রানার প্রতিনিধি: বাংলাদেশী নতুন প্রজন্মের সঠিক পথ-নির্দেশনার বাহন মুনা। নিজেদের আধ্যাত্মিক, নৈতিক ও সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারের সংরক্ষণ করতে সক্ষম হয় মুনা সে ব্যাপারে নতুন প্রজন্মকে সচেতন করছে।
উত্তর আমেরিকা প্রবাসী বাংলাদেশী মুসলমানদের সর্ববৃহৎ দাওয়াতী সামাজিক সংস্থা মুনা ((মুসলিম উম্মাহ অব নর্থ আমেরিকা)’র সপ্তম কনভেশন উপলক্ষে গত ২ মার্চ নিউইিয়র্ক সিটির জ্যাকসন হাইট্স’এর একটি রেস্টুরেন্টে অনুষ্ঠিত সাংবাদিক সম্মেলনে মুনার কার্যক্রমের বিবরণীতে এমন মন্তব্য করা হয়।
মুনার অন্যতম নর্থজোন প্রেসিডেন্ট আবদুল্লা আরিফের পরিচালনায় সাংবাদিক সম্মেলনে পবিত্র কোরআন থেকে তেলওয়াত করেন প্রকৌশলী নাজির উদ্দিন।
মঞ্চে উপবিস্ট ছিলেন মুনার ন্যাশনাল ভাইস প্রেসিডেন্ট ডাঃ সাইদুর রহমান চৌধুরী, ন্যাশনাল এক্সিকিউটিভ ডাইরেক্টর হারুন-অর রশিদ, মহাসম্মেলনের কনভেনর আরমান চৌধুরী ও মুনা নিউইয়র্ক সিটি সাউথজোন প্রেসিডেন্ট আহমেদ আবু ওবায়েদা সালেহ।
চলতি বছরের ৩, ৪, ও ৫ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম অঙ্গরাজ্য পেনসিলভেনিয়ার রাজধানী ফিলাডেলফিয়ায় অবস্থিত পেনসিলভেনিয়া কনভেনশন সেন্টারে এই মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।
সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে মুনার ন্যাশনাল ভাইস প্রেসিডেন্ট ডাঃ সাইদুর রহমান চৌধুরী তার বক্তব্যের শুরুতে সম্প্রতি নতুন দিল্লী মৌলবাদী হিন্দু সন্ত্রাসীদের হামলায় নিহত-আহতদের জন্য শোক প্রকাশ করে তাদের পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান।
তিনি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাস থেকে মানবতাকে রক্ষার জন্য মহান আল্লাহর রহমত কামনা করেন।
তিনি বলেন, আসন্ন এই কনভেনশন মুসলিম জীবনে বিশেষকরে বাংলাদেশী-আমেরিকান পরিবারের উপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে।
মুনাকে একটি দাওয়াতি ও সামাজিক সংগঠন হিসেবে অভিহিত করে ডাঃ সাইদুর রহমান চৌধুরী বলেন, মানুষের ব্যক্তিগত, নৈতিক ও সামাজিক মানোন্নয়নের জন্য সার্বিক প্রচেষ্টা চালানোর মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত হয় মুনা। ১৯৯০ সালে নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যে কর্পোরেশনভুক্ত হওয়া মুনার কার্যক্রম বর্তমানে আমেরিকার ৩০টির অধিক রাজ্যে বিস্তৃত।
তিনি বলেন, মুসলিমদের প্রাত্যহিক, সামাজিক ও ধর্মীয় কর্মকান্ড এবং জাতীয় জীবনে ভূমিকা পালনের জন্য সংগঠিত করতে মুনা আপ্রাণ প্রচেষ্টা করছে, যেন আমরা আল্লাহ এবং তার রাসূল হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’এর নির্দেশনা ও আদর্শ অনুসারে মানবতার সেবা করে যেতে পারি।
ডাঃ সাইদুর রহমান চৌধুরী বলেন, বিগত কনভেনশনগুলোর বিভিন্ন থিমকে সামনে রেখে আসন্ন কনভেনশনের মূল প্রতিপাদ্য “অষ ছঁৎ’ধহ, এঁরফধহপব ভড়ৎ ঐঁসধহরঃু” আল কুরআনকে গোটা মানব জাতির পথনির্দেশ হিসেবে অভিহিত করে তিনি বলেন, এই মহাগ্রন্থ পথ-ভ্রান্ত দিকহারা মানব জাতিকে কল্যাণকর ও নির্ভূল পথ প্রদর্শন করে। “ব্যক্তি জীবন থেকে রাষ্ট্রীয় জীবন, মানব দেহের অভ্যন্তরে লুকায়িত অন্তরকণ থেকে সৃষ্টি লোকের বিশাল রাজ্যে বিস্তৃত মানব সম্পর্কিত প্রতিটি স্তরে বিশ্ববাসীর কল্যাণে এক নির্ভূল গাইড হিসেবে ভূমিকা রাখে এই মহাগ্রন্থ”।
ডাঃ চৌধুরী বলেন, “এটা বিজ্ঞানময়, এটা অলৌকিক পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি। এটা একজন বিশ্বাসী মানুষের শর্তাংশ। ব্যক্তি পরিবার এবং সমাজ পরিবর্তনের একমাত্র শ্বাশত চ্যালেঞ্জিং বিধান। এটা শুধু মুসলিম তথা ইসলামে বিশ্বাসীদের জন্য নয়, এটা গোটা মানব গোষ্ঠির উন্নতি ও অগ্রগতির স্বর্গীয় সোপান।”
তিনি বলেন, এ মহাগ্রন্থের কল্যাণকর পরশ প্রতিটি হৃদয়ে, প্রতিটি ঘরে, প্রতিটি সমাজের রন্ধে রন্ধে পৌঁছে যাক ‘মুনা’ এই বিশ্বাস ধারণ করেই এ বারের কনভেনশনে মূল কেন্দ্রীয় প্রতিপাদ্য বিষয় নির্ধারণ করেছে।
তিনি বলেন, মুনা মুসলিমদেরকে তাদের ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে ইসলাম পালনের এবং অমুসলিমদের কাছে ইসলামের সঠিক শিক্ষা তুলে ধরতে আহবান করে।
ডাঃ সাইদুর রহমান চৌধুরী জানান, মুনা আমেরিকা কিংবা বিদেশে কোন রাজনৈতিক সংগঠনের সাথে সংশি¬ষ্ট নয়। প্রতিষ্ঠিত হবার পর থেকেই মুনা নিজস্ব স্বতন্ত্র সংবিধান এবং কর্মসূচি ও কর্মপদ্ধতির আলোকেই পরিচালিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, মুনার একজন ব্যক্তিকে সংশোধনের মাধ্যমে সর্বাঙ্গীন সামাজিকভাবে কল্যাণকর ব্যক্তিতে পরিণত করার জন্য জরুরী কার্যক্রম গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে। এ লক্ষ্যে মুনা ব্যক্তিদেরকে আধ্যাত্বিক, নৈতিক এবং সামাজিক-সাংস্কৃতিক শিক্ষা ও প্রশিক্ষন কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছে। মুনা চায় এমন সব প্রশিক্ষিত মানব সম্পদের উন্নয়ন, যারা প্রতিপালক আল্লাহ তাআলার সাথে সম্পর্কে সামঞ্জস্য রক্ষা করে চলে এবং একই সময়ে সমাজের সর্বক্ষেত্রে উৎপাদনমুখী ভূমিকা পালন করে।
মুনার এই কর্মকর্তা জানান, মুনা স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে নিজেদের সাধ্য ও সামর্থানুযায়ী সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের সদস্যদেরকে বিভিন্ন ধরনের দাতব্য ও সমাজকল্যাণমূলক কর্মকান্ডে প্রতিনিয়ত উৎসাহিত ও সংযুক্ত করছে যেন তারা যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে দু:স্থ মানবতার পাশে দাঁড়াতে পারে। আর এরই অংশ হিসেবে ছোট ছোট কর্মসূচির পাশাপাশি ন্যাশন ওয়াইড আয়োজন করেছে সপ্তম বারের মতো কনভেনশন Ñ মুনা কনভেনশন ২০২০।
ডাঃ সাইদুর রহমান চৌধুরী বলেন, মুনা অরাজনৈতিক সংগঠন হলেও মুনা রাজনৈতিক নাগরিক ও নাগরিক সচেতনতা সৃষ্টি করতে চায় যেন রাজনৈতিক বিষয়াবলীতে নাগরিকগণ সচেতনভাবে অংশগ্রহণ করেন এবং এর ফলে রাষ্ট্রীয় জীবনে সুষ্ঠু ধরা তৈরি ও অব্যাহত রাখতে পারেন।
মুনার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য হলো- প্রবাসী বাংলা ভাষাভাষীদের মাঝে কর্মকান্ড পরিচালনা করে তাদের দুনিয়াবী ও পরকালীন কল্যাণ অর্জনে চেষ্টা করে। আমেরিকায় বাংলা ভাষাভাষী মুসলিমরা ও অন্যান্যরা কিভাবে এখানকার মূলধারার অংশগ্রহণ করে কীভাবে নিজেদের অধিকার নিশ্চিত করবে এবং একই সাথে নিজের আধ্যাত্মিক, নৈতিক ও সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারের সংরক্ষণ করবে সে বিষয়ে সচেতন করে। তিনি বলেন মুনা চায় বাংলাদেশী আমেরিকানরা মুনার কর্মতৎপরতায় বেশি বেশি করে সক্রিয় অংশগ্রহণ করুক, তরুণ প্রজন্মকে গড্ডালিকা প্রবাহ থেকে রক্ষা করতে তাদের সন্তানদেরকে মুনা ইয়ুথ এবং ইয়াং সিস্টার অব মুনার সাথে সম্পৃক্ত করুক।
তিনি বলেন, আমেরিকায় ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজ জীবন গঠনে নির্ভুল দিক নির্দেশনা রয়েছে কোরআ’নে এবারের মহাসম্মেলনে তা’ই তুলে ধরবেন বিশ্বখ্যাত সুপরিচিত ও সুবিজ্ঞ আলোচকবৃন্দ। ইংরেজি আলোচকদের পাশাপাশি বাংলাদেশ ও অন্যান্য দেশ থেকে আগত বাংলা ভাষার ইসলামিক স্কলারগণ অংশ নিবেন।
এই সম্মেলনের বিশেষত্ব তুলে ধরে ন্যাশনাল এক্সিকিউটিভ ডাইরেক্টর হারুন-অর রশিদ জানান, তরুণ ছেলে-মেয়েদের জন্য থাকবে আলাদা ‘ইয়ুথ কনভেনশন”। আল কোরআনের অনুসরণে কল্যাণকর জীবন যাপন সম্ভব বিভিন্ন দিক ও বিভাগের উপর সমান্তরাল কর্মসুচি। আলোচনা ছাড়াও থাকবে ‘মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান’, বিভিন্ন ইসলামী ও অন্যান্য সামগ্রীর বিশাল বাজার, ছোট ছেলে-মেয়েদের জন্য শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান Ñ খবধৎহ ্ ঋঁহ, বিভিন্ন রকমের ‘খেলাধুলা-রাইড’। ফিলাডেলফিয়ায় আমেরিকার স্বাধীনতা আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত ঐতিহাসিক দর্শনীয় স্থান পরিভ্রমন ও পরিদর্শনের সুযোগ নিতে পারেন উৎসায়ী অতিথিগণ।
তিনি বলেন, পরিবার-পরিজন বন্ধু-স্বজন আর গোটা আমেরিকা থেকে আসা বাংলা ভাষাভাষীদের এই সর্ববৃহৎ মিলন মেলায় অংশগ্রহণের সুবর্ণ সুযোগ নেয়ার আহ্বান জানান। তিনি জানান, ২০ হাজার অতিথি’র জন্য প্রয়োজনীয় আসনসহ অন্যান্য সুবিধা প্রদানে মুনা আন্তরিকভাবে কাজ করছে।
প্রশ্নোত্তর পর্বে জানানো হয় পরিবারের সদস্যসহ অংশগ্রহণে ইচ্ছুক মেহমানরা খাবারসহ আনুষঙ্গিক সুবিধার জন্য ১১২ ডলার দিয়ে অনলাইনে (সঁহধ.পড়হাবহঃরড়হ.পড়স) তাদের নাম তালিকাভুক্ত করতে পারেন।
পানিসহ খাবারের দাম বেশি কেন এমন প্রশ্নের জবাবে কনভেনর আরমান চৌধুরী বলেন, মুনা অলাভজনক প্রতিষ্ঠান। এই মহাসম্মেলন থেকে মুনা আর্থিকভাবে কিছুই লাভ করে না। বরং মুনাকেই অর্থ ব্যয় করতে হয়। তিনি বলেন সম্মেলন স্থলে প্রতি বোতল পানির দাম তিন ডলার। এটা ওই কনভেশন হল কর্তৃপক্ষের বেঁধে দেয়া দাম। এর ওপর মুনার কোন হাত নেই। তিনি সম্মেলনের বাইরেই অনেকগুলো খাবারের দোকান বসে, যেখানে কমদামে ভালো খাবার পাওয়া যাবে।
সমাপনী ভাষণে মহাসম্মেলনের আহ্বায়ক আরমান চৌধুরী বলেন, শক্তি অনুযায়ী অন্যায়ের প্রতিবাদ করা প্রতিরোধ করা সবার দায়িত্ব। কোথাও অন্যায় হচ্ছে অনুভব করলে আমেরিকার সরকার, বিভিন্ন দেশের দূতাবাস ফোন জন্য পরামর্শ দেন। ভারতে মুসলিমবিরোধী দাঙ্গা সত্বেও বাংলাদেশে যেন কারোরই জানমাল নিরাপদ থাকে তা নিশ্চিত করার জন্য সবাইকে আহ্বান জানান।
মুনার মহাসম্মেলন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এবার বাঙলার পাশাপাশি ইংরেজী অনুষ্ঠানসুচি আরো বাড়ানো হবে। অনুষ্ঠানগুলো আরো আকর্ষণীয় হবে। সম্মেলনে শিশুকিশোরসহ সবাইকে অংশ নেয়ার জন্য তিনি আহ্বান জানান।*