Sunday, March 26, 2023
spot_img
Homeজাতীয়সহজের ভাঁওতাবাজি, নিশ্চুপ রেল

সহজের ভাঁওতাবাজি, নিশ্চুপ রেল

‘টিকিট সীমিত। তাই মুহূর্তেই শেষ হয়ে যায়। টিকিট প্রত্যাশীরা ২০-২২ ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকলেও আমাদের কী করার আছে। আসন সংখ্যা যা তার চেয়ে শতগুণ টিকিট প্রত্যাশী। পরিবহণ খাতের সবচেয়ে বড় যন্ত্রণার নাম রেলের টিকিট ক্রয়। সহজ ডটকম নামে একটি প্রতিষ্ঠান টিকিট বিক্রি করছে। তারাই যাত্রী দুর্ভোগ চরম করে তুলেছে। কিন্তু রেল এ ক্ষেত্রে নিশ্চুপ। কারণ রেল এখনো টিকিট বিক্রয়ের নিজস্ব সক্ষমতাই অর্জন করতে পারেনি।’ কথাগুলো বলছিলেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা। ২৩ এপ্রিল থেকে অগ্রিম টিকিট বিক্রি হচ্ছে। আগামীকাল বিক্রির শেষ দিন। এদিকে ২০-২২ ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে যারা টিকিট কাটতে পারছেন তারা শত ক্লান্তিতেও খুশি। অন্যদের কেউ নিরাশ হয়ে বাড়ি ফিরছেন। কেউবা পরদিনের টিকিটের জন্য পুনরায় লাইনে দাঁড়াচ্ছেন। এ যুদ্ধ ১ মে পর্যন্ত চলবে।

অনেকে টিকিট পাচ্ছেন না স্বীকার করে রেলপথমন্ত্রী বলেন, কাউন্টারে টিকিট পেতে আগের দিন থেকেই লাইনে দাঁড়াচ্ছে মানুষ। ঢাকায় মাত্র ১৩ হাজার টিটিকের বিপরীতে এক দিন আগেই পাঁচটি স্টেশন কাউন্টারের সামনে লক্ষাধিক মানুষ দাঁড়াচ্ছে। এখানে রেলওয়ের কিছু করার নেই। সীমিত টিকিট। বর্তমান সরকার অনেক নতুন ট্রেন চালু করেছে। এতে আসন সংখ্যা বেড়েছে। আগামী কয়েক বছরে আরও অন্তত ৫০টি নতুন ট্রেন চালু করা হবে। তিনি বলেন, সহজ ডটকম নতুন প্রতিষ্ঠান। চুক্তি অনুযায়ী তারা আমাদের কাছ থেকে ১৮ মাস সময় নিয়েছে। তাদের ক্রুটি রয়েছে। তাদের সার্ভারে সমস্যা রয়েছে। গত দুই দিনে পাঁচটি স্টেশন পরিদর্শন করেছি। একেকটি স্টেশনে তিন হাজারের মতো টিকিট বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু এর বিপরীতে লক্ষাধিক টিকিট প্রত্যাশী।

সোমবার কমলাপুরসহ রাজধানীর ফুলবাড়িয়া, তেজগাঁও, বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন ঘুরে দেখা যায় টিকিট প্রত্যাশীদের দুর্ভোগ। প্রতিটি স্টেশনে এক দিন আগেই লাইনে দাঁড়ান লোকজন। কমলাপুর স্টেশনে কাউন্টার খোলার ঘণ্টা দেড়েকের মধ্যে সব টিকিট বিক্রি হয়ে যায়। টিকিট প্রত্যাশিতরা জানান, অনেকে দুদিন লাইনে দাঁড়িয়েও টিকিট কাটতে পারেননি। রাতে লাইনে ঘুমিয়ে পড়লে, সেখানে অন্যরা এসে জায়গা করে নেয়। এক শ্রেণির লোক কৌশলে লাইন ভেঙে দেয়। পর মুহূর্তেই নতুন করে লাইন তৈরি হয়। এতে লাইনের সামনে থাকা লোকজন পেছনে কিংবা লাইন থেকে ছিটকে পড়েন।

