। ভালোবাসা না থাকলে এ পৃথিবী সৃষ্টি হতো না। সৃষ্টি হতো না আকাশ, বাতাস, গ্রহ, নক্ষত্র কিছুই। ভালোবাসা আছে বলেই মহান আল্লাহ তাঁর প্রিয় বন্ধু মুহাম্মদ (সা.)-কে সৃষ্টি করেছেন, সৃষ্টি করেছেন গোটা মানব জাতিকে।
শুধু তা-ই নয়, তিনি আমাদের দিয়েছেন আশরাফুল মাখলুকাত তথা সৃষ্টির শ্রেষ্ঠত্বের মর্যাদা। ভালোবাসা আছে বলেই মহান আল্লাহ আমাদের শ্রেষ্ঠ উম্মতে ভূষিত করেছেন।
এই ভালোবাসা সর্বোত্কৃষ্ট ও পবিত্রতম ভালোবাসা। মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের ভীষণ ভালোবাসেন, তাঁর মুমিন বান্দারাও তাঁকে ভীষণ ভালোবাসে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘এবং তারা (মুমিনরা) আল্লাহকে ভালোবাসে, আল্লাহও তাদের ভালোবাসেন। ’ (সুরা : মায়েদা, আয়াত : ৫৪)
অন্য আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ইরশাদ করেন, ‘আর যারা ঈমান এনেছে তারা আল্লাহ তাআলার জন্য ভালোবাসায় দৃঢ়তর। ’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৬৫)
সৃষ্টবস্তুর ভালোবাসা ক্ষণস্থায়ী। আর আল্লাহর ভালোবাসা চিরস্থায়ী। আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা ও মাখলুকের প্রতি ভালোসার মধ্যে পার্থক্য হলো, অনেক ক্ষেত্রে সৃষ্টবস্তুকে উজাড় করে ভালোবেসে অবহেলায় অনাদর মেলে। কিন্তু আল্লাহর প্রতি ভালোবাসার প্রতিদান বহু গুণে পাওয়া যায়। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) একাধিকবার বর্ণনা করেন যে (আল্লাহ তাআলা বলেন) আমার বান্দা যদি আমার দিকে এক বিঘত পরিমাণ এগিয়ে আসে, আমি তার দিকে এক হাত পরিমাণ এগিয়ে যাই। আর যদি সে আমার দিকে এক হাত পরিমাণ এগিয়ে আসে, আমি তার দিকে দুই হাত পরিমাণ এগিয়ে যাই। সে যদি আমার দিকে হেঁটে আসে, আমি তার দিকে দৌড়ে যাই। ’ (বুখারি, হাদিস : ৭৫৩৬)
বান্দার প্রতি মহান আল্লাহর রহমত ও ভালোবাসা কতটা দৃঢ় তা মহানবী (সা.)-এর একটি হাদিস দ্বারা ধারণা পাওয়া যায়। তবে মহান আল্লাহর অকৃত্রিম ভালোবাসার পরিমাপ করা কারো পক্ষে সম্ভব নয়। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) বলেন, আল্লাহ তাআলার এক শ রহমত আছে। তন্মধ্যে একটি রহমত তিনি সারা সৃষ্টির মধ্যে বণ্টন করেছেন। এই একটি রহমতের কারণেই তারা একে অপরের প্রতি দয়াপরবশ হয়, পরস্পরের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়। এর দ্বারা জীব-জন্তু তার বাচ্চার প্রতি মমতায় উদ্বুদ্ধ হয়। তিনি অবশিষ্ট নিরানব্বইটি রহমত কিয়ামতের দিন তাঁর বান্দাদের প্রতি অনুকম্পা প্রদর্শনের জন্য রেখেছেন। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪২৯৩)
সুবহানাল্লাহ! মহান আল্লাহ কত মহান। পবিত্র ভালোবাসার উৎস ও যোগ্য তিনিই। মহান আল্লাহর ভালোবাসা পাওয়ার মাধ্যম হলো, তার বিধান পালন করা, মহানবী (সা.)-এর অনুসরণ করা ও তাঁর প্রতি ভালোবাসা স্থাপন করা। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘বলুন, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালোবাসো তবে আমাকে অনুসরণ করো, আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের অপরাধ ক্ষমা করবেন। আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। ’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ৩১)
কিয়ামতের দিন ভালোবাসা অনুসারে মানুষের হাশর হবে। হাদিসে এসেছে, আনাস (রা.) বলেন, এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসুল, কিয়ামত কখন হবে? রাসুল (সা.) বলেন, ‘তুমি এর জন্য কী তৈরি করেছ? লোকটি বলল, আমি এর জন্য তেমন নামাজ, সাওম ও সাদকা করতে পারিনি, তবে আমি আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকে ভালোবাসি। তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তুমি তার সঙ্গে থাকবে যাকে তুমি ভালোবাসো। ’ (বুখারি, হাদিস : ৬১৭১)
তাই আমাদের উচিত, আমাদের ভালোবাসা তাঁর জন্যই স্থাপন করা, যিনি ভালোবাসা সৃষ্টি করেছেন, তাদেরই ভালোবাসা, ভালোবাসার সৃষ্টিকর্তা যাদের ভালোবাসতে উদ্বুদ্ধ করেছেন। পরিবার-পরিজনও তাদের অংশ। পরিবারের বাইরেও মানুষকে আল্লাহর জন্য ভালোবাসা যাবে। মুআজ ইবনে আনাস আল-জুহানি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার উদ্দেশ্যে দান-খয়রাত করে, আল্লাহ তাআলার উদ্দেশ্যে (দান করা থেকে) নিবৃত্ত থাকে, আল্লাহ তাআলার জন্য ভালোবাসে, আল্লাহর জন্যই ঘৃণা করে এবং আল্লাহ তাআলার (সন্তুষ্টির) উদ্দেশ্যে বিয়ে প্রদান করে, সে তাঁর ঈমান সুসম্পন্ন করেছে। ’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৫২১)। মহান আল্লাহ তাঁর ভালোবাসা অর্জনের তাওফিক দান করুন।