সমুদ্র সম্পদের তথ্যানুসন্ধানে বঙ্গোপসাগর এলাকায় জরিপ চালাতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে বাংলাদেশ ও চীন। গত ৬ই আগস্ট চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই’র স্বপ্রণোদিত ঢাকা সফরে ‘মেরিন সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি সহযোগিতা’ বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ এক সমঝোতা স্মারক সই হয়। কূটনৈতিক সূত্র বলছে, সমঝোতা স্মারকটি সইয়ের আগে দুই দেশের সরকারি ডেলিগেশন লেভেলে পর্যাপ্ত আলোচনা হয়নি বরং ঢাকাস্থ চীনা দূতাবাসের নজিরবিহীন তৎপরতায় ওয়াং ই ঢাকা পৌঁছানোর কয়েক ঘণ্টা আগে নাটকীয়ভাবে তা চূড়ান্ত হয়। সমঝোতাটি ঢাকা এবং বেইজিংয়ের মধ্যে (জি টু জি) নয় বরং স্বায়ত্তশাসিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওশেনোগ্রাফি ডিপার্টমেন্ট এবং চীনের প্রাকৃতিক সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধিভুক্ত সমুদ্র বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের মধ্যে সই হয়েছে উল্লেখ করে পেশাদার কূটনীতিক ও বিশ্লেষকরা বলছেন, বঙ্গোপসাগরের মতো স্পর্শকাতর এবং স্ট্র্যাটেজিক লোকেশনে জরিপ কার্য পরিচালনা রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে হওয়া উচিত ছিল। কারণ বাংলাদেশের রিসার্চ ভেসেল না থাকায় জরিপ কর্মে সহায়তার জন্য চুক্তিবদ্ধ হওয়া দেশ অর্থাৎ চীনের জাহাজ ব্যবহৃত হবে। এটি সাগরে স্বার্থ রয়েছে এমন দেশগুলোর উদ্বেগ বাড়াবে। যা ঢাকার ওপর বাড়তি চাপ তৈরি করতে পারে। জরিপ কর্মে চীনের গবেষণা জাহাজ ব্যবহারের অনুমতি, জরিপে ব্যবহৃত প্রযুক্তি এবং এর ব্যবহার পদ্ধতির বিষয়ে জানা-বোঝার জন্য সামরিক, বেসামরিক কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে মনিটরিং সেল গঠন করা উচিত মন্তব্য করে এক কর্মকর্তা বলেন, বঙ্গোপসাগরে থাকা সম্পদের জরিপ বাংলাদেশের ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এতে রাষ্ট্রীয় এফোর্ট এবং বোঝাপড়া থাকা উচিত। বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ডিপার্টমেন্টকে নিয়ে প্রভাবশালী একটি দেশের এমন জরিপ কর্মে বাংলাদেশের স্বার্থ কতোটা সংরক্ষণ হবে? তা নিয়ে প্রশ্ন রেখে ওই কর্মকর্তা বলেন, এটা হওয়া উচিত ছিল উভয় সরকারের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তির মাধ্যমে।
