১৯৩১ সালের ৬ই এপ্রিল বাংলাদেশের পাবনায় জন্মে ছিলেন বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি মহানায়িকা সুচিত্রা সেন । ‘সপ্তপদী’, ‘দীপ জ্বেলে যাই,’ ‘হারানো সুর’, ‘সাত পাকে বাঁধা’ এবং হিন্দি ‘ দেবদাস’, ‘আঁধি’ ছবিগুলো এখনো দর্শকরা দেখতে পছন্দ করেন। কখনো গ্ল্যামারাস নায়িকা, কখনো স্নেহময়ী মা হিসেবে অভিনয় করেছেন। নানা চরিত্রে পর্দায় হাজির হতেন তিনি। যা ছিল চোখে পড়ার মতো। ২৬ বছরের অভিনয় জীবনে ৬১টি ছবিতে অভিনয় করেছেন সুচিত্রা সেন। তার সম্পর্কে আজও মানুষের নানা কৌতূহল। উত্তম কুমারের সঙ্গে জুটি বেঁধে বাংলা ছবিতে যেন একটা নতুন মাত্রা এনেছিলেন।সময়ের থেকে অনেকটাই এগিয়ে ছিলেন সুচিত্রা। বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি এই মহানায়িকার অষ্টম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। পাবনা শহরের হেমাসাগর লেপাবনায় আজ সকাল ১১টায় তার অষ্টম মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা হয়েছে। পৈতৃক বাড়িতে সুচিত্রা সেনের ম্যুরালে পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন সাংস্কৃতিক কর্মীরা। পরে অনুষ্ঠিত হয় স্মরণসভা। সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ড. নরেশ মধুর সঞ্চালনায় স্মরণসভায় বক্তব্য দেনÑ পরিষদের সদস্য মাজহারুল ইসলাম, পাবনা প্রেস ক্লাবের সভাপতি এবিএম ফজলুর রহমান, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের প্রধান ড. হাবিবুল্লাহ, জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বিনয় জ্যোতি ক-ু, পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক সরোয়ার উল্লাস, সাংস্কৃতিক কর্মী শিশির ইসলাম, অঞ্জলি ভৌমিক ও আনিকা তাসনিম প্রমুখ।
দিনটি পালনে সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদ পুষ্পমাল্য অর্পণ ও স্মরণসভার আয়োজন করে। ২০১৪ সালের ১৭ই জানুয়ারি কলকাতার বেলভিউ হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এই কিংবদন্তি নায়িকা। ২০১৪ সালের ১৭ই জুলাই উচ্চ আদালতের নির্দেশে উদ্ধার করা হয় সুচিত্রা সেনের পৈতৃক বাড়ি। তারপর থেকে অনেকটা অযতœ আর অবহেলায় পড়ে রয়েছে বাড়িটি। সুচিত্রা সেনের পৈতৃক ভিটায় ‘সুচিত্রা স্মৃতি সংগ্রহশালা’ করার যে পরিকল্পনা তা বাস্তবায়নের ধীরগতি নিয়ে হতাশ সাংস্কৃতিক কর্মীরা। তারপর থেকে অনেকটা অবহেলা আর অযতেœ পড়ে আছে বাড়িটি। জেলা প্রশাসনের দখলে থাকা বাড়িটি যেন প্রাণহীন। বাড়ির বিভিন্ন স্থানে দেখা গেছে ফাটল। বাড়ি উদ্ধারের প্রায় আট বছরেও উদ্ধারকৃত বাড়িতে ‘সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংগ্রহশালা’ গড়ে তোলার দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই। এ নিয়ে হতাশ ও ক্ষুব্ধ জেলার সাংস্কৃতিক কর্মীরা।
উত্তম কুমারের সঙ্গে সুচিত্রা সেনের জুটি বাংলা ছবির ইতিহাসে চিরস্মরণীয়। ১৯৫৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ ছবিতে প্রথমবার একফ্রেমে দেখা যায় তাদেরকে। তারা একসঙ্গে প্রায় ৩০টি ছবিতে অভিনয় করেন। সময় ফাঁকা না থাকার কারণে সত্যজিৎ রায়ের ‘চৌধুরানী’ ছবিতে কাজ করতে অপরাগতা প্রকাশ করেন সুচিত্রা সেন। এ কারণে অস্কারজয়ী পরিচালক সত্যজিৎ ছবিটি আর বানাননি। উত্তর ফাল্গুনী’ ছবিতে যৌনকর্মী পান্নাবাই ও তার কন্যা আইনজীবী সুপর্ণার দ্বৈত চরিত্রে অভিনয় করেন সুচিত্রা সেন। সুচিত্রা সেনই একমাত্র ভারতীয় অভিনয়শিল্পী যিনি দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার গ্রহণে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। পুরস্কারটি পাওয়ার নিয়ম অনুযায়ী নয়াদিল্লিতে যেতে হতো তাকে। কিন্তু তিনি জনসম্মুখে আসতে চাননি। ১৯৫২ সালে নির্মিত সুচিত্রা সেনের প্রথম বাংলা ছবি ‘শেষ কোথায়’ কখনো মুক্তি পায়নি। তার জীবনে এ রকম বেশ কিছু উল্লেখ যোগ্য ঘটনা ছিল।
প্রসঙ্গত, পাবনা মধ্য শহরের দিলালপুর মহল্লার পাবনা-ঢাকা মহাসড়ক সংলগ্ন পুরাতন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের উত্তরে পৈতৃক বাড়িতে কেটেছে সুচিত্রা সেনের শৈশব ও কৈশোরের দিনগুলো। সুচিত্রা সেন পাবনা সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। বাবা করুণাময় দাশগুপ্ত ছিলেন পাবনা মিউনিসিপ্যালিটির স্যানিটারি ইন্সপেক্টর। পরে কর্ম-যোগ্যতায় পদোন্নতি পেয়েছিলেন হেড ক্লার্ক হিসেবে। দেশ ভাগের সময় বাড়িঘর ফেলে সুচিত্রা সেনের বাবা সপরিবারে ভারতে চলে যান।