রাশিয়া দাবি করছে তারা ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে সামরিক বাহিনীর একটি ট্রেনের ওপর হামলা চালিয়ে ইউক্রেনের কয়েক শ’ সৈন্যকে হত্যা করেছে।
রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দেয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, তাদের একটি ইস্কান্দর ক্ষেপণাস্ত্র দিনিপ্রপেত্রোভস্ক অঞ্চলের চ্যাপলাইন শহরের একটি রেল স্টেশনে সরাসরি আঘাত করে, যার ফলে ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীর ২০০’রও বেশি সৈন্য নিহত হয়েছে।
‘এতে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর ১০ ইউনিট সামরিক সরঞ্জামাদিও ধ্বংস হয়েছে। এসব অস্ত্র-সামগ্রী ডনবাসের যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠানো হচ্ছিল,’ বলেছে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।
এর আগে ইউক্রেনের পক্ষ থেকে বলা হয় যে রেল স্টেশনে চালানো এই হামলায় অন্তত ২৫ জন বেসামরিক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন।
কিয়েভের কর্মকর্তারা বলছেন, নিহতদের পাঁচজন একটি গাড়িতে ছিলেন, যাদের সবাই পুড়ে মারা গেছেন।
জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদের এক বৈঠকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এই হামলার বিষয়ে অবহিত করেন।
তবে তিনিসহ ইউক্রেনের কর্মকর্তারা তাদের সামরিক ট্রেনে রাশিয়ার রকেট হামলা এবং তাদের সৈন্য নিহত হওয়ার বিষয়ে কিছু উল্লেখ করেনি।
রাশিয়া সবসময় বেসামরিক স্থাপনায় হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে থাকে।
মস্কো দাবি করে রেলওয়ে অবকাঠামো সামরিক হামলার ‘বৈধ লক্ষ্য’ কারণ এসব ট্রেনে করে ইউক্রেনে পশ্চিমা দেশগুলো থেকে অস্ত্র সরবরাহ করা হচ্ছে।
চ্যাপলাইনের রেলওয়ে স্টেশনে রকেট আক্রমণ ছাড়াও রাশিয়া ইউক্রেনের ৩১তম স্বাধীনতাবার্ষিকীর রাতে দেশটির বিভিন্ন স্থানে রাতভর গোলাবর্ষণ করেছে।
রুশ হামলার ব্যাপারে জনগণকে সতর্ক করার জন্য রাজধানী কিয়েভসহ অনেক জায়গাতেই ঘন ঘন এয়ার সাইরেন বেজে উঠেছে।
ইউক্রেনের কর্মকর্তারা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, বুধবার সারা দেশে ১৮৯ বার সাইরেন বেজেছে। শুধু রাজধানী কিয়েভেই বেজেছে সাতবার।
বলা হচ্ছে, ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর গত ছয় মাসে এক দিনে এত সাইরেন কখনো বাজেনি।
এই দিনটিতে বড় ধরনের হামলার ব্যাপারে ইউক্রেনের কর্মকর্তারা কয়েকদিন ধরেই সতর্ক করে দিচ্ছিলেন। এ ব্যাপারে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিও জনগণকে সজাগ থাকতে বলেছিলেন।
ইউক্রেনের কর্মকর্তারা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, বুধবার রাতে রাজধানী কিয়েভ এবং তার আশেপাশেও বেশ কয়েকটি রকেট হামলা চালানো হয়। কিন্তু সেসব রকেট ইউক্রেনের বিমান- প্রতিরোধী সিস্টেম দিয়ে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে।
ইউক্রেনের একজন আঞ্চলিক কর্মকর্তা ওলেক্সেই কুলেবা টেলিগ্রাম চ্যানেলে বলেছেন, রাজধানী কিয়েভের উত্তরে ভিশগোরোদ অঞ্চলেও রুশ বাহিনী রকেট হামলা চালিয়েছে।
ইউক্রেনের আরো যেসব শহরে রাতভর গোলাবর্ষণ করা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে খারকিভ, মিকোলাইভ, নিকোপোল ও দানিপর।
কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে বুধবার যখন দেশটিতে স্বাধীনতার বার্ষিকী পালিত হচ্ছিল সেসময় এসব হামলা চালানো হয়েছে। এদিন ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানেরও ছয় মাস পূর্ণ হয়েছে।
ক্রেমলিন ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে এটাই সবচেয়ে বড় সামরিক সংঘাত।
কর্মকর্তারা বলেছেন, বুধবার রাতে রুশ বাহিনী নিয়ন্ত্রিত দোনেৎস্ক অঞ্চলের ছোট্ট একটি শহরের আবাসিক এলাকায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়েছে। খবরে বলা হয়েছে, এই হামলায় অন্তত তিনজন নিহত হয়েছে।
রুশ সৈন্যরা যে জাপোরিঝঝিয়া পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র দখল করে রেখেছে তার কাছের নিকোপোল শহরেও গোলাবর্ষণের খবর পাওয়া গেছে।
স্থানীয় সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে ইউক্রেনের সরকারি একটি টিভি চ্যানেলে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার দক্ষিণাঞ্চলীয় খেরসন অঞ্চলে দিনিপ্রো নদীর ওপর একটি সেতুতে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে।
রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর দক্ষিণাঞ্চলীয় কমান্ড বলেছে দিনিপ্রো নদীর ওপর নোভা কাখোভকা বাঁধের কাছে আরো একটি সেতুর ওপরেও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়েছে।
রুশ বাহিনীর কাছে রসদ সরবরাহের জন্য এই দুটো সেতুই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
রণাঙ্গনের এসব খবর বিবিসির পক্ষে নিরপেক্ষ সূত্রে যাচাই করে দেখা সম্ভব হয়নি।
সূত্র : বিবিসি