Sunday, October 1, 2023
spot_img
Homeধর্মসুলতান সালাহ উদ্দিনের ইহুদি চিকিৎসক

সুলতান সালাহ উদ্দিনের ইহুদি চিকিৎসক

মুসলিম সমাজ ও রাষ্ট্রে অমুসলিমদের মর্যাদাপূর্ণ জীবনলাভের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত মুসা বিন মায়মুন। ইসলামের সোনালি যুগে যিনি আপন অঙ্গনে সর্বোচ্চ মর্যাদায় সমাসীন হন। এর দ্বারা সুলতান সালাহ উদ্দিনের পরমতসহিষ্ণুতার পরিচয়ও পাওয়া যায়

এটি একজন ইহুদি ধর্মগুরু, চিকিৎসক ও দর্শনিকের গল্প। যিনি স্পেন থেকে বিতাড়িত হয়ে একজন উদ্বাস্তু হিসেবে মরক্কোতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে ফিলিস্তিন হয়ে মিসরে যান। তিনি ছিলেন সুলতান সালাহ উদ্দিন আইয়ুবির ব্যক্তিগত চিকিৎসক এবং ইহুদি সম্প্রদায়ের প্রধান হিসেবে মনোনীত হন।

তিনি চিকিৎসা, দর্শন ও ধর্ম নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছেন, যা বর্তমান সময় পর্যন্ত সব ধর্মাবলম্বী মানুষকে প্রভাবিত করেছে। যাঁর নাম মুসা বিন মায়মুন। যিনি মায়মুনিদ ও রামবাম নামেও পরিচিত। মুসলিম সমাজ ও রাষ্ট্রে অমুসলিমদের মর্যাদাপূর্ণ জীবনলাভের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত তিনি। ইসলামের সোনালি যুগে যিনি আপন অঙ্গনে সর্বোচ্চ মর্যাদায় সমাসীন হন। এর দ্বারা সুলতান সালাহ উদ্দিনের পরমতসহিষ্ণুতার পরিচয়ও পাওয়া যায়।

মুসা বিন মায়মুন ১১৩৫ খ্রিস্টাব্দে স্পেনের কর্ডোভায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি একটি অভিজাত পরিবারে বেড়ে ওঠেন এবং পিতা মায়মুনের অধীনে লেখাপড়া করেন। তিনি অল্প বয়সেই তাঁর গভীর মনোযোগ ও তুখোড় মেধা দ্বারা শিক্ষকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। কিন্তু বয়স ১৩ বছর হওয়ার আগে নিপীড়নের কারণে মন ভেঙে যায়। যখন ‘আল-মুহাদ’ সম্প্রদায় মুসলিম স্পেনের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করে। আল-মুহাদ সম্প্রদায় তাদের পূর্বসূরিদের নীতি থেকে সরে আসে এবং ধর্মীয় বৈচিত্র্য অস্বীকার করে; এমনকি মুসলিম সমাজের বৈচিত্র্যকেও তারা আড়াল করতে সচেষ্ট হলো। এর পরও মায়মুন ১১ বছর স্পেনে অবস্থান করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সন্তানদের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে ১১৫৯ খ্রিস্টাব্দে মরক্কোতে চলে আসেন।

অন্যদিকে মুসা বিন মায়মুন ইহুদি ধর্মতত্ত্ব, গ্রিক দর্শন ও চিকিৎসা বজ্ঞানের ওপর লেখাপড়া অব্যাহত রাখেন। পরবর্তী সময়ে তিনি তৎকালীন ফিলিস্তিনে চলে আসেন। তখন ফিলিস্তিনের নিয়ন্ত্রণ ছিল ক্রুসেডারদের হাতে, যারা ছিল ইহুদিবিদ্বেষী। অল্পদিনের মধ্যে মায়মুনের পরিবার প্রথমে মিসরের ফুসতাত নামক স্থানে এবং পরে কায়রো চলে আসে। মিসরে আসার পর মুসা বিন মায়মুন ব্যক্তিগত সমস্যার মুখোমুখি হন। তাঁর পিতা মারা যান এবং তাঁর ভাই—যিনি একজন ধনাঢ্য অলংকার ব্যবসায়ী ছিলেন, তিনি জাহাজডুবির শিকার হন। এতে তাঁরা পারিবারিক সহায়-সম্পদ হারিয় নিঃস্ব হয়ে যান। এ সময় তিনি ইহুদি ধর্মগুরু হিসেবে একটি সরকারি চাকরি জোগাড় করেন। কিন্তু এই পদের কোনো নির্ধারিত বেতন ছিল না। ফলে মুসা বিন মায়মুন চিকিৎসা পেশায় মনোযোগ দেন। মানুষকে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার মাধ্যমে তিনি জীবিকা নির্বাহ করতে লাগলেন। চিকিৎসক হিসেবে তাঁর সুনাম ছড়িয়ে পড়তে লাগল এবং একসময় তিনি সুলতান সালাহ উদ্দিনের চিকিৎসক হিসেবে নিয়োগ পান। একই সময় তিনি মিসরের ইহুদি সম্প্রদায়ের নেতা মনোনীত হন।

মুসা বিন মায়মুন অল্প বয়স থেকেই গ্রন্থ রচনা শুরু করেন এবং মিসরে যত দিন অবস্থান করেছিলেন তত দিন তা অব্যাহত ছিল। তাঁর গুরুত্বপূর্ণ বইগুলোর একটি ‘কমেন্টারি অব দ্য মিসনাহ’। এখনো বইটিকে ইহুদি ধর্মতত্ত্বের ওপর একটি মৌলিক গ্রন্থ বিবেচনা করা হয়। এই বই লেখার সময় তাঁর বয়স ছিল ২৩ থেকে ৩৩ বছর। এরপর লেখেন ইহুদি ধর্মীয় আইনের সংকলন ‘দ্য মিসনাহ তোরাহ’। এই বই ছিল তাঁর দীর্ঘ ১০ বছরের পরিশ্রমের ফল। এ ছাড়া তিনি ‘দ্য গাইড অব পারপ্লেক্স’ নামেও একটি বই লেখেন।

মুসা বিন মায়মুন ১২০৪ খ্রিস্টাব্দে মারা যান। তাঁর লাশ মিসর থেকে ফিলিস্তিনের টাইবেরিয়াস শহরে স্থানান্তরিত হয়। সেখানে তাঁর কবরের এপিটাফে লেখা হয়—‘একজন মুসা থেকে অন্য মুসা পর্যন্ত। এখানে মুসার মতো কেউ ছিল না। ’

তথ্যসূত্র : টিআরটি ওয়ার্ল্ড

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments