সম্প্রতি সৌদি আরবের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে এক বাবা ও মেয়ের কান্না করতে দেখা যায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের সেই ভিডিও ভাইরাল হয়। আসির এলাকায় অবস্থিত কিং খালিদ ইউনিভার্সিটির এবারের সমাবর্তনে অংশ নেন সুলতান আবু রাস ও তার দত্তক নেওয়া মেয়ে সামিরা। সুলতান আবু রাস সমাবর্তনের অনুষ্ঠানে সামিরাকে দেখে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন এবং কান্না করে ফেলেন।
সৌদি সংবাদ মাধ্যম আল-আরাবিয়াহ সূত্রে জানা যায়, ২২ বছর আগে ২০০১ সালে সুলতান আবু রাস সৌদির দক্ষিণাঞ্চলীয় একটি হাসপাতালে কর্মরত ছিলেন। তখন তিনি হাসপাতালের নার্সিং বিভাগের প্রধান ছিলেন। পাশাপাশি হাসপাতালে আগত এতিম শিশুদের অভ্যর্থনা ও দেখাশোনার দায়িত্বও তার ছিল। সেই সময় সামিরার মা তাকে হাসপাতালে রেখে যায়।
এরপর ৯ মাস সে হাসপাতালে থাকে। তখন তিনি তার সঙ্গে খেলাধুলা অংশ নিতে দ্রুত হাসপাতালে চলে যেতেন। কিন্তু তিনি চলে এলে ওই শিশুর মধ্যে অস্থিরতা শুরু হত।
তাই সুলতান আবু রাস হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অনুমতিক্রমে সামিরাকে তিন সপ্তাহের জন্য নিজ বাসায় নিয়ে আসেন।
তার ভাবনা ছিল, বাসায় তার স্ত্রী ও সন্তানদের সঙ্গে সময় কাটালে হয়ত সামিরার মানসিক অবস্থা ঠিক হয়ে যাবে। তার অবস্থা কিছুটা ভালো হলে হাসপাতালে নেওয়া হয়। কিন্তু আগের মতো সে আবারো ভেঙে পড়ে। এরপর সুলতান আবু রাস কর্তপৃক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে সামিরার সব দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
এভাবে দীর্ঘ ২২ বছর ধরে সুলতান আবু রাসের তত্ত্বাবধানে শিশু সামিরা রয়েছেন।এক বছর আগে তার বিয়ে হলে সে স্বামীর বাড়িতে চলে যায়। এই বছর সে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা সম্পন্ন করে। দীর্ঘ এই সময়ে সুলতানের আয়-রোজগারে খুবই উন্নতি হয়েছিল যা তিনি আগে কখনো দেখেননি।
সামিরা বলেন, ‘সব প্রশংসা আল্লাহর। তিনি আমাকে এই পরিবারে নিয়ে এসেছেন। আমি তাদের সঙ্গে ২২ বছর ধরে রয়েছি। আজ বয়স ২২ বছর। আমার মনে পড়ে না, এই দীর্ঘ সময়ে তারা কখনো আমার ও আমার ভাই-বোনদের মধ্যে কোনো পার্থক্য করেছে। আমার পিতা সব সময় বলতেন, মানুষের কথায় কান দেবে না। তুমি মাথা তুলে দাঁড়াও। আমি তোমার পেছনে আছি।’
সূত্র : আল-আরাবিয়া