খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেয়ার আবেদন
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার আবেদন নাকচ করে মত দিয়েছে আইন মন্ত্রণালয়। বলা হয়েছে, বিদেশে যেতে হলে জেলে গিয়ে পরে আদালতে আবেদন করতে হবে। গতকাল সচিবালয়ে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়কমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের এই তথ্য জানিয়েছেন।
আইনমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেছেন, খালেদা জিয়ার স্থায়ী মুক্তি ও চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে তার ভাই যে আবেদনটি করেছিলেন, সে বিষয়ে আইনি মতামত দিয়ে তা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে আইন মন্ত্রণালয়। আইনমন্ত্রী আরও বলেন, খালেদা জিয়া যে আবেদন করেছেন সে আবেদনের কারণে নতুন সিদ্ধান্ত দেয়ার সুযোগ নেই। আমাদের এ উপমহাদেশে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারা যখন সরকার প্রয়োগ করে, সেটা আদালতে চ্যালেঞ্জ যায় না বলে সিদ্ধান্ত আছে। পরিবার চাইলে আদালতে যেতে পারে।
আইনমন্ত্রী বলেন, ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারা অনুযায়ী কোনো দরখাস্ত যদি একবার নিষ্পত্তি করা হয়, সেই নিষ্পত্তিকৃত দরখাস্ত পুনর্বিবেচনা করার আর কোনো সুযোগ এই আইনে থাকে না। ঠিক সেই কারণে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারার উপধারা ১, ২, ৩, ৪, ৫ ও ৬ ব্যাখ্যা করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মতামত পাঠানো হয়েছে। মতামতে বলা হয়েছে, ৪০১ ধারার ক্ষমতাবলে যে দরখাস্ত একবার নিষ্পত্তি করা হয়েছে, সেটা ‘পাস্ট অ্যান্ড ক্লোজড ট্রানজ্যাকশন’, এটা খোলার আর কোনো সুযোগ নেই।
আপনাদের প্রশ্ন আমরা কী আইনি মতামত দিয়েছি-প্রথম কথা হচ্ছে প্রথম যে দরখাস্তটা ছিল যেটা ২০২০ সালের মার্চ মাসে নিষ্পত্তি হয়। সেই দরখাস্তে ছিল যে, খালেদা জিয়া অত্যন্ত অসুস্থ, তাকে কারাগার থেকে মুক্তি দিয়ে তার সুচিকিৎসা যেন হয়, সেই ব্যবস্থা করা। তখন সেই দরখাস্তের ওপর আমরা একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।
তখন দুটি শর্তে তার দণ্ডাদেশ ছয় মাসের জন্য স্থগিত রেখে তাকে মুক্তি দেয়া হয়েছিল।
আনিসুল হক বলেন, এটা ফৌজদারি কার্যবিধির ধারা ৪০১ (১) এর ক্ষমতাবলে। সেখানে দুটি শর্ত দেয়া হয়েছিল, সেই দুটো শর্ত হচ্ছে-তিনি বাসায় থেকে চিকিৎসা নেবেন ও তিনি বিদেশে যেতে পারবেন না। মন্ত্রী বলেন, সেই শর্ত মেনে তিনি কারাগার থেকে মুক্ত হন এবং বাসায় ফিরে যান। সেভাবেই দরখাস্তটা নিষ্পত্তি করা হয়। সেখানে শুধু এটুকু জিনিস উন্মুক্ত ছিল, তা হচ্ছে তাকে দেয়া হয়েছিল ছয় মাসের, ছয় মাস পর বৃদ্ধি করা যাবে কিনা সেই ব্যাপারটি ছিল। সেটা (দণ্ড স্থগিতের মেয়াদ) আটবার বৃদ্ধি করা হয়েছে।
তাহলে বেগম জিয়াকে বিদেশ পাঠাতে তার পরিবারকে কোন প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে-সাংবাদিকরা জানতে চাইলে তিনি বলেন, যেটা আমি আগেও বলেছি, বারবার বলছি। তাকে ৪০১ ধারার আদেশ বলে দুটি শর্তে সাজা বাতিল করে মুক্তি দেয়া হয়েছে, সেটা বাতিল করে পুনরায় বিবেচনা করার সুযোগ থাকলে সেটা করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন বিদেশে চিকিৎসা নিতে খালেদা জিয়াকে আদালতে যেতে হবে-এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে আনিসুল হক বলেন, আদালতে যাওয়ার বিষয়টি তো তাদের কাছে সবসময়ই আছে। ব্যাপারটা আরেকটু পরিষ্কার করি, আমাদের এ উপমহাদেশে ৪০১ ধারায় সরকার যখন ক্ষমতা প্রয়োগ করে, সেটা আদালতে চ্যালেঞ্জ করা যায় না বলে সিদ্ধান্ত আছে।
প্রধানমন্ত্রী যেটা বলেছেন, এখন যে আদেশ আছে সেটা বাতিল করে তাকে যদি কারাগারে নেয়া হয়, তাহলে তিনি আদালতে যেতে পারবেন। এ অবস্থায় (দণ্ড স্থগিত থাকা অবস্থায়) তার আদালতে যাওয়ার সুযোগ নেই। দণ্ড স্থগিত, বাতিল করবেন নাকি-জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাতিল করাটা অমানবিক হবে। বাতিল করবো না।
দণ্ড স্থগিতের মেয়াদ ৬ মাস বাড়ানোর প্রজ্ঞাপন জারির সাতদিনের মধ্যে তারা আবার আবেদন করেছেন-এ বিষয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, এ বিষয়ে আমাদের সঙ্গে তাদের কোনো আলাপ-আলোচনা নেই, হয়ওনি কোনো সময়।
এদিকে, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার আবেদনটি নাকচ করে দেয়ার বিষয়টি রাজনৈতিকভাবে প্রতিহিংসাপরায়ণ বলে অভিযোগ করেছেন খালেদা জিয়ার আইনজীবী ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেয়ার অনুমতি না দিয়ে তার সঙ্গে ‘ভয়ঙ্কর তামাশা’ করা হয়েছে। চিকিৎসা নিতে কারাগারে গিয়ে তারপর আদালতে আবেদন করার কথা বলাও ভয়ঙ্কর তামাশা। রোববার বিএনপি চেয়ারপারসনের চিকিৎসার বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত জানানোর পর তাৎক্ষণিক এক প্রতিক্রিয়ায় এমন মন্তব্য করেন কায়সার কামাল।
তিনি বলেন, ‘আজকের এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে আবারো প্রমাণিত হয়েছে দেশে আইনের শাসন নেই।’ কায়সার কামাল বলেন, ‘ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারায় স্পষ্টভাবে বলা আছে সরকার চাইলেই নির্বাহী আদেশে তাকে মুক্তি দিতে পারে। আজকে প্রধানমন্ত্রী রাজনৈতিকভাবে প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’