কারণ সাগরের সঙ্গে জড়িয়ে আছে দেশীয়, আঞ্চলিক এবং বৈশ্বিক বিষয়াদি। ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী ভারত এবং মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তি হলেও অভিন্ন জলরাশির কারণে দেশ দু’টির সঙ্গে নানা ইস্যুতে প্রতিনিয়ত বোঝাপড়ায় থাকতে হয়। সেখানে জরিপের মতো গুরুত্বপূর্ণ কর্ম পরিচালনায় চীনের উপস্থিতি নতুন করে কোনো সংকট তৈরি করে কিনা- তা নিয়ে ভাবতে হবে। ওই কর্মকর্তা বলেন, সই হওয়া সমঝোতার ‘অবজেকটিভস অ্যান্ড স্কোপ’ এবং ‘ফর্মস অব কোঅপারেশন’ এই দুটি ধারায় এমন সব বিষয় সংযুক্ত করা হয়েছে যা বাস্তবায়নে দুই দেশের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের সিদ্ধান্ত লাগবে। ট্র্যাক টু লেভেল অর্থাৎ শিক্ষা বা গবেষণা প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে এমন নেগোসিয়েশনকে ‘অবাস্তব’ আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, চুক্তিটির অবজেকটিভে অনেক কিছুই স্পষ্ট নয়, এটা ওপেন রেখে দেয়া হয়েছে। ‘টু কনডাক্ট কোঅপারেশন ইন অল রিলেডেট ফিল্ডস অব মেরিন সাইন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ইনক্লুডিং…’ বলে যা লেখা হয়েছে তা বাস্তবায়নের এখতিয়ার কেবল মাত্র সরকারের। কোনো বিশ্ববিদ্যালয় তা বাস্তবায়ন করতে পারে না। সমঝোতা স্মারক পর্যালোচনায় ওই কর্মকর্তা বলেন, বঙ্গোপসাগরে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, পরিবেশ, মৎস্য ও নৌ মন্ত্রণালয়ের ইস্যু আছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম ইউনিট অঙ্গাঙ্গিভাবে যুক্ত। রুলস অব বিজনেস অনুযায়ী প্রত্যেকের অধিক্ষেত্র নির্ধারিত। একটি দেশের সঙ্গে সমঝোতার কারণে সেটি ভায়োলেট হচ্ছে কিনা? তা দেখার বিষয়। সুনীল অর্থনীতি উন্নয়ন পরিকল্পনা এবং রূপকল্প ২০৪১-এর সঙ্গে এই জরিপকর্ম সাংঘর্ষিক কিনা? সেই প্রশ্নও উঠছে। বলা হচ্ছে বঙ্গোপসাগরের জরিপ কর্মের সেনসেটিভিটি সবার জানা। কিন্তু জরিপকর্মে কোন পদ্ধতি ফলো করা হবে তা সমঝোতা স্মারকে উল্লেখ নেই। তাছাড়া সাগরে পতিত হওয়া বড় নদীগুলোর বিষয়টি সমঝোতায় টেনে আনা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন বিশেষজ্ঞরা। যদিও সব সমঝোতা নন-বাইন্ডিং, তারপরও এটি পরবর্তী নেগোসিয়েশনের জন্য রেফারেন্স হয়ে যায় মন্তব্য করে এক বিশ্লেষক বলেন, তাই যেকোনো চুক্তির প্রাথমিক ভিত্তি হচ্ছে সমঝোতা। তাই তা সইয়ের আগে অবশ্যই পর্যাপ্ত সময় নিয়ে তা পর্যালোচনা করা উচিত।
সই হওয়া সমঝোতায় কি আছে?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং চীন সরকারের মিনিস্ট্রি অব ন্যাচারাল রিসোর্সের অধীনে থাকা ফার্স্ট ইনস্টিটিউট অব ওশেনোগ্রাফি’র মধ্যে সই হওয়া সমঝোতা স্মারকের একটি কপি পেয়েছে মানবজমিন। যাতে ৯টি ধারা এবং ৩০টি উপ-ধারা রয়েছে। মেরিন সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি সংক্রান্ত গবেষণা কর্মে পারস্পরিক সহযোগিতার উদ্দেশ্যে সই হওয়া ওই সমঝোতার প্রস্তাবনায় দুই দেশের অভিন্ন কিছু বিষয়ে সম্মতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, বাংলাদেশ ও চীন উভয়ে উপকূলবর্তী দেশ। দেশ দু’টি ভারত মহাসাগরে সৃষ্ট ঝড়-জলোচ্ছ্বাসে