জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দেশের রাজনীতি ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। বলা যায়, রাজনৈতিক পরিস্থিতি সহিংসতার দিকে মোড় নিয়েছে। নির্বাচনকালীন সরকার প্রশ্নে দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে সমঝোতা প্রতিষ্ঠার বিষয়ে যে অচলাবস্থা বিরাজ করছিল, তা ক্রমেই আরও জটিল হচ্ছে।
বিশেষ করে ২৮ অক্টোবরের পর বিএনপির ডাকা হরতাল-অবরোধ এবং সরকার কর্তৃক বিএনপি নেতাদের ধরপাকড়ে সংলাপ-সমঝোতার ন্যূনতম সম্ভাবনাও যেন তিরোহিত হয়েছে। এ পরিস্থিতি দেশকে শুধু রাজনৈতিকভাবেই বিপর্যয়ের সম্মুখীন করবে না, অর্থনৈতিক সংকটকেও আরও গভীর করে তুলবে। তাছাড়া এ পরিস্থিতি থেকে জনমনে সৃষ্ট আতঙ্কের প্রভাব পড়বে শিক্ষাক্ষেত্রেও। কাজেই দেশ ও জনগণের স্বার্থে এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ জরুরি।
সাম্প্রতিক সময়ে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ায় বিশ্বব্যাপী যে অর্থনৈতিক সংকট সৃষ্টি হয়েছে, তা দেশের অর্থনীতিতেও বড় ধাক্কা দিয়েছে। বর্তমানে দেশে সামষ্টিক অর্থনীতির অবস্থা নাজুক। উচ্চ দ্রব্যমূল্যের কারণে সাধারণ মানুষ অসহনীয় কষ্ট ভোগ করছে। আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম ও রেমিট্যান্স পরিস্থিতিও ভালো নয়।
এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য এ মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরি হলো রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। অথচ রাজনীতি ক্রমেই অস্থিতিশীল ও সহিংস হয়ে উঠছে। এক্ষেত্রে আমাদের অভিজ্ঞতা ভালো নয়। অতীতে বিভিন্ন কারণে এবং ক্ষমতার পালাবদলের প্রেক্ষাপটে দেশে সহিংস রাজনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। দিনের পর দিন হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি পালনকালে সহিংসতায় বহু প্রাণহানি হয়েছে। আমরা দেখেছি, সেসময় দেশজুড়ে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে যে ব্যাপক ব্যক্তিগত ও রাষ্ট্রীয় সম্পদহানি হয়েছে, তার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছিল অর্থনীতিতে।
বস্তুত দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক অস্থিরতা অর্থনৈতিক সংকটকে আরও গভীর করে তোলে। ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগে পড়ে এর নেতিবাচক প্রভাব। সামগ্রিক বিচারে ক্ষতিগ্রস্ত হয় জনগণ। কারণ ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগে স্থবিরতা দেখা দিলে রুদ্ধ হয় কর্মসংস্থানের পথ। তাই সব পক্ষেরই উচিত সহিংসতার পথ পরিহার করা। জনস্বার্থকে সবার উপরে স্থান দেওয়া। বস্তুত জনগণের জন্যই যে রাজনীতি, এ সত্য উপলব্ধি করতে হবে রাজনৈতিক নেতাদের।
আমরা মনে করি, রাজনীতিতে যত অচলাবস্থাই বিরাজ করুক, যে কোনো সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান সম্ভব। সেক্ষেত্রে সংলাপ বা আলোচনার বিকল্প নেই। রাজনৈতিক অচলাবস্থায় সৃষ্ট সমস্যাগুলো যদি আলোচনার টেবিলে নিয়ে আসা যায় এবং সেখানে সমাধানের পথ খোঁজা হয়, তাহলে দেশের রাজনীতিতে সংঘাত হ্রাস পাবে। এ ব্যাপারে রাজনৈতিক দলের নেতাদের শুভবুদ্ধির উদয় হওয়া জরুরি।