ভুক্তভোগীরা জানান, অনলাইনে টিকিট কাটতে না পেরে অনেকে কাউন্টারে আসেন। কাউন্টারেও চরম দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। ১৫-২০ মিনিট টানা টিকিট দেয়া হলেও পরক্ষণেই সার্ভার ত্রুটির কথা বলে টিকিট বিক্রি বন্ধ করে দেওয়া হয়।

রেলওয়ে অপারেশন দপ্তর সূত্রে জানা যায়, সহজ ডটকমের সমস্যা এবং সার্ভারে ক্রুটির বিষয়টি নজরে এনে তাদের চিঠি দেওয়া হয়েছে। সর্বোচ্চ সতর্ক করে বলা হয়েছে, সার্ভার সমস্যা কিংবা ক্রুটি হলেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কে শোনে কার কথা। অনলাইনে তো প্রবেশই করা যাচ্ছে না।

ভুক্তভোগী অনেকের অভিযোগ, ঘণ্টার পর ঘণ্টা চেষ্টা করেও অনলাইনে প্রবেশ করা যায় না। যদি অনলাইনে প্রবেশই করা না যায়, তাহলে কিসের অনলাইন সেবা। অদক্ষ প্রতিষ্ঠান কী করে এলো, এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে কারা জড়িত, তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। সার্ভার কেন ডাউন হয়ে যাবে। নাকি এর পেছনে অন্য কোনো ভাঁওতাবাজি রয়েছে, তা দুদকসহ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে খুঁজে দেখতে হবে।

সহজ ডটকমের এক কর্মকর্তা জানান, ১৮ মাস সময় নেওয়া হয়েছে। পুরো বিষয়টিকে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টায় যথাযথ কার্যকর করতে কাজ করা হচ্ছে। তাছাড়া প্রতি মিনিটে ১০ লাখ মানুষ অনলাইনে টিকিটের জন্য ঢুকছে। তাদের সাইটে প্রতি মিনিটে দেড় থেকে দুই লাখ মানুষ এক সঙ্গে ওয়েবসাইটে ঢুকে টিকিট কাটার চেষ্টা করতে পারে। এ কারণেই জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে।

এদিকে টিকিট নিয়েও হাজার অভিযোগ রয়েছে যাত্রীদের। টিকিটের গায়ে যা লেখা রয়েছে, তা স্পষ্ট নয়। অনেকে টিকিট হাতে পেলেও অস্পষ্টতার কারণে সিট নাম্বার খুঁজে পান না। এতে চরম বিড়ম্বনায় পড়ছেন যাত্রীরা। এমন দুর্ভোগের কথা জানা গেছে চট্টগ্রাম, রাজশাহী স্টেশন থেকেও।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রেলওয়ের এক কর্মকর্তা জানান, রেলওয়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। এক দিকে লোকবল কম অন্য দিকে অদক্ষ লোকজন। ফলে সহজ ডটকমের ক্রুটি তারা চিহ্নিত করতে পারছেন না। তাই সহজ ইচ্ছেমতো যা খুশি তা করছে। তবে এসব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে সহজের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা শুধু আইটির দিক দেখছি। কোথায় কত টিকিট ছাড়া হবে, না হবে-তা দেখছে রেল। এতে সমস্যা আরও বাড়ছে।’

অগ্রিম টিকিটের বিষয়ে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ম্যানেজার মাসুদ সরওয়ার জানান, সোমবার ২৯ এপ্রিলের (শুক্রবারের) টিকিট বিক্রি করা হয়েছে। মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিলের (শনিবারের) টিকিট বিক্রি হবে। আর ১ মে অগ্রিম টিকিট বিক্রির শেষ দিন। অগ্রিম টিকিট কাটা যাত্রীরা ২৭ এপ্রিল থেকে ভ্রমণ করবেন। স্টেশনে আসা অধিকাংশ মানুষ টিকিট পাননি স্বীকার করে তিনি বলেন, সীমিতসংখ্যাক টিকিট মুহূর্তেই শেষ হয়ে যায়। যারা টিকিট কাটতে পারেনি, তাদের জন্য দুঃখ প্রকাশ ছাড়া কিছুই করার নেই।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments