দেশের শেয়ারবাজার ও সামগ্রিক অর্থনীতি এখন সংকটাপন্ন। বড় ধরনের ধস নেমেছে শেয়ারবাজারে। আগের সপ্তাহে শুরু হওয়া ধস চলতি সপ্তাহের প্রথম দিন লেনদেন শেষ হয়েছে বড় দরপতনের মধ্য দিয়ে। টানা আট কার্যদিবস পতনের ধারা অব্যাহত থাকায় শেয়ার ব্যবসায়ীদের অবস্থা এখন মারাত্মক সংকটে। একদিনে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচক কমেছে ১১৫ পয়েন্টের বেশি। শেয়ারের দাম কমেছে ডিএসইর তালিকাভুক্ত ৯০ শতাংশ কোম্পানির।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০১০ সালের পর বিনিয়োগকারীদের এত বড় লোকসান আর হয়নি, যা বর্তমান ধসের কারণে হয়েছে। অনেকেই বিনিয়োগ করা পুঁজি হারিয়ে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়েছেন। পতনের কবল থেকে রক্ষা পাচ্ছে না শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে থাকা কোম্পানিগুলোর শেয়ারও।
ওদিকে কঠিন সময় পার করছে দেশের অর্থনীতি। ২০০৮ সালের বৈশ্বিক মন্দায় উন্নত অনেক দেশ ঝাঁকুনি খেলেও বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতি খুব বেশি আঘাতপ্রাপ্ত হয়নি। এমনকি করোনা মহামারির সংক্রমণের মধ্যেও অর্থনীতি স্থিতিশীল ছিল বলা চলে। কিন্তু এখন করোনা থেকে মুক্তি পাওয়ার পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধসহ অন্যান্য কারণে বৈশ্বিক যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তাতে দেশের অর্থনীতি কঠিন সময় পার করছে। জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে হু হু করে। দেড় বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি ঘটেছে গত মাসে। কমে আসছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। টাকার মান নেমে গেছে সর্বোচ্চ পর্যায়ে। কমেছে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সও। সার, জ্বালানি পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় ব্যাপক ভর্তুকির চাপে পড়েছে সরকার। বিশেষজ্ঞদের মতে, সামষ্টিক অর্থনীতি অনেক দিন এমন চাপের মুখে পড়েনি।
শেয়ারবাজার ও অর্থনীতির যখন এমনই অবস্থা, তখন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে সৃষ্ট বৈশ্বিক সংকট যাতে দেশের শেয়ারবাজারসহ সামগ্রিক অর্থনীতিতে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে না পারে, সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। রোববার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে এক রুদ্ধদ্বার বৈঠকে তিনি এ নির্দেশনা দিয়েছেন। বৈঠকে পুঁজিবাজারের ছোট বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় সতর্ক থাকারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অর্থমন্ত্রী বলেছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যেও দেশের অর্থনীতি মজবুত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে। এ অবস্থায় পুঁজিবাজারের খারাপ অবস্থা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।
তিনি যে প্রকারেই হোক বাজারকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনার ওপর জোর দেন। শেয়ারবাজার বিশ্লেষকরাও অবশ্য বলছেন, চলমান দরপতনের পেছনে যুক্তিসঙ্গত কোনো কারণ নেই। কার্যকারণ যা-ই হোক, আমাদের কথা হলো, পুঁজিবাজারের বর্তমান অস্বাভাবিকতা কাটিয়ে উঠতে হবে, সতর্ক থাকতে হবে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি বিষয়ে। শেয়ারবাজারের স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনতে শেয়ারবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংককে সমন্বয়ের মাধ্যমের কাজ করতে হবে।
এছাড়া পুঁজিবাজারে সরকারি বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান আইসিবিকে বাজারে সব ধরনের সহায়তা দিতে হবে। শুধু তাই নয়, ব্যাংকগুলো আইসিবির মাধ্যমে শেয়ারবাজারে যে বিনিয়োগ করবে, এখন থেকে সেটাকে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ সীমার বাইরে রাখতে হবে। বস্তুত অর্থনীতির ক্ষেত্রে এখন সর্বোচ্চ সতর্কতার সময় এসেছে। এই সতর্কতার ওপর নির্ভর করছে আগামী দিনের শেয়ারবাজার ও অর্থনীতির অবস্থা।