Friday, July 26, 2024
spot_img
Homeধর্মসংগীতে বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার নিয়ে ইসলামের নির্দেশনা

সংগীতে বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার নিয়ে ইসলামের নির্দেশনা

বিশ্বজুড়ে ধর্মপ্রিয় মুসলিমদের কাছে ইসলামী সংগীত ব্যাপক জনপ্রিয়। আল্লাহ ও রাসুলের প্রশংসা সংবলিত হামদ-নাত কিংবা দেশ ও জীবনমুখী কথামালার বিচিত্র সুরের গজল, শের বা কবিতার প্রতি মুসলিমদের আকর্ষণ যুগ যুগ ধরে। বাদ্যযন্ত্রহীন এসব সংগীতের ব্যাপারে ইসলামের বিধি-নিষেধ নেই। কিন্তু ডিজিটাল মিউজিকের অবাধ সুযোগ ও সহজতার কারণে বর্তমানে কেউ কেউ ইসলামী সংগীতে সফট ও হার্ড মিউজিক ব্যবহার করছে, যা ইসলামী সংগীতের স্বকীয়তা ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ক্ষুণ্ন করছে মারাত্মকভাবে।

অথচ ইসলামিক বা অনৈসলামিক যেকোনো সংগীত বা গজলে বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার কোরআন-হাদিস ও উম্মাহর নির্ভরযোগ্য ইমামদের সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে অবৈধ। এ প্রসঙ্গে কোরআন-হাদিসে সরাসরি একাধিক দলিল আছে। তবে আজকের লেখায় এ বিষয়ে ইমামদের কয়েকটি বক্তব্য উল্লেখ করা হলো। সাহাবি আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) সুরা লুকমানের ৬ নম্বর আয়াতের ‘লাহওয়াল হাদিস’-এর ব্যাখ্যায় বলেন, ‘তা হলো সংগীত।

আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.), আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) একই কথা বলেছেন। তাবেঈ সায়িদ ইবনে জুবাইর (রহ.) থেকেও অনুরূপ মত বর্ণিত হয়েছে। বিখ্যাত তাবেঈ হাসান বসরি (রহ.) বলেন, ‘উক্ত আয়াত গান ও বাদ্যযন্ত্রের ব্যাপারে নাজিল হয়েছে, যা বান্দাকে কোরআন থেকে গাফিল করে দেয়।’ (তাফসিরে ইবনে কাসির : ৩/৪৪১)

এ ব্যাপারে ইমাম বাগাবি (রহ.) বলেন, ‘বাদ্যযন্ত্র হারাম বা নিষিদ্ধ হওয়ার ব্যাপারে উম্মাহর সব ইমামরা একমত। (শারহুস সুন্নাহ : ১২/৩৮৩)

ইমাম ইবনে হাজার হাইতামি (রহ.) বলেন, ‘বাদ্যযন্ত্রজাতীয় যা কিছু আছে, কোনো ধরনের মতানৈক্য ছাড়া সব হারাম। এ মাসআলার যাঁরা বিরোধিতা করেছেন, তাঁরা হয়তো ভুল করেছেন অথবা কুপ্রবৃত্তির কাছে পরাজিত হয়েছেন। কুপ্রবৃত্তি তাঁদের অন্ধ করে দিয়েছে, হিদায়াত থেকে বঞ্চিত করেছে।’

বাদ্যযন্ত্র হারাম হওয়ায় ঐকমত্যের ব্যাপারটি ইমাম কুরতুবি (রহ.)-ও বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘এগুলো শোনা হারাম হওয়ার ব্যাপারে কোনো মতানৈক্য নেই।

সালাফে সালেহিনের গ্রহণযোগ্য কেউই ভিন্নমত পোষণ করেননি। পরবর্তী কেউ কেউ এটাকে হালাল বলেছেন! কিন্তু এটা কেন হারাম হবে না? এটা তো মদপানকারী এবং ফাসিকদের শিআর বা নিদর্শন। আর এজাতীয় বিষয় হারাম হওয়ার ক্ষেত্রে কোনো সন্দেহ নেই।’ (কাফফুর রিআ আন মুহাররামাতিল লাহওয়ি ওয়াস সিমা,    পৃ. ১১৮)ইমাম আলাউদ্দিন কাসানি (রহ.) বলেন, ‘কারো ঘরে ইসলামবিরোধী কোনো কাজ বন্ধ করার জন্য প্রবেশ করতে চাইলে অনুমতির প্রয়োজন নেই। উদাহরণস্বরূপ কারো ঘর থেকে গান-বাজনার আওয়াজ এলে সেটা বন্ধ করার জন্য প্রবেশ করতে চাইলে অনুমতির প্রয়োজন নেই। কারণ ইসলামবিরোধী কাজ বন্ধ করা ফরজ।’ (বাদায়িউস সানায়ি : ৭/৩৬৭)

ইমাম সারাখসি (রহ.) বলেন, ‘গান, মৃতের বাড়িতে মাতম, বাজনা, তবলা এবং লাহও জাতীয় কোনো কিছু ভাড়া প্রদান জায়েজ নেই। কারণ এগুলো গুনাহর কাজ। আর গুনাহর কাজের ভাড়া হারাম।’ (আল-মাবসুত : ১৮/৩৯৬)

সালাফদের কাছে বাদ্যযন্ত্র বা তার সদৃশ বস্তুগুলো এতই ঘৃণিত ছিল যে নিচের একটি বক্তব্য থেকে তা স্পষ্ট হয়। বিখ্যাত তাবেঈ হজরত নাফে (রহ.) থেকে বিশুদ্ধ সনদে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘একবার চলার পথে আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) বাঁশির আওয়াজ শুনলেন। সঙ্গে সঙ্গে তিনি দুই কানে আঙু্ল দিলেন। কিছুদূর গিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, হে নাফে, এখনো কি আওয়াজ শুনছ? আমি বললাম, হ্যাঁ। অতঃপর আমি যখন বললাম, এখন আর আওয়াজ শোনা যাচ্ছে না, তখন তিনি কান থেকে আঙুল সরালেন এবং বললেন, একদা রাসুলুল্লাহ (সা.) চলার পথে বাঁশির আওয়াজ শুনে এমনই করেছিলেন।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ৪৫৩৫)

তবে মনে রাখতে হবে, সালাফ বা ইমামদের ঐকমত্যের বিপরীত যদি কারো বিচ্ছিন্ন মতামত পাওয়া যায়, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আল্লাহ সবাইকে সঠিক বিষয়টি উপলব্ধি করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments