আনাস ইবনে মালেক (রা.) রাসুল (সা.)-এর গৃহকর্মী ছিলেন। তিনি কারি, মুফতি ও মুহাদ্দিস সাহাবি ছিলেন। হিজরতের ১০ বছর আগে মদিনাতে তাঁর জন্ম। তাঁর বয়স যখন ৮-৯ বছর তখন তাঁর মা ইসলাম গ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ক্ষুব্ধ হয়ে স্ত্রী ও পুত্রকে ছেড়ে সিরিয়া চলে যান এবং সেখানেই কুফরি অবস্থায় মারা যান। স্বামীর ইন্তেকালের পর পুত্র আনাসের লালন-পালনের কথা ভেবে উম্মে সুলাইম কিছুকাল অন্যত্র বিবাহ বসেননি। পরবর্তী সময়ে সাহাবি আবু তালহা আনসারি (রা.)-এর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।
রাসুল (সা.) যখন মদিনায় হিজরত করেন, তখনই আনাস (রা.) রাসুল (সা.)-এর সাক্ষাৎ করে সাহাবিয়্যাতের মর্যাদা লাভ করেন। তখন তাঁর বয়স ১০ বছর। কিছুদিন পর তাঁর মা তাঁকে হাতে নিয়ে উপস্থিত হলেন রাসুল (সা.)-এর দরবারে। বলেন, আনসারদের নারী-পুরুষ প্রত্যেকেই আপনাকে কিছু না কিছু হাদিয়া দিয়েছে; আমি তো কিছু দিতে পারিনি। আমার আছে এই ছেলে। সে লিখতে জানে। আপনার খেদমতের জন্য একে কবুল করে নিন। সেদিন থেকে আনাস (রা.) রাসুল (সা.)-এর খেদমতে আত্মনিয়োগ করেন এবং রাসুল (সা.)-এর জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত একটানা ১০ বছর খেদমত আঞ্জাম দেন। (আনসাবুল আশরাফ ১/৫০৬; উসদুল গাবাহ ১/১৫২)
আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ১০ বছর ধরে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সেবা-যত্ন করেছি। তিনি আমার প্রতি কখনো ‘উহ্’ শব্দটিও উচ্চারণ করেননি (অসন্তোষ প্রকাশ করেননি)। তিনি আমার কোনো কাজে কখনো অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেননি যে এটা তুমি করলে কেন অথবা কোনো কাজ ছুটে যাওয়ার কারণেও তিনি বলেননি যে এটা তুমি কেন করলে না। রাসুলুল্লাহ (সা.) ছিলেন সবচেয়ে উত্তম চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের মানুষ। আমি রেশম এবং পশম মিশিয়ে বানানো কাপড়ও নিজ হাতে ছুয়ে দেখেছি এবং খাঁটি রেশমি কাপড়ও ছুয়েছি; কিন্তু রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর হাতের চেয়ে বেশি নরম ও মসৃণ কোনো কিছু স্পর্শ করিনি। আমি মৃগনাভির গন্ধও গ্রহণ করেছি এবং আতরের গন্ধও গ্রহণ করেছি; কিন্তু রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর শরীরের ঘামের চেয়ে বেশি সুগন্ধি কোনো কিছুতে পাইনি। (তিরমিজি, হাদিস : ২০১৫)