প্রায় জ্বালানিশূন্য শ্রীলঙ্কা। সহসাই সেখানে নতুন করে কোনো তেলের সরবরাহ আসবে এমনও কোনো লক্ষণ নেই। এ অবস্থায় মোটরযানের মালিক বা চালকদের কাছে ক্ষমা চাইলেন দেশটির জ্বালানি মন্ত্রী কাঞ্চনা বিজেসেকারা। তবে কখন পেট্রোল ও ডিজেল আমদানি করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা হবে, তা তিনি জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন। এ খবর দিয়েছে অনলাইন গার্ডিয়ান।
এতে আরও বলা হয়, এরই মধ্যে দেশটিতে জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে শতকরা ২০ ভাগ। তার আগেই জ্বালানিমন্ত্রী সতর্ক করেছেন যে, বেশ কয়েকটি শিপমেন্ট বিলম্বিত হওয়ায় কার্যত এই পেট্রোল ও ডিজেল অল্প সময়ের মধ্যে নিঃশেষ হয়ে যাবে। এ অবস্থায় মোটর মালিক বা চালকদের কাছে শনিবার ক্ষমা চাইলেন মন্ত্রী কাঞ্চনা। তিনি বলেছেন, গত সপ্তাহে তেলের যে কার্গে আসার কথা ছিল তা আসেনি। আগামী সপ্তাহে যেসব তেলবাহী কার্গো আসার কথা ছিল তাও শ্রীলঙ্কায় পৌঁছবে না ‘ব্যাংকিং’ কারণে।
এ অবস্থায় রোববার সিলন পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (সিপিসি) বলেছে, তারা ডিজেলের দাম শতকরা ১৫ ভাগ বৃদ্ধি করে প্রতি লিটারের দাম করেছে ৪৬০ রুপি। অন্যদিকে শতকরা ২২ ভাগ বৃদ্ধি করে প্রতি লিটার পেট্রোলের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৫০ রুপি।
কলম্বোতে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস থেকে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে একটি প্রতিনিধি দল শ্রীলঙ্কায় পৌঁছেছেন।
তারা শ্রীলঙ্কার চাহিদা সরবরাহে যুক্তরাষ্ট্র সবচেয়ে কার্যকর কি পদক্ষেপ নিতে পারে তা জানার জন্য আলোচনা করবেন। যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত জুলি চুং বিবৃতিতে বলেন, শ্রীলঙ্কা যেহেতু তাদের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি, তাই আমাদের সমর্থন থাকবে তাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং দেশে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করায়। দূতাবাস থেকে আরও জানানো হয়েছে, গত দু’সপ্তাহে শ্রীলঙ্কাকে নতুন করে ১৫ কোটি ৮৭ লাখ ৫০ হাজার ডলার আর্থিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ওদিকে শ্রীলঙ্কার দুই কোটি ২০ লাখ মানুষের মধ্যে সবচেয়ে ঝুঁকিতে যারা তাদের জন্য ৪ কোটি ৭০ লাখ ডলারের তহবিল সংগ্রহের জন্য জরুরি ভিত্তিতে আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। প্রায় ১৭ লাখ মানুষের সেখানে জীবন রক্ষাকারী সহায়তার প্রয়োজন। খাদ্য সংকট ও মূল্য বৃদ্ধির কারণে প্রতি ৫ জন মানুষের মধ্যে চারজনই তাদের খাদ্য গ্রহণ কমিয়ে দিয়েছেন।
শ্রীলঙ্কা মারাত্মকভাবে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় সংকটে ভুগছে। অর্থাৎ তাদের রিজার্ভ কমতে কমতে এত নিচে চলে এসেছে যে খাদ্য, জ্বালানি, ওষুধের মতো অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আমদানিতে অর্থায়ন করার সক্ষমতা নেই তাদের। এ জন্য আন্তর্জাতিক সংস্থা বা বিদেশি সরকারগুলোর কাছে সহায়তার আহ্বান জানিয়েছে দেশটি। এ অবস্থায় দেশটিতে শুধু নেই আর নেই। মানুষের জীবনযাত্রা কঠিন থেকে আরও কঠিন হয়ে পড়েছে। এরই মধ্যে কয়েকদিন আগে একটি ফিলিং স্টেশনে ৫ দিন অপেক্ষায় থাকার পর একজন ট্রাকচালক মারা গেছেন। কিন্তু তিনি তেল পাননি।
এ অবস্থায় মন্ত্রী কাঞ্চনা বলেন, রাষ্ট্র পরিচালিত সিডিসি জানাতে অপারগ যে নতুন করে কখন দেশে তেলের সরবরাহ আসবে। এরই মধ্যে অশোধিত তেল সংকটের কারণে সিপিসি তার একমাত্রা পরিশোধন কেন্দ্র বন্ধ করে দিয়েছে।