Friday, April 19, 2024
spot_img
Homeআন্তর্জাতিকসৌদি আরবের প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থা যেমন

সৌদি আরবের প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থা যেমন

সৌদি আরবের শিক্ষাব্যবস্থায় সৌদি নাগরিকরা যে ধরণের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে প্রবাসীরা সাধারণত সে ধরণের সুযোগ-সুবিধার পায় না। 

কারণ কে কতটা সুযোগ লাভ করবে তা নির্ধারণ করে দেয় সে দেশের পাসপোর্ট ও নাগরিকত্ব। তবে প্রবাসীদের জন্য সৌদি শিক্ষাব্যবস্থায় একটি শিশুর পাঠ্যসূচিতে কোন ধরণের বিষয় থাকবে তা নির্ধারণ করে দেয় প্রবাসীর জাতীয়তা। 

শিক্ষার ক্ষেত্রে কারো ধর্মীয় পরিচয়কে মূখ্য করে দেখা হয় না। সৌদি সরকার প্রবাসীদের সন্তানদের যে স্কুলগুলোর মাধ্যমে শিক্ষা দিয়ে থাকে তা পরিচালিত হয় প্রবাসীদের জাতীয়তা ও সৌদি সরকারের জাতীয় শিক্ষা নীতির সমন্বয়ে। এ কারণে দেখা যায়, সৌদি আরবে পাবলিক, প্রাইভেট ও আন্তর্জাতিক মিলিয়ে বিভিন্ন ধরণের অসংখ্য বিদ্যালয় রয়েছে।   

সৌদি সরকার সরাসরি যে স্কুলগুলো পরিচালনা করে তা শুধু সৌদি নাগরিকদের জন্য। যারা মূলত স্থায়ীভাবে ও জাতীয়তার ভিত্তিতে সৌদি নাগরিক। যারা সৌদি নাগরিক নয় তারাও এই স্কুলগুলোতে ভর্তি হতে পারে। এজন্য তাদের মুসলিম পরিচয় আবশ্যক। 

এসব স্কুলগুলোতে শুধু মুসলিম হলেই যে ভর্তি হতে পারবে তা নয়, এজন্য আরো কিছু শর্ত পালন করতে হয়। এই স্কুলগুলো অন্যান্য স্কুলগুলো থেকে অনেকটাই ব্যতিক্রধর্মী। এবং শিক্ষা খরচ অনেক কম।   

সেখানে ব্যক্তি মালিকানায় অনেক প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। তারাও সৌদি সরকার প্রণীত জাতীয় কারিকুলাম অনুসরণ করে আরবি ভাষায় শিক্ষা দেয়। 

সমগ্র সৌদি আরবে কিন্টারগার্টেন, প্রাইমারি ও মাধ্যমিক এই তিনটি ইউনিটে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হয়। রাজ্যের সব স্কুলের শিক্ষাব্যবস্থা পরিচালিত হয়ে থাকে ‘শিক্ষা মন্ত্রণালয়’ ও দ্যা জেনারেল পেসেডেন্সি ও গার্লস’ এর অধীনে। 

স্কুলপর্ব সৌদি শিক্ষা: প্রি স্কুল বা স্কুলপর্ব শিক্ষা বলতে বোঝানো হয় একজন শিক্ষার্থীর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির পর্ব সময়টাকে। যা শিশুদের জন্য প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির মানসিক প্রস্তুতি। এই লক্ষে সৌদি আরবে পাবলিক, প্রাইভেট ও আন্তর্জাতিক মানের অসংখ্য নার্সারি রয়েছে। শূন্য থেকে তিন বছর বয়সী শিশুদের সেখানে শিক্ষা দেওয়া হয়। 
 
কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলোতে তিন থেকে পাঁচ বছর বয়সী বাচ্চারা পড়াশোনা করে। এই স্কুলগুলো সবার জন্যই উম্মুক্ত। তবে প্রি স্কুল পর্যায়ের এই শিক্ষা গ্রহণ করা কারো জন্য আবশ্যক নয়। এর মাধ্যমে শিশুদের অনুভূতিমূলক আত্মিক উৎকর্ষের চেষ্টা করা হয়। পাশাপশি তারা যাতে সামাজিকীকরণ ও সহযোগিতামূলক মনোভাব প্রকাশে দক্ষ হয়ে উঠতে পারে সে দিকটিও এক্ষেত্রে লক্ষণীয়। 

একটি শিশুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পদার্পণের জন্য যে আবশ্যকীয় দক্ষতাগুলো থাকা প্রয়োজন সেটি অর্জনের জন্যই মূলত প্রি স্কুলিং প্রোগ্রাম। এই পর্যায়ে কোনো লিঙ্গ বিভাজন নেই। ছেলে-মেয়ে সবাই একসাথে শিক্ষা গ্রহণ করে । তবে শিক্ষক হিসেবে শুধু নারী শিক্ষকরাই শিক্ষা দান করে থাকেন। 

শিক্ষা দানের মাধ্যম আরবি। আর শিক্ষা বিষয়বস্তু হিসেবে বেছে নেওয়া হয় ইসলামের সাথে সম্পৃক্ত বিষয়গুলো। একজন প্রবাসী অভিভাবকের জন্য শিক্ষা ব্যয় বহন করা অত্যন্ত কষ্টকর। কারণ যদি একজন অভিভাবক তার বাচ্চাকে কোনো ইন্টারন্যাশনাল কিন্ডারগার্টেন স্কুলে পড়াতে চান, তাহলে একটি সন্তানের জন্য প্রতি বছর ১০ হাজার থেকে ৬৫ হাজার রিয়াল পর্যন্ত ব্যয় করতে হবে। যা সবার দ্বারা সম্ভব হয় না। অনেকে তাই প্রাইভেট স্কুলে পড়াতে সাহস করেন না। 

প্রাথমিক শিক্ষার বয়স: সৌদি আরবে প্রাইমারি শিক্ষার বয়স ধরা হয় ৬ থেকে ১২ বছর। একজন শিক্ষার্থীকে অবশ্যই ৬ বছর প্রাথমিক পর্যায়ে পড়ানো করতে হবে। যা সবার জন্য বাধ্যতামূলক। এরপর সে মাধ্যমিক যাবে। প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণের ড়্গেত্রে বাধ্যবাধকতা থাকলেও উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে আর কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।     

পাবলিক প্রাইমারি স্কুল: সৌদি সরকার পরিচালিত প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে বিনা বেতনে সৌদি ছেলেমেয়েরা পড়াশোনার সুযোগ পায়। এছাড়াও যারা সৌদি নাগরিক ও বিশেষ শ্রেণির প্রবাসী তারা এ সুযোগ নিতে পারে। কিছু কিছু বিদ্যালয় এর ব্যতিক্রম রয়েছে। যেখানে জেনারেল শিক্ষার পাশাপাশি কোরআনও হিফজ করানো হয়। ফলে একটি নির্দষ্টি সময়ে কোরআন হিফজ হয়ে যায়। 
জেনারেল শিক্ষা গ্রহণ করতেও কোনো সমস্যা হয় না। আমাদের দেশে দেখা যায়, যারা কোরআন মুখস্থ করে তারা পাঁচ বা ছয় বছর সাধারণ পড়াশোনা থেকে বাইরে থেকে এ কাজটি করে থাকে। যখন তারা জেনারেল শিক্ষায় প্রবেশ করে তখন বয়সও অনেক হয়ে যায়। ফলে তারা নানা সমস্যায় পড়তে বাধ্য হয়। 

সমস্যার কতিপয় দিক: যারা সৌদি নাগরিক বা বিশেষ শ্রেণির প্রবাসী নয় তাদের বাচ্চাদের জন্য শিক্ষা গ্রহণ একটি মারাত্মক সমস্যার সৃষ্টি করে। কারণ প্রাইভেট স্কুলগুলোয় যে পরিমাণে টিউশন ফি গুনতে হয় তা অনেকের পক্ষে অসম্ভব ব্যাপার। এই জটিল বাস্তবতার কারণে অনেক মা-বাবা বাচ্চাদের একাডেমিক শিক্ষা গ্রহণ থেকে পিছিয়ে আসেন। তারা বাধ্য হয়ে হোম এডুকেশন পদ্ধতিকে বেছে নেন। ফলে অনেক প্রবাসীদের শিশু ভর্তির আওতায় আসে না।    

প্রাইভেট প্রাইমারি স্কুল: সৌদি আরবে অবস্থিত প্রাইভেট প্রাইমারিগুলো মূলত সে দেশের জাতীয়তার সাথে সংগতি রেখেই পরিচালিত হয়। যেমন দেখা যায়, জার্মান স্কুলগুলো বিশেষ একটি শিক্ষার মানদণ্ড অনুসরণ করে। 

আর সৌদি সরকারের জাতীয় শিক্ষার নীতির সাথেও সমন্বয় করে চলে। তবে প্রবাসীদের জন্য এই শিক্ষা ব্যয় খুবই বিলাসবহুল। দেখা যায়, স্কুলভেদে বছরে ১৫ হাজার থেকে ১ লাখ রিয়াল পর্যন্ত টিউশন ফি দিতে হয়। 

এ কারণে একজন অভিভাবক এসব স্কুলের কথা চিন্তা করার আগে নিজের সক্ষমতার কথা ভালো করে ভেবে নিতে বাধ্য। 

তথ্যসূত্র: 1.https://www.expatica.com/sa/education/children-education/education-system-in-saudi-arabia-73178/

2.https://www.saudiembassy.net/education
3.https://www.saudiarabiaeducation.info/education-system
4.https://en.wikipedia.org/wiki/Education_in_Saudi_Arabia 

লেখক : প্রাবন্ধিক ও গবেষক   

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments