Friday, September 22, 2023
spot_img
Homeধর্মশ্রমিক হয়রানি নিন্দনীয়

শ্রমিক হয়রানি নিন্দনীয়

মহান আল্লাহ পৃথিবীর শৃঙ্খলা ঠিক রাখার জন্য কাউকে ধনী, কাউকে গরিব, কাউকে মনিব, কাউকে শ্রমিক বানিয়েছেন। তাই বলে কাউকে অন্যের ওপর অত্যাচার করার অধিকার দেননি। কেউ মালিক হলেই শ্রমিকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করার অধিকার তার নেই। মহানবী (সা.) শ্রমিকের সঙ্গে রুঢ় আচরণকে জাহেলিয়াত বলে আখ্যা দিয়েছেন।

আল-মারুর ইবনে সুয়াইদ (রা.) বলেন, একদা আমি আর-রাবাজাহ নামক স্থানে আবু জার (রা.)-কে দেখতে পেলাম। তখন তিনি একটি চাদর পরিহিত ছিলেন এবং তার দাসও অনুরূপ চাদর পরিহিত ছিল। আল-মারুর (রা.) বলেন, লোকেরা বলল, হে আবু জার! আপনি যদি আপনার দাস যে কাপড় পরেছে তা নিয়ে নিতেন তাহলে আপনার জোড়া পুরা হতো আর আপনার দাসকে অন্য পোশাক পরাতেন তাহলে ভালো হতো। বর্ণনাকারী বলেন, আবু জার (রা.) বলেন, আমি এক লোককে (যার মা অনারব ছিল) গালি দিয়েছিলাম এবং মন্দ ব্যবহার করেছিলাম। এতে সে আমার বিরুদ্ধে রাসুলুল্লাহ (সা.) এর কাছে অভিযোগ করলে তিনি বলেন, হে আবু জার! তুমি এমন ব্যক্তি যে তোমার মধ্যে জাহেলিয়াত আছে। তিনি আরো বলেন, এরা তোমাদের ভাই; আল্লাহ তাদের ওপর তোমাদেরকে মর্যাদা দিয়েছেন। এদের মধ্যে যাকে তোমাদের ভালো না লাগে তাকে বিক্রি করে দাও। তোমরা আল্লাহর সৃষ্টিকে শাস্তি দিও না। (আবু দাউদ, হাদিস : ৫১৫৭)

মহানবী (সা.) শ্রমিকের অধিকার সম্পর্কে আবু জার (রা.)-কে এমনভাবে সতর্ক করেছিলেন যে এর পর থেকে তিনি নিজে যা খেতেন, তাঁর শ্রমিককে তা খাওয়াতেন, নিজে যে কাপড় পরতেন, তাঁর অধীনদের একই মানের কাপড় পরাতেন। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, মারুর (রহ.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি একবার রাবাযা নামক স্থানে আবু জার (রা.)-এর সঙ্গে দেখা করলাম। তখন তাঁর পরনে ছিল এক জোড়া কাপড় (লুঙ্গি ও চাদর) আর তাঁর ভৃত্যের পরনেও ছিল ঠিক একই ধরনের এক জোড়া কাপড়। আমি তাঁকে এর কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, একবার আমি জনৈক ব্যক্তিকে গালি দিয়েছিলাম এবং আমি তাকে তার মা সম্পর্কে লজ্জা দিয়েছিলাম। তখন আল্লাহর রাসুল (সা.) আমাকে বলেন, আবু জার! তুমি তাকে তার মা সম্পর্কে লজ্জা দিয়েছ? তুমি তো এমন ব্যক্তি, তোমার মধ্যে এখনো অন্ধকার যুগের স্বভাব বিদ্যমান। জেনে রেখো, তোমাদের দাস-দাসী তোমাদেরই ভাই। আল্লাহ তাআলা তাদের তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন। তাই যার ভাই তার অধীনে থাকবে, সে যেন নিজে যা খায় তাকে তা-ই খাওয়ায় এবং নিজে যা পরিধান করে, তাকেও তা-ই পরায়। তাদের ওপর এমন কাজ চাপিয়ে দিও না, যা তাদের জন্য অধিক কষ্টদায়ক। যদি এমন কষ্টকর কাজ করতে দাও, তাহলে তোমরাও তাদের সে কাজে সহযোগিতা করবে। (বুখারি, হাদিস : ৩০)

সুবহানাল্লাহ, এটাই ইসলামের শিক্ষা। ইসলাম যে কতটা মানবিক ধর্ম তা নবীজির এই নির্দেশনা দেখলে কিছুটা উপলব্ধি করা যায়। মানুষের মর্যাদা ও অধিকার রক্ষায় ইসলাম সর্বদা সচেষ্ট। পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও অন্যায়, অত্যাচার বন্ধে ইসলাম বদ্ধপরিকর, তাইতো মুসলিমদের জন্য ক্ষমতা থাকলেই কাউকে চাপে রাখা কিংবা অত্যাচার করার অধিকার ইসলাম কাউকে দেয়নি। এ জন্যই একবার এক সাহাবি তাঁর ক্রীতদাসকে মারধর করলে মহানবী (সা.) শক্ত ভাষায় তার প্রতিবাদ করেন। আবু মাসউদ আল-আনসারি (রা.) বলেন, একদা আমার এক ক্রীতদাসকে প্রহার করছিলাম। এ সময় আমার পেছন হতে একটি শব্দ শুনতে পেলাম, হে আবু মাসউদ! জেনে রাখো, আল্লাহ তোমার ওপর এর চেয়ে বেশি ক্ষমতাবান যতটুকু তুমি তার ওপর ক্ষমতাবান। আমি পেছন থেকে তার এরূপ ডাক দুইবার শুনতে পেলাম। আমি পেছনের দিকে তাকিয়ে দেখি, নবী (সা.)। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! সে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য স্বাধীন (আমি তাকে মুক্ত করে দিলাম)। তিনি (সা.) বলেন, তুমি যদি তাকে মুক্ত না করে দিতে তাহলে জাহান্নামের আগুন তোমাকে গ্রাস করত। (আবু দাউদ, হাদিস : ৫১৫৯)

অতএব, মহান আল্লাহ যাদের সম্পদ দিয়েছেন, কারো মনিব বানিয়েছেন, তাদের উচিত অধীনদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করা, আর যাদের অধীন বানিয়েছেন, তাদের উচিত, মনিবের হক সম্পর্কে যত্নবান থাকা, মহান আল্লাহ কিয়ামতের দিন উভয়ের কর্তব্যের হিসাব নেবেন।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments