২০৩ রানের লক্ষ্য! ১৭ ওভারে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে এই লক্ষ্য অসম্ভব বললে ভুল হবে। কিন্তু সাকিব আল হাসান বল হাতে দেখালেন ম্যাজিক। তাতে স্কোর বোর্ডে ৪৩ রান উঠতেই আয়ারল্যান্ড হারিয়ে ফেলে ৬ উইকেট। অবশেষে টেনেটুনে ৯ উইকেট হারিয়ে ১২৫ রানে থামে সফরকারীরা। সাকিব তুলে নেন ২২ রান খরচ করে ৫ উইকেট। সেইসঙ্গে তিনি এখন আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি সর্বোচ্চ ১৩৬ উইকেটের মালিক। এটি এই ফরম্যাটে তার দ্বিতীয় পাঁচ উইকেট শিকার। সেই সুবাদে চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ৭৭ রানের জয় নিয়ে ঘরের মাঠে টানা দ্বিতীয় সিরিজ নিশ্চিত করে স্বাগতিকরা। এটি রানের দিক থেকে টাইগারদের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যবধানে জয়। সর্বোচ্চ ৮৪ রানের জয় পেয়েছিল ২০২১ এর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে পাপুয়া নিউগিনির বিপক্ষে।
আইরিশদের বিপক্ষে লড়াইয়ের আগে নিজেদের মাঠে এই ফরম্যাটের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে হোয়াটওয়াশ করেছিল বাংলাদেশ। এ জয়ে আইরিশদেরও হোয়াটওয়াশ করার হাতছানি বাংলাদেশের সামনে। গতকাল বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে ঝড়ো ইনিংস খেলে ওপেনার লিটন দাস। ১৮ বলে দেশের দ্রুততম ফিফটি তুলে নেন। এরপর সেঞ্চুরি আশা জাগিয়েও আউট হন ৮৩ রানে। তার সঙ্গে আগের ম্যাচ ফিফটি হাঁকানো ওপেনার রনি তালুকদারকে গড়ে তোলেন ওপেনিংয়ে দেশের সর্বোচ্চ ১২৪ রানের জুটি। তার ব্যাট থেকে আসে মাত্র ২৩ বলে ৪৪ রান। ৬ রানের জন্য টানা দ্বিতীয় ফিফটি মিস করেন এই ব্যাটার। বল হাতে পাঁচ আর ব্যাটে ৩৮ রান করে অপরাজিত থাকা টাইগার অধিনায়ক সাকিব হন ম্যাচ সেরা। ১৭ ওভারে ২০৩ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে প্রথম বলেই উইকেট হারায় আয়ারল্যান্ড। পেসার তাসকিনের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে খালি হাতে ফিরেন আইরিশ অধিনায়ক পল স্টার্লিং। তাসকিনের মতো দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলে উইকেট শিকার করেন সাকিবও। রনিকে ক্যাচ দিয়ে সাকিবকে প্রথম উইকেট দেন ৬ রান করা লরকান টাকার। নিজের দ্বিতীয় ওভারে জোড়া উইকেট তুলে নেন সাকিব। রস অ্যাডায়ার ও গ্যারেথ ডেলানিকে ৬ রানে আউট করেন সাকিব। নিজের তৃতীয় ওভারেও জোড়া আঘাত হানেন তিনি। এবার জর্জ ডকরেল ২ ও হ্যারি টেক্টরকে ২২ রানে বিদায় দেন সাকিব। এতে ৩ ওভারে ১৪ রানে ৫ উইকেট পূর্ণ করেন সাকিব। ১১৪ ম্যাচের টি- টোয়েন্টিতে দ্বিতীয়বারের মতো ইনিংসে ৫ উইকেট নিলেন তিনি। ২০১৮ সালে মিরপুরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম পাঁচ উইকেট নিয়েছিলেন সাকিব। টেক্টরকে শিকার করে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে নিউজিল্যান্ডের পেসার টিম সাউদিকে সরিয়ে সর্বোচ্চ উইকেট শিকার হন সাকিব। ১১৪ ম্যাচে সাকিবের উইকেট এখন ১৩৬টি, ১০৭ ম্যাচে সাউদির শিকার আছে ১৩৪ উইকেট। সাকিবের ঘূর্ণিতে ৪৩ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়ে আয়ারল্যান্ড। এতে দ্রুত গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কায় পড়ে আইরিশরা। কিন্তু ৭ নম্বরে ব্যাট হাতে নামা কার্টিস ক্যাম্ফার ঝড় তোলেন। ২৯ বলে ফিফটি তুলে দলের রান ১শ’ পার করেন তিনি। ১৫তম ওভারে তাসকিনের বলে আউট হন ক্যাম্ফার। ৩টি করে চার-ছক্কায় ৩০ বলে ৫০ রান করেন তিনি। শেষ পর্যন্ত ১৭ ওভারে ৯ উইকেটে ১২৫ রানে শেষ হয় আয়ারল্যান্ড ইনিংস। বাংলাদেশের সাকিব ২২ রানে ৫টি ও তাসকিন ২৮ রানে ৩টি উইকেট নেন। টি-টোয়েন্টিতে প্রথমবার টানা পাঁচ ম্যাচ জিতলো বাংলাদেশ। আগের সিরিজে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জয় এসেছি ৩-০তে। এবার একই ব্যবধানে আয়ারল্যান্ডকে হারানোর অপেক্ষা। সিরিজের শেষ ম্যাচটি শুক্রবার সাগরিকা স্টেডিয়ামে। অধিনায়ক সাকিব আইরিশদের সেই ম্যাচে হোয়াইটওয়াশ করার হুঙ্কার দিলেও তিনি খেলবেন কিনা তা নিয়ে আছে সংশয়। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে তৃতীয় ম্যাচের আগেই সাকিব যাবেন ভারতে কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে আইপিএল খেলতে। সেই হিসেবে পরের ম্যাচ একদশে বড় পরির্তনই দেখা যেতে পারে। এর আগে সাগরিকায় তিন ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজের দ্বিতীয়টিতে আয়ারল্যান্ডের সামনে ২০৩ রানের লক্ষ্য দিয়েছে স্বাগতিকরা। বৃষ্টির বাধায় ১৭ ওভারে নেমে আসা ম্যাচে ৩ উইকেট হারিয়ে ২০২ রান করে বাংলাদেশ। এবারই প্রথম টানা দুই টি- টোয়েন্টিতে দুইশ’ ছাড়ানো ইনিংস খেললো বাংলাদেশ। এর আগের ম্যাচে ৫ উইকেট হারিয়ে করেছিল ২০৭ রান।