Friday, September 29, 2023
spot_img
Homeধর্মসম্পদ বিনষ্ট হতে দেওয়া যাবে না

সম্পদ বিনষ্ট হতে দেওয়া যাবে না

মাকাসিদুস শরিয়াহ বা ইসলামী শরিয়তের প্রধান পাঁচটি উদ্দেশ্য হলো মানবজীবনের পাঁচটি বিষয়ের নিরাপত্তা প্রদান। আর তা হলো—বিশ্বাসের নিরাপত্তা, জীবনের নিরাপত্তা, সম্পদের নিরাপত্তা, মানব বংশক্রমের নিরাপত্তা ও ধারাবাহিকতা এবং মেধা-বিবেকের সুরক্ষা। সুতরাং ইসলামী আইন মানুষের বিশ্বাস ও মূল্যবোধ, জীবন ও সম্পদ, সম্মান ও সম্ভ্রম, সামাজিক ও অর্থনৈতিক সব নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অঙ্গীকারবদ্ধ। তাই কোনো অবস্থাতেই অর্জিত সম্পদ হেলায়-অবহেলায় নষ্ট করা যাবে না।

এ জন্য ইসলামে অপচয় ও অপব্যয় নিষিদ্ধ। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘আত্মীয়-স্বজনকে দেবে তার প্রাপ্য এবং অভাবগ্রস্ত ও মুসাফিরকেও। আর কিছুতেই অপব্যয় কোরো না। যারা অপব্যয় করে তারা তো শয়তানের ভাই। এবং শয়তান তার রবের প্রতি অতি অকৃতজ্ঞ। ’ (সুরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ২৬-২৭)

সম্পদের সুরক্ষা বিধান ও মর্ম অনুধাবনে যারা অক্ষম, তাদের হাতে সম্পদ তুলে দেওয়া নিষিদ্ধ। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের সম্পদ—যা আল্লাহ তোমাদের জন্য উপজীবিকা করেছেন, তা নির্বোধদের হাতে অর্পণ কোরো না…। ’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ৫)

সম্পদের সুরক্ষা বিধানে ইসলামের নির্দেশনা হলো—সম্পদ ব্যয়ের ক্ষেত্রে মধ্যপন্থা অবলম্বন করতে হবে। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘তুমি তোমার হাত তোমার ঘাড়ে আবদ্ধ করে রেখো না এবং তা সম্পূর্ণ প্রসারিত করো না (কার্পণ্য বা অপব্যয় কোরো না)। তাহলে তুমি তিরস্কৃত ও নিঃস্ব হয়ে পড়বে। ’ (সুরা : বনি ইসরাঈল,  আয়াত : ২৯)

সম্পদ নিজের হোক বা অন্যের—তা নষ্ট করা ইসলামের দৃষ্টিতে নিষিদ্ধ। মহান আল্লাহ এক মুনাফিক সম্পর্কে বলেন, ‘যখন সে প্রস্থান করে, তখন সে পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টির এবং শস্যক্ষেত ও জীবজন্তু ধ্বংস করার চেষ্টা করে। আল্লাহ অশান্তি পছন্দ করেন না। ’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২০৫)

ইসলামে চুরি, ডাকাতি, ছলচাতুরীসহ যেকোনো অবৈধ উপার্জনকে হারাম করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা পরস্পর নিজেদের অর্থ-সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস কোরো না এবং মানুষের ধন-সম্পত্তির কিছু অংশ জেনেশুনে অন্যায়ভাবে গ্রাস করার জন্য তা বিচারকদের কাছে পেশ কোরো না। ’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৮৮)

কষ্ট করে উপার্জন করা সম্পদ বিনষ্ট হতে দেওয়া যাবে না। প্রয়োজনে সম্পদের সুরক্ষায় প্রাণপণ লড়াই করে যেতে হবে। সাঈদ ইবন জাইদ ইবন আমর ইবন নুফাইল (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, কোনো ব্যক্তি নিজের ধন-সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণ করতে গিয়ে মারা গেলে সে শহীদ। যে ব্যক্তি এক বিঘত পরিমাণ জমি চুরি করবে কিয়ামত দিবসে তার গলায় সাত তবক জমি ঝুলিয়ে দেওয়া হবে। ’ (তিরমিজি, হাদিস : ১৪১৮)

সম্পত্তি ধরে রাখলে ভবিষ্যতে নিজের জন্য বা উত্তরাধিকারীদের জন্য কাজে আসবে। জাবির (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা তোমাদের সম্পত্তি ধরে রেখো, তা বিনষ্ট কোরো না। নিশ্চয়ই যে ব্যক্তি সারা জীবনের জন্য দান করে, তা তারই হয়ে যাবে, যাকে দান করা হলো, জীবিত অবস্থায় ও মৃত অবস্থায় এবং তার পরবর্তী উত্তরাধিকারীদের জন্য। (মুসলিম, হাদিস : ৪০৮৮)

অন্য হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তোমরা তোমাদের সম্পদ নিজেদের জন্য সংরক্ষিত রাখো। (মুসলিম, হাদিস : ৪০৮৯)

মহান আল্লাহ আমাদের রিজিক বৃদ্ধি করুন এবং আমাদের সম্পদ সুরক্ষিত রাখুন।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments