সাগরপারে অবস্থিত বাংলাদেশের দক্ষিণের জেলা, পটুয়াখালী। সর্বত্র সুন্দর ও মনোরম দৃশ্যাবলি এবং সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের নয়নাভিরাম দৃশ্যপট আকৃষ্ট করে এমন জেলাটি ‘সাগরকন্যা পটুয়াখালী’ নামে খ্যাত। মেঘ কুন্তলা শস্য শ্যামলা পটুয়াখালী প্রাচীন বেলাভূমি জনপদ। প্রকৃতির লীলায় বিচিত্র এ অঞ্চল, মনোরম পরিবেশে কবি হৃদয়ে স্বভাবতই সাড়া জাগে। অনেক কবি-সাহিত্যিক, জ্ঞানী-গুণীর জন্ম এ জনপদে। অনেক ছড়া, অনেক পালা, অনেক গানে-গাঁথায় ভরপুর এ পল্লি মায়ের কোল। নিভৃত পল্লির এখানে সেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে সাহিত্যের নানাবিধ উপাদান। এসব উপাদান-ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ হয়ে উঠেছে পটুয়াখালীর সাহিত্য।
বাংলা সাহিত্যের প্রাচীন নিদর্শন চর্যাপদ। চর্যাপদের পদকর্তাদের পদচারণায় মুখর ছিল প্রাচীন বঙ্গ দেশ। সেই বঙ্গ দেশটি ছিল সমুদ্র উপকূলের সুন্দরবন সন্নিবিষ্ট বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল। হিমালয় থেকে গঙ্গা নদী নেমে সাগর পানে যেতে যেতে গঙ্গার পললে অসংখ্য দ্বীপের সৃষ্টি হয়। মৌর্য আমলে সুগন্ধার মোহনায় কাঁঠালিয়া, গলাচিপা, আমতলী এবং গুপ্ত আমলে বরগুনা, বামনা, পাথরঘাটা নিয়ে দ্বীপের সৃষ্টি। ছোট ছোট দ্বীপগুলোর মিলিত নাম ছিল বাঙ্গালা। পাল ও সেন আমলে দ্বীপগুলো বাঙ্গালা ও চন্দ্রদ্বীপ নামে পরিচিত ছিল। বাক্লা-বাকেরগঞ্জ, পটুয়াখালী, বরিশাল, হিজলা, মুলাদী, গৌরনদী, উজিরপুর, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ প্রভৃতি এলাকা চন্দ্রদ্বীপের (বাঙ্গালার) অন্তর্গত ছিল। বাউফল, পটুয়াখালী-বাক্লার অধীনের অঞ্চল। বাউফলের কচুয়ায় ছিল চন্দ্রদ্বীপের রাজধানী। বাংলাভাষা-সাহিত্যের প্রাচীন কবি মীননাথ বা মৎস্যেন্দ্রনাথ চন্দ্রদ্বীপের পটুয়াখালী জনপদের লোক ছিলেন। ভাষা বিজ্ঞানী ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর মতে, মৎস্যেন্দ্রনাথ বা মীননাথ চন্দ্রদ্বীপের বাঙ্গাল কবি। লেখক সমন্বয় পরিষদ, পটুয়াখালীর প্রকাশিত ছোট কাগজ ‘শব্দমালা’য় (৩য় বর্ষ, ৫ম সংখ্যা, মার্চ-এপ্রিল ২০০৫ খ্রি.) পটুয়াখালীর লেখকদের যে তালিকা প্রকাশ করেছে; সেই তলিকায় দোঁহা ও চর্যাপদের পদকর্তা হিসাবে মীননাথ বা মৎস্যেন্দ্রনাথকে প্রাচীন চন্দ্রদ্বীপের দশম শতকের প্রথম কবি হিসাবে উল্লেখ করা হয়।
মীননাথ বাংলা সাহিত্যের প্রাচীন কবি। নেপালের রাজদরবারে উদ্ধারকৃত মীননাথের পাঁচটি গ্রন্থ আবিষ্কার করা হয়েছে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ ‘কৌলজ্ঞান নির্ণয়’। এ গ্রন্থে মীননাথের অবস্থান নির্ণয় করা হয়েছে। বলা হয়েছে মীননাথ ‘চন্দ্রদ্বীপ বিনির্গত’। চন্দ্রদ্বীপে ধীবর শ্রেণির লোকদের বসবাস ছিল অনেক বেশি। পটুয়াখালী অঞ্চল ছিল নদী-নালাবেষ্টিত জঙ্গলাকীর্ণ জনপদ এবং মীননাথ ছিলেন একজন ধীবর। ইতিহাস পর্যালোচনা করলে বাংলা সাহিত্যের প্রাচীন কবি মীননাথ পটুয়াখালী জনপদের ধীবর শ্রেণির লোক, নাথ ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা, নাথ গানের গীতিকার, বাঙ্গাল দেশের বাংলা সাহিত্যের প্রাচীন কবি; সে হিসাবে পটুয়াখালী সাহিত্যের ইতিহাস-ঐতিহ্য প্রাচীন, গৌরবোজ্জ্বল।
প্রাচীন বাংলা সাহিত্যে পটুয়াখালীর সংযুক্তি অত্যন্ত সুদৃঢ়। বাংলা সাহিত্যের ক্রমবিকাশের সঙ্গে পটুয়াখালী জেলা তথা বাকলা-চন্দ্রদ্বীপের সাহিত্য ক্রমবিকাশের রয়েছে নিগূঢ় সম্পর্ক। ড. দীনেশচন্দ্র সরকারের মতে, চন্দ্রগোমী অথবা চন্দ্রগোমিনের নাম থেকে চন্দ্রদ্বীপের নামকরণ হয়েছে। যদি চন্দ্রগোমিনের মাধ্যমে বাংলাভাষার সূচনা হয়, তবে বাংলাভাষা ও সাহিত্যের সূচনা বাকলা-চন্দ্রদ্বীপ তথা পটুয়াখালী অঞ্চল থেকেই হয়েছে। চন্দগোমিনের কয়েকখানা গ্রন্থের নাম জানা যায়, যথা-লোকনন্দ (নাটক), ন্যায়সিদ্ধালোক (তর্কশাস্ত্র), চন্দ্রব্যাকরণ (ব্যাকরণ), পরায়ণ বা ধাতু পরায়ণ (ব্যাকরণ), মনোহরকল্প (স্ত্রোত্র), শিষ্যলেখধর্ম, উপসর্গবৃত্তি, শব্দবিধান ইত্যাদি (পঞ্চম ও ষষ্ঠ শতাব্দীতে লেখা)। এসব দিক বিবেচনায় বাংলাভাষার উদ্ভবের সঙ্গে পটুয়াখালী সাহিত্যের সম্পর্ক বিদ্যমান।
মধ্যযুগের বৈষ্ণব সাহিত্যের অন্যতম কবি রূপ সনাতন। তার মূল নাম রূপ গোস্বামী। জানা যায়, সনাতন তার উপাধি নাম। রূপ সনাতন বাকলা-বাউফলের কবি। বৈষ্ণব সাহিত্যের ওপর তার লেখা অনেক গ্রন্থ রয়েছে। এসব গ্রন্থাবলির মধ্যে হংসদূত, উদ্ভব সন্দেশ, কৃষ্ণজন্ম তিথি গণোদেশ দীপিকা (৫), স্তবমালা, বিদগ্ধমাধব, আনন্দ মহোদধি, পদ্মাবলী, নাটক চন্দ্রিকা, গোবিন্দবিরুদাবলী প্রভৃতি। সংস্কৃত সাহিত্য ‘বাঙালির দান’ গ্রন্থ থেকে রূপ সনাতনের একটি শ্লোক এ রকম :
‘অধুনা দবিমন্থনানুবন্ধং
কুরুষে কিং গুরুবিভ্রমালসাঙ্গি।
কলসস্তনি লালসীতি কুঞ্জে
মুরলীকোমল কাকুলী মুরারে ঃ।।”
বলা যায়, রূপ গোস্বামী বা রূপ সনাতনের মাধ্যমেই পটুয়াখালীতে বৈষ্ণব সাহিত্যের ধারা অব্যাহত রয়েছে। বৈষ্ণবদের একতারাতে যে সুর ঝংকৃত হয়, তা প্রাচীন বাক্লার বাংলাসাহিত্যের ধারাকেই বহন করে। পটুয়াখালী সাহিত্যের এ ঐতিহ্য সমাদরে সমাদৃত হলে সাহিত্যের জ্ঞানভান্ডার সম্প্রসারিত ও সমৃদ্ধ হবে।
ষোড়শ শতকের বিখ্যাত লেখক ছিলেন মধুসূদন আচার্য। তিনি একজন বিখ্যাত দার্শনিক। বাকলার কোটালীপাড়ায় জন্ম হলেও সংসারত্যাগী ‘মধুসূদন সরস্বতী’ নামে বাকলা-পটুয়াখালী অঞ্চলে বসবাস করতেন। তিনি সম্রাট আকবর কর্তৃক সম্মানিত হয়েছিলেন। তার রচিত বিশখানার অধিক গ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য অদ্বৈত মঞ্জরী, অদ্বৈত সিদ্ধি, সিদ্ধান্ত তত্ত্ববিন্দু, প্রস্থান ভেদ, আনন্দ মন্দাকিনী প্রভৃতি। সপ্তদশ ও অষ্টাদশ শতাব্দীতেও পটুয়াখালীতে সাহিত্যের ধারা চলমান ছিল। বিশেষ করে এ সময়ে পর্তুগিজ ও ইংরেজদের কেউ কেউ এবং তাদের অনুসারীরা এ ধারাকে বেগবান করেছেন। তবে সুস্পষ্ট কারও নাম জানা যায় না। পটুয়াখালী অঞ্চলেই তাদের বসবাস।
উনিশ শতকের অনেক কবি-সাহিত্যিক পটুয়াখালীর সাহিত্যাঙ্গনে উজ্জ্বল নক্ষত্র। এদের মধ্যে দ্বোভাষী পুঁথি সাহিত্যের খ্যাতিমান কবি আবুল হোসেন মুন্সি (১৮১৯-১৮৮৪ খ্রি.), মরমি সুফিসাধক ও সমাজ-সংস্কারক ছিলেন। সভ্যতার আলোবহির্ভূত দক্ষিণবাংলার মানুষের অন্ধকার ঘুচাতে রচনা করেন পুঁথি সাহিত্য। দ্বিপদী, ত্রিপদী, ধুয়া, পয়ার, সুর ও ছন্দে বাংলাসহ আরবী, ফারসি, উর্দু, হিন্দি শব্দবহুল ব্যবহৃত তার রচিত পুঁথি বাংলা সাহিত্যের গৌরব। হাকীকাতুল আম্বিয়া, ফয়ছলে আহকাম, যিকরনামা, আহকামুছ সালাত ও কুয়াতুল মুমিনীন পাঁচখানা গ্রন্থ তিনি রচনা করেন। আধ্যাত্মিকতায় পরিপূর্ণ এসব পুঁথি বাংলা সাহিত্যের অনন্য সম্পদ। মুরাদিয়ার মুন্সি সালেহউদ্দিন ‘তাজল আলম’ নামে একখানা পুঁথি রচনা করেন। তার গ্রন্থখানা বাংলা সাহিত্যে অনন্য। এরূপ বহু পুঁথি গ্রাম গঞ্জের জনপদে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। নাম না জানা লেখকের কোনো কোনো পুঁথি মানুষের মুখে মুখে উচ্চারিত হয়েছে; তন্মধ্যে হাসেম গাজীর পুঁথি, আসমান সিংহের পুঁথি অন্যতম। যথাযথ সংরক্ষণের অভাবে এগুলো এখন বিলুপ্ত প্রায়।
পটুয়াখালীর বদরপুরের মুসলিম আলী আখন্দ সাহিত্য বিনোদ (১৯১৯-২০০৪ খ্রি.) একাধারে কবি সাহিত্যিক গবেষক গীতিকার ও ছড়াকার ছিলেন। অসাধারণ প্রতিভার অধিকারী এই সাহিত্যিক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫১ খ্রিষ্টাব্দে ডিপ্লোমা-ইন-এডুকেশন ফার্স্টক্লাস ফার্স্ট এবং ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দে এম.এড ফার্স্টক্লাস ফার্স্ট ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৪৩ খ্রিষ্টাব্দে শিক্ষাবিষয়ক প্রবন্ধ লিখে ‘বঙ্গীয় পুরাণ পরিষদ’ (শান্তিপুর, নদীয়া) থেকে ‘সাহিত্য বিনোদ’ উপাধি পেয়েছেন এবং তিনি আর্যভারত বিদ্যাতীর্থের সভ্য হন। পটুয়াখালী থেকে প্রকাশিত পটুয়াখালী সমাচার, মাসিক আন্ধারমানিকসহ অনেক পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন। তার প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সাহিত্য সংকলন, নৈতিক বলে সবল হও, জঙ্গে কাশ্মীর ও অন্যান্য কবিতা, শিশু পর্যবেক্ষণ, বিজ্ঞানের আলো, তন্ত্রের বিবর্তন প্রভৃতি।
মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্তের নাম কে না জানে! ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের পথিকৃত তিনি। অশ্বিনী কুমার দত্ত (১৮৫৬-১৯২৩ খ্রি.) পটুয়াখালীর লাউকাঠি চৌকিতে জন্মগ্রহণ করেন এবং একজন প্রতিভাশালী সাহিত্যিক ছিলেন। ছাত্রজীবনে ‘ছাত্রবন্ধু’ নামে পাক্ষিক পত্রিকা প্রকাশ করেন। রচনা করেন অনেক পুস্তক। যুগস্রষ্টা এ মনীষীর রচিত বইয়ের মধ্যে ভক্তিযোগ, কর্মযোগ, দুর্গোৎসব, তত্ত্ব ও প্রেম উল্লেখযোগ্য। উনিশ শতকের তিরিশের দশক থেকে দাপিয়ে লিখেছেন পটুয়াখালী জেলার লোহালিয়া গ্রামের বিডি হাবীবুল্লাহ্ (১৯০৮-১৯৯৮ খ্রি.)। অসাধারণ বাগ্মী এই লেখকের ‘পল্লী মঙ্গল’ নাটক তার প্রথম সাহিত্যকর্ম। এরপর অনেক গ্রন্থ রচনা করেছেন। তার বেশিরভাগ গ্রন্থ আঞ্চলিক ভাষায় রচিত। হেদায়েতী ব্লাক মার্কেট, দূরমুজ কিতাব, মিলন চুক্তি, এই কি প্রগতি? এবং শেরেবাংলা জীবনীগ্রন্থ তার অনন্য রচনা। সাহিত্যে বক্তৃতার বাছাইকৃত সংযোজন নিয়ে তার একটি বিশেষ সংকলন প্রকাশিত হওয়ায় তিনি ‘বাক্ সম্রাট’ খ্যাতি অর্জন করেন।
স্বাধীনতা পূর্ব এবং পরবর্তী কয়েক দশকজুড়ে যারা পটুয়াখালীর সাহিত্যাঙ্গন মাতিয়ে রেখেছেন তাদের অনেকেই ত্যাগ করেছেন ইহজগৎ। তবে সৃজনশীল কাজের মধ্যেই তাদের অবদান উল্লেখযোগ্য। সৃজনশীল সাহিত্যচর্চার মধ্যে নিজেকে ব্যাপৃত রেখেছেন কবি খোন্দকার খালেক (১৯২৫-১৯৯৪ খ্রি.)। তিনি একজন ভাষাসৈনিক ও সাহিত্য সংগঠক ছিলেন। শেরেবাংলার জীবনী গ্রন্থ ‘এক শতাব্দী’ রচনায় সাহিত্য ক্ষেত্রে অনন্য অবদানের জন্য ‘শেরেবাংলা জাতীয় পুরস্কার’ স্বর্ণপদক ও সম্মাননা স্মারকে ভূষিত হন ১৯৮৯ খ্রিষ্টাব্দে। তার রচিত ‘জিনের বাদশা’ নাটক অবলম্বনে চিত্র পরিচালক জহির রায়হান ‘দুই ভাই’ ছায়াছবি নির্মাণ করেন। খোন্দকার খালেকের অন্যান্য গ্রন্থাবলির মধ্যে চিঠি (পত্র কাব্য), দুই দাবাড়ে (নাটক), ধর্ম ও সমাজ (প্রবন্ধ), একুশের নামতা (ছড়া) উল্লেখযোগ্য। তার অমর কীর্তি কয়েকশত গান বাংলা সাহিত্যের অনন্য সম্পদ।
এপার বাংলা ওপার বাংলার যাত্রানাট্যকারদের মধ্যে অন্যতম মাস্টার সেকেন্দার আলী (১৯১৯-২০০৯ খ্রি.)। পটুয়াখালী শহরেই বসবাস করতেন। ‘বেদকন্যা’ যাত্রানাটক রচনা করে সাহিত্যজগতে তার পদার্পণ। পিতার মোসলেম যাত্রাপর্টিতে অভিনয়সূত্রে প্রবেশ করে নিজেই ‘বাবুল অপেরা’ যাত্রাদল প্রতিষ্ঠা করেন এবং একের পর এক রচনা করেন হোসেন শহীদ, হাসানের বিষপান, এজিদ বধ জয়নাল উদ্ধার, সাত ভাই চম্পা, নৌকা বিলাস, রক্তকমলসহ ২২টি যাত্রানাটক। ওমর দি গ্রেট, হজরত নিজাম উদ্দিন আউলিয়া তার অনন্য রচনা।
পটুয়াখালীর সাহিত্যযাত্রায় অনেকেই স্থানীয়ভাবে ও জাতীয়ভাবে সুনাম-খ্যাতি কুড়িয়েছেন। সাহিত্যে রেখেছেন অসাধারণ অবদান। তাদের মধ্যে প্রবন্ধকার ইয়াকুব আলী সিকদার সাহিত্য বিনোদ (১৯২৫-২০০৭ খ্রি.), মোহাম্মদ কেরামত আলী-সাবেক এমপি ও মন্ত্রী (১৯২৬-২০০৪ খ্রি., পবিত্র কুরআনের কয়েকটি সূরার অনুবাদ ‘দ্য মেসেজ’ লিখে স্মরণীয় হয়েছেন), ছোট গল্পকার ও উপন্যাসিক আলী আসগর (১৯৩১-২০০৪ খ্রি.), ঔপন্যাসিক কাজী আবদুল মতলেব (১৯৩৪-২০০০ খ্রি.), নাট্যকার গীতিকার কবি নির্মল কুমার দাশগুপ্ত (১৯৩৫-২০১৭ খ্রি.), কবি হাবীবুল্লাহ্ বিশ্বাস (১৯৩৬-২০১৪ খ্রি.), সাহিত্যিক নয়ন রহমান (১৯৪০-২০১৪ খ্রি.), কবি সাহিত্যিক আ জ ম সিকান্দার মোমতাজী (১৯৪২-২০১০ খ্রি.), কবি আবদুল আজিজ আখন্দ (১৯৪২-২০০৯ খ্রি.), সদ্য প্রয়াত ড. আনু মাহ্মুদ (প্রকাশিত বই ১২৫টি), ড. রতন লাল চক্রবর্তী, বিশ্বাস হাবিবুর রহমান প্রমুখ উল্লেখযোগ্য।
মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তীকালে পটুয়াখালীর সাহিত্যাঙ্গন নতুন মাত্রায় জেগে ওঠে। জন্মলাভ করে অনেক সাহিত্য সংগঠন। জেলা লেখক সমিতি, পটুয়াখালী সাহিত্য সংসদ, জেলা লেখক সমন্বয় পরিষদ, দখিনের কবিয়াল, সাহিত্য তরঙ্গ, পটুয়া সাহিত্য পরিষদ, শহীদস্মৃতি পাঠাগারসহ অনেক সাহিত্য সংগঠন পটুয়াখালীর সাহিত্য উজ্জীবিত রাখার প্রয়াসে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। পূর্বসূরিদের পথ অনুসরণ করে এগিয়ে চলে পটুয়াখালীর সাহিত্যাঙ্গন নতুন পরিস্থিতিতে, নতুন আশা-প্রত্যাশার দোলাচলে। যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমুন্নত রাখতে অদ্য পর্যন্ত লেখালেখিতে সক্রিয় থেকে পটুয়াখালীতে এবং কেউ কেউ জাতীয়ভাবে সমাদৃত হয়েছেন তারা হলেন, ‘আগুনমুখার মেয়ে’খ্যাত নূরজাহান বোস (বাংলা একাডেমি পদকে ভূষিত), একাধিক গ্রন্থের প্রণেতা ও কিশোর মুক্তিযোদ্ধা কবি দুখু বাঙাল লেখালেখির জন্য অর্জন করেছেন অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা, কবি প্রাবন্ধিক গবেষক মুস্তাফা মজিদ, ড. এসএম আনোয়রা, সাহিত্যিক মমতাজ বেগম, কবি মাওলানা রূহুল আমীন খান, কবি রাধেশ্যাম দেবনাথ, ড. আবদুল লতিফ মাসুম, প্রফেসর ড. আউয়াল বিশ্বাস, কবি সাহিত্যিক বাবুল সিরাজী, কবি গাজী লতিফ, সাহিত্যিক শাহনেওয়াজ চৌধুরী, কবি আবুল বাশার সেরনিয়াবাত, মুস্তাফিজুর রহমান মিলন, মোঃ মোয়াজ্জেম হোসেন, সুভাষ চন্দ, অশোক দাস, সাহিত্যিক আনোয়ার হোসেন বাদল, সাহিত্যিক মাসুদ আলম বাবুল, কবি শঙ্খচূড় ইমাম, শায়লা শহীদ, আরেফিন রব, কাইয়ুম আহমদ জুয়েল, ফয়সাল বারী, ড. মোঃ আবদুল ওহাব মিয়া, তৌহিদুল ইসলাম কনক, সাহানা পারভীন সিক্তা, সালমা বেগম, কালিম মোহাম্মদ, গাজী ইব্রাহীম আল মামুন, কামরুন নাহার জেসমিন, লুৎফুল বারি পান্না, জাহাঙ্গীর হোসাইন মানিক, রাশিদুল রাশেদ, এসএম সালাম রেজা, সাইফুল ইসলাম জুয়েল, জান্নাতুল ফেরদাউস শিশির, মোঃ সাইদুর রহমান, রাজীব আহমেদ, রওশন জাহান মাসুমা, শাহান আরা আচল, মাসুদ পারভেজ প্রমুখ।
রাজধানী থেকে বহু দূরের এ ভাটি অঞ্চলে লেখক-লেখিকাদের লেখার ও প্রকাশনার সুযোগ সীমিত। ভালো সুযোগ পেলে হয়তো অনাগত ভবিষ্যতে পটুয়াখালীর জনপদে অনেক বড় সাহিত্য প্রতিভার বিকাশ হতে পারে, এই আমাদের প্রত্যাশা।