Friday, June 9, 2023
spot_img
Homeধর্মসিরাতপাঠ: যে যুদ্ধকে ছোট বদর বলা হয়

সিরাতপাঠ: যে যুদ্ধকে ছোট বদর বলা হয়

দ্বিতীয় হিজরির রজব মাসে মহানবী (সা.) আবদুল্লাহ বিন জাহাশ (রা.)-এর নেতৃত্বে ১২ জনের একটি দলকে বিশেষ অভিযানে প্রেরণ করেন। এই কাফেলায় প্রত্যেক দুজনের জন্য একটি করে উট ছিল। মহানবী (সা.) তাদের হাতে একটি চিরকুট দিয়ে বলেন, তোমরা দুই দিনের পথ অতিক্রম করার চিরকুট পাঠ করবে এবং এর নির্দেশনা অনুসরণ করবে। তবে কাউকে এ বিষয়ে বাধ্য করা যাবে না।

আবদুল্লাহ বিন জাহাশ (রা.) দুই দিন পথচলার পর তা খোলেন। চিরকুটে লেখা ছিল ‘তোমরা নাখলা নামক স্থানে গিয়ে ওত পেতে থাকবে এবং কুরাইশের গতিবিধি লক্ষ করবে। ’ নাখলা মক্কা ও তায়েফের মধ্যবর্তী একটি স্থান। মক্কার নিকটবর্তী হওয়ায় স্থানটি মুসলমানদের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। ফলে আবদুল্লাহ বিন জাহাশ (রা.) সঙ্গীদের বলেন, আমার সঙ্গে শুধু তারাই আসবে, যারা শাহাদাতের তীব্র আকাঙ্ক্ষা রাখে। কার কথা শুনে সবাই উজ্জীবিত হয়। কেউ পিছুপা হয়নি। (মুসলিম উম্মাহর ইতিহাস : ২/৪৮)

আবদুল্লাহ ইবনে জাহাশ (রা.)-এর দলটি নাখলাতে অবস্থান করছিলেন। তখন কুরাইশের একটি কাফেলা কিশমিশ, চামড়া ও অন্যান্য সামগ্রী নিয়ে অতিক্রম করল। দিনটি ছিল রজব মাসের শেষ দিন। রজব আরবদের কাছে পবিত্র মাস। এই মাসে যুদ্ধ নিষিদ্ধ। ফলে সাহাবিরা দ্বিধাগ্রস্ত হলেন, তাঁরা কুরাইশ কাফেলার ওপর হামলা করবেন নাকি তাদের ছেড়ে দেবেন। তাদের ওপর হামলা করলে সেটা হবে নিষিদ্ধ মাসে যুদ্ধ করা; আর কুরাইশদের ছেড়ে মুসলমানের স্বার্থহানি ও নিজেদের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে।

অবশেষে তাঁরা পরামর্শক্রমে যুদ্ধের সিদ্ধান্ত নিলেন। সাহাবিদের মধ্যে ওয়াকিদ ইবনে আবদুল্লাহ আত-তামিমি (রা.) প্রথম তীর নিক্ষেপ করেন। তাঁর তীরের আঘাতে আমর ইবনুল হাদরামি মারা যায়। অতঃপর দুজন বন্দি ও যুদ্ধলব্ধ সম্পদ নিয়ে তাঁরা মদিনায় ফিরে আসেন। এটাই ছিল ইসলামের ইতিহাসে প্রথম গনিমত (যুদ্ধলব্ধ সম্পদ), প্রথম শত্রুনিধন ও প্রথম বন্দি। অবশ্য যুদ্ধলব্ধ সম্পদের অভিযানে অংশগ্রহণকারীদের প্রাপ্য আগেই বণ্টন করা হয়েছিল। সব কিছু শোনার পর রাসুলুল্লাহ (সা.) গনিমতের সম্পদ ও বন্দি গ্রহণে অস্বীকার করেন এবং নিষিদ্ধ মাসে যুদ্ধ করায় ভর্ত্সনা করেন। (নবীয়ে রহমত, পৃষ্ঠা ২১৬; আর-রাহিকুল মাখতুম, পৃষ্ঠা ২০৮)

আমর ইবনুল হাদরামি ছিল কুরাইশদের নেতা। সে নিহত হওয়ায় তারা প্রচণ্ড রকম ক্ষিপ্ত হলো এবং চারদিকে প্রচারণা চালাতে লাগল, মুসলিমরা নিষিদ্ধ মাসে যুদ্ধ করে সীমালঙ্ঘন করেছে। আল্লাহ তাদের বাড়াবাড়ির উত্তরে আয়াত নাজিল করেন। আয়াতে তিনি মুসলিমদের আক্রমণকে পাপ হিসেবেই উল্লেখ করেন। তবে অবিশ্বাসীরা যে আরো গুরুতর অপরাধে লিপ্ত সেটাও স্মরণ করিয়ে দিলেন। ইরশাদ হয়, ‘তারা তোমাকে পবিত্র মাসে যুদ্ধ করা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে; বলুন, তাতে যুদ্ধ করা ভীষণ অন্যায়। কিন্তু আল্লাহর পথে বাধা দান করা, আল্লাহকে অস্বীকার করা, মসজিদুল হারামে বাধা দেওয়া এবং তার বাসিন্দাকে তা থেকে বের করে দেওয়া আল্লাহর কাছে তদপেক্ষা অধিক অন্যায়; ফিতনা হত্যা অপেক্ষা গুরুতর অন্যায়। যারা ঈমান আনে এবং যারা হিজরত ও জিহাদ করে আল্লাহর পথে, তারাই আল্লাহর অনুগ্রহ প্রত্যাশা করে। আল্লাহ ক্ষমাপরায়ণ, পরম দয়ালু। ’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ২১৭-২০১৮)

উল্লিখিত আয়াতদ্বয়ে সাহাবায়ে কেরামের অপরাধ ক্ষমা করার ইঙ্গিতও পাওয়া যায়। বস্তুত তাদের তাওবা, নিখাঁদ ঈমান ও দ্বিনের জন্য তাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আল্লাহ তাদের ক্ষমা করে দেন। আয়াত দুটি অবতীর্ণ হওয়ার পর রাসুলুল্লাহ (সা.) গনিমতের সম্পদ ও দুই যুদ্ধবন্দিকে ফিরিয়ে দেন এবং নিহত ব্যক্তির রক্তপণ আদায় করে দেন। (আর-রাহিকুল মাখতুম, পৃষ্ঠা ২০৮; মুসলিম উম্মাহর ইতিহাস : ২/৪৮)

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments