তাবেয়িদের সর্দার ছিলেন সায়িদ বিন আল মুসায়্যিব (রহ.)। সাহাবা যুগে সরাসরি তাঁদের কাছ থেকে হাদিস, তাফসির, ফিকাহ ইসলামী জ্ঞানের প্রথম ধারকদের থেকে ইলম আহরণ করে উম্মাহর উত্তম আদর্শ ছিলেন। তাকওয়া, ইবাদত, দুনিয়াবিমুখতাসহ একজন আলেমের সব বৈশিষ্ট্যের অধিকারী ছিলেন তিনি।
১৫ হিজরিতে উমর (রা.)-এর খিলাফতকালে মদিনায় কুরাইশ বংশের মাখজুম গোত্রে জন্মগ্রহণ করেন। বিখ্যাত সাহাবি সাআদ বিন আবু ওয়াক্কাস (রা.) ও আবু হুরায়রা (রা.)-সহ অনেকের কাছ থেকে হাদিস বর্ণনা করেছেন। বড় বড় সাহাবি ও রাসুল (সা.)-এর স্ত্রীদের কাছ থেকে সরাসরি হাদিস শুনেছেন। মদিনার বিখ্যাত সাতজন ফকিহের অন্যতম। যেকোনো বিষয়ে তাঁর মতামত গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করা হতো।
তিনি ৪০ বছর জামাতে নামাজ আদায় করেন। সায়িদ ইবনুল মুসায়্যিব (রহ.) বলেছেন, ‘আমি এ পর্যন্ত ৪০ বার হজ করেছি। গত ৫০ বছরে আমার কখনো নামাজের তাকবিরে উলা ছুটে যায়নি। মসজিদের প্রথম কাতারে যত্নবান হওয়ায় ৫০ বছরের নামাজে আমি কোনো ব্যক্তির পায়ের দিক দেখিনি। ৩০ বছর ধরে মুয়াজ্জিন যখন আজান দিত, তখন আমি মসজিদে থাকতাম।’ কথিত আছে, তিনি ইশার নামাজের অজু দিয়ে ফজরের নামাজ পড়তেন।
তাঁকে প্রায় ৩০ হাজার পরিমাণ উপহারের অর্থ গ্রহণের আহ্বান জানানো হলে তিনি বলেছিলেন, ‘আমার এগুলোর দরকার নেই। বনু মারওয়ানকেও দরকার নেই। আল্লাহর কাছে তাদের ও আমার ফায়সালা হবে।’
তত্কালীন খলিফা আবদুল মালিক বিন মারওয়ান নিজ ছেলে ওয়ালিদের সঙ্গে তাঁর মেয়ের বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু সায়িদ ইবনুল মুসায়্যিব (রহ.) তাঁর বিয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন। বরং তাঁর অভাবী সুযোগ্য ছাত্রের সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দেন। খলিফা আবদুল মালিক নানাভাবে চেষ্টা করেন। তাঁর ওপর নির্মম নির্যাতন শুরু করেন। তীব্র শীতের সময় তাঁকে বেদম প্রহার করা হয়। পানি ঢালা হয়।
মদিনার গভর্নর চিঠি লিখে অভিযোগ করেন যে মদিনাবাসী যুবরাজ ওয়ালিদ ও সুলায়মান উভয়ের জন্য বাইয়াত করতে সম্মত আছে। কিন্তু সায়িদ ইবনুল মুসায়্যিব এর বিরোধিতা করছেন। সায়িদ (রহ.) বলেন, রাসুল (সা.) একসঙ্গে দুজনের কাছে বাইয়াত থেকে নিষেধ করেছেন। পরে আবদুল মালিকের নির্দেশনামতে সায়িদকে বিরোধিতা থেকে বিরত থাকতে বলা হয়। কিন্তু বিরত না থাকায় তাঁকে বস্ত্রহীন করে ৫০ বেত্রাঘাত করা হয় এবং মদিনার বাজারে ঘোরানো হয়। তখন মানুষ আসরের নামাজ পড়ে ফিরছিল। সায়িদ (রহ.) বললেন, ‘এসব মুখ আমি গত ৪০ বছরে কখনো দেখিনি।’
এর পর থেকে তিনি মানুষকে তাঁর মজলিসে বসতে নিষেধ করতেন। এমনকি পরিচিতরা তাঁর মজলিসে বসা ছেড়ে দেয়। অপরিচিত কেউ যেন না বসে সে ব্যাপারে তিনিও সজাগ থাকতেন। তাঁর আশঙ্কা ছিল কেউ তাঁর কাছে বসে যেন নির্যাতিত না হয়। ৯২ বা ৯৪ বা ১০৫ হিজরিতে তিনি ইন্তেকাল করেন।
ওয়াফায়াতুল আয়ান থেকে অনুবাদ করেছেন
মুহাম্মদ হেদায়াতুল্লাহ