প্রতিনিয়ত আক্রান্ত হয়। পরিবেশ এবং আর্থ-সামাজিক দিক থেকেও দুই দেশ সামুদ্রিক ও জলবায়ু দুর্যোগে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত। মেরিন সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, যৌথ সামুদ্রিক পর্যবেক্ষণ, সমুুদ্রস্থানিক পরিকল্পনা প্রভৃতি ক্ষেত্রে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে দুই দেশের সরকার সম্মত হয়েছে জানিয়ে প্রস্তাবনায় আরও বলা হয়, চীন সরকার জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিযোজন সক্ষমতা উন্নয়নে বাংলাদেশকে সহায়তা করবে। মেরিটাইম সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিষয়ক সহযোগিতার ক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ফার্স্ট ইনস্টিটিউট অব ওশেনগ্রাফি অভিন্ন স্বার্থ সংরক্ষণ করবে। উল্লিখিত বিষয়গুলোতে একমত হওয়ার শর্তে চুক্তির অন্যান্য অনুচ্ছেদগুলো অনুসরণ করা হবে বলে ভূমিকায় উল্লেখ করা হয়।
সমঝোতাটির ‘অবজেকটিভস অ্যান্ড স্কোপ’ বা উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য সংক্রান্ত ধারা-১ এ বলা হয়, সামুদ্রিক ও জলবায়ু বিজ্ঞান বিষয়ক গবেষণা এবং প্রযুক্তিগত উন্নয়নে পারস্পরিক সহযোগিতা সম্প্রসারণই সমঝোতার লক্ষ্য। দুই পক্ষের সহযোগিতার মধ্যে থাকছে প্রাকৃতিক সমুদ্রবিজ্ঞান, রাসায়নিক সমুদ্রবিজ্ঞান, সামুদ্রিক ভূতত্ত্ব, সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্র, সমুদ্র প্রকৌশল, সমুদ্রনীতি এবং সামুদ্রিক স্থানিক বিষয়সহ মেরিন সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির সকল ক্ষেত্রে সহযোগিতা। সুনির্দিষ্টভাবে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ, যৌথ সেমিনার, সভা ও কর্মশালার ক্ষেত্রে সহযোগিতা। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ফান্ডের মাধ্যমে অভিন্ন স্বার্থ সম্বলিত যৌথ গবেষণা প্রকল্প গ্রহণ ও পরিচালনা। যৌথভাবে কিংবা এককভাবে অথবা উভয়পক্ষের সম্মতিতে বৈজ্ঞানিক গবেষণার ফল প্রকাশ। দুই পক্ষের সম্মতিতে বর্তমানে এই সহযোগিতার মূল কেন্দ্র হচ্ছে, ‘বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন অঞ্চলের সমুদ্র ও জলবায়ু’। যার মধ্যে রয়েছে- বঙ্গোপসাগরের সামুদ্রিক পরিবেশ পর্যবেক্ষণ ও পূর্বাভাস প্রদান; সাগরে সৃষ্ট এশীয় ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস; গ্রীষ্মমণ্ডলীয় সাইক্লোন, জলোচ্ছ্বাস, তেল নিঃসরণ, উদ্ধার ও অনুসন্ধানসহ সামুদ্রিক পূর্বাভাস এবং প্রয়োগ; বঙ্গোপসাগরের সামুদ্রিক বাস্তুসংস্থান এবং এর সংরক্ষণ; সামুদ্রিক সম্পদ এবং এর ব্যবহার; বাংলাদেশের সামুদ্রিক স্থানিক পরিকল্পনা এবং মোহনায় বাংলাদেশের বড় নদীগুলোর গতিপথ।
‘ফর্মস অব কো-অপারেশন’ বা সহযোগিতার ধরন বিষয়ক অনুচ্ছেদ-২ এ বলা হয়- ভিজিটিং শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম; উভয়পক্ষের অনুমোদিত তথ্য ও উপাত্ত বিনিময়; পারস্পরিক উদ্বেগের বিষয়ে বৈজ্ঞানিক এবং প্রযুক্তিগত সেমিনার, প্রকাশনা এবং গবেষণা জাহাজ (রিসার্চ ভেসেল), পরীক্ষাগার এবং যন্ত্রপাতির ব্যবহার।
‘আদার অ্যাক্টিভিটিজ’ শীর্ষক অনুচ্ছেদ-৩ এ বলা হয়- অনুচ্ছেদ-২ এ বর্ণিত সহযোগিতা ছাড়াও এই সমঝোতার কাঠামোর মধ্যে দুই পক্ষের সম্মতিতে গৃহীত যৌথ কার্যক্রম অনুচ্ছেদ-১ এ বর্ণিত উদ্দেশ্য পূরণে অবদান রাখতে পারে।
তথ্য বিনিময় বিষয়ক অনুচ্ছেদ-৪ এ বলা হয়, অনুচ্ছেদ-২ এ বর্ণিত ‘তথ্য’ বলতে- প্রতিটি গবেষণা প্রকল্পে প্রাপ্ত বৈজ্ঞানিক বা প্রযুক্তিগত তথ্য, ফলাফল, বা তথ্যানুসন্ধানের পদ্ধতি এবং অন্য যেকোনো তথ্য (লিখিত আকারে বা অন্য কোনো উপায়ে যাতে উভয়পক্ষের সম্মতি রয়েছে) প্রদান বা বিনিময়, যা প্রাতিষ্ঠানিক ও জাতীয় আইনের সঙ্গে সম্পর্কিত। দুই পক্ষই গোপনীয় এবং পাবলিক ডোমেইনে প্রকাশ অযোগ্য এই তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষা করবে এবং প্রকাশ ও অপব্যবহার এড়াতে সকল ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
ব্যবস্থাপনা বিষয়ক অনুচ্ছেদ ৫-এ বলা হয়, উভয় পক্ষের যোগাযোগের জন্য নির্ভরযোগ্য লিয়াজোঁ অফিস থাকবে এবং এই চুক্তির অধীনে বাধ্যবাধকতা বাস্তবায়নে সমন্বয় ও তত্ত্বাবধানের জন্য দুই পক্ষ সম্মত। সমঝোতা স্মারকের বাস্তবায়ন পর্যবেক্ষণের জন্য ফার্স্ট ইনস্টিটিউট অব ওশেনোগ্রাফির পক্ষে ড. লি লি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ওশেনোগ্রাফি বিভাগের অধ্যাপক ড. কেএম আজম চৌধুরীকে মনোনীত করার বিষয়টিও সমঝোতায় উল্লেখ করা হয়। এই অনুচ্ছেদের উপ-ধারায় বলা হয়- এই চুক্তির অধীনে থাকা উপাদানগুলোর বিষয়ে আলোচনা এবং কার্যক্রমের অগ্রগতি মূল্যায়নের জন্য দুই পক্ষ পর্যায়ক্রমে বছরান্তে বৈঠকে মিলিত হবে। চুক্তিতে সর্বসম্মত কার্যক্রম বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে, প্রতিটি পক্ষ অন্য পক্ষকে প্রশাসনিক এবং আইনগত প্রয়োজনীয় সহায়তায় যথাসাধ্য চেষ্টা করবে, যার মধ্যে ভিসা সংগ্রহ, আবাসন এবং পরিবহনের ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত।
সমঝোতা স্মারকের অনুচ্ছেদ ৬-এ তৃতীয় পক্ষের অন্তর্ভুক্তি নাকচ করা হয়েছে। বলা হয়, এই সমঝোতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং ফার্স্ট ইনস্টিটিউট অব ওশেনোগ্রাফির মধ্যে স্বাক্ষরিত, যার বাইরে অন্য কোনো পক্ষ নেই; ভবিষ্যতেও এতে অন্য কোনো পক্ষের যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। ওই অনুচ্ছেদের উপ-ধারায় সমঝোতা থেকে বের হওয়ার পথ বাতলে দেয়া হয়েছে। বলা হয়, যেকোনো পক্ষ সমঝোতা থেকে যখন-তখন বের হতে পারবে, তবে এ জন্য অনুচ্ছেদ ৭-এ সংজ্ঞায়িত এমওইউ-এর সমাপ্তির পন্থা অনুসরণ করতে হবে।
‘নিষ্পত্তি’ শীর্ষক ধারা-৭ এ বলা হয়, সমঝোতা স্মারকের যেকোনো বিধানের ব্যাখ্যা এবং/অথবা বাস্তবায়ন এবং/অথবা প্রয়োগ সংক্রান্ত পক্ষগুলোর মধ্যে যেকোনো মত-পার্থক্য বা বিরোধ একচেটিয়াভাবে পারস্পরিক পরামর্শ এবং/অথবা পক্ষদ্বয়ের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে নিষ্পত্তি হবে।
সমঝোতার কার্যকারিতা এবং সময়কাল বিষয়ক অনুচ্ছেদ ৬-এ বলা হয়- সমঝোতা স্মারকটি স্বাক্ষরের তারিখ থেকে এটি কার্যকর হবে। প্রাথমিক অবস্থায় তার মেয়াদ হবে পাঁচ (৫) বছর। তবে দুই পক্ষের পারস্পরিক সাধারণ লিখিত চুক্তির ভিত্তিতে আরও পাঁচ (৫) বছর মেয়াদ বাড়ানো যেতে পারে উল্লেখ করে ওই অনুচ্ছেদের উপ-ধারায় বলা হয়- যা কিছুই থাকুক না কেন, যেকোনো পক্ষ এই চুক্তি বাতিল করতে পারবে। তবে চুক্তি বাতিল বা এ থেকে বের হয়ে যাওয়ার অন্তত ছয় (৬) মাস আগে একে অপরকে লিখিতভাবে জানাবে। চুক্তি বাতিল হলেও আনুষ্ঠানিকভাবে এর সমাপ্তি টানার আগে গৃহীত নির্দিষ্ট কার্যক্রমে কোনো প্রভাব ফেলবে না। অর্থাৎ সমঝোতাটির অধীনে বাস্তবায়িত কর্মের বৈধতা বা সময়কালকে কোনো অবস্থাতেই তা প্রভাবিত করবে না। যদি না উভয় পক্ষের মধ্যে তা নিয়ে অন্য কোনো সমঝোতা হয়।
অতিরিক্ত শর্তাবলী সংক্রান্ত ধারা-৯ এ বলা হয়, এই সমঝোতা স্মারকের অধীনে সহযোগিতা কার্যক্রম থেকে প্রাপ্ত, বা অন্য পক্ষের কাছ থেকে প্রাপ্ত বৈজ্ঞানিক এবং প্রযুক্তিগত তথ্য (ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টি) দুই পক্ষের অনুমতি ব্যতীত তৃতীয় পক্ষকে সরবরাহ করা বা প্রকাশ করা যাবে না। দুই পক্ষই ন্যায্যতা ও পারস্পরিক লাভের নীতিতে সহযোগিতার ফল ভোগ করবে। এটা পরিষ্কার যে, দুই পক্ষের অবদান নির্ভর করবে তহবিলের প্রকৃত প্রাপ্যতা এবং প্রতিটি পক্ষের তহবিল পদ্ধতির উপর। কোনো পক্ষ যদি বাজেট সংক্রান্ত সমস্যার সম্মুখীন হয় যা চুক্তির কার্যক্রমকে প্রভাবিত করার আশঙ্কা দেখা দেয় তবে তা অন্য পক্ষকে অবহিত করবে এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দু’পক্ষ পরামর্শ করবে। এই চুক্তিতে উল্লেখ না থাকা বিষয়গুলোও পারস্পরিক বোঝাপড়ার ভিত্তিতে নির্ধারিত হবে বলে তাতে সন্নিবেশিত রয়েছে।
সমঝোতায় চীনের ফার্স্ট ইনস্টিটিউট অব ওশেনোগ্রাফি’র ঠিকানা দেখানো হয়েছে- এফআইও, নম্বর ৬, জিয়ান-জিয়া-লিং রোড, লাওসান ডিস্ট্রিক্ট-২৬৬০৬১। প্রতিষ্ঠানটির প্রতিনিধিত্ব করছেন মহাপরিচালক ড. টিএ গাং লি। সমঝোতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিত্ব দেখানো হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার প্রফেসর মমতাজ উদ্দিন আহমেদকে। সমঝোতাটির ইংরেজিতে চার কপি সই হয়েছে। প্রতিটি পক্ষের কাছে দু’টি করে কপি রয়েছে। সব কপি আইনিভাবে সমান বলে এতে উল্লেখ করা হয়।