Thursday, April 18, 2024
spot_img
Homeনির্বাচিত কলামশেষ হচ্ছে ইসির মেয়াদ

শেষ হচ্ছে ইসির মেয়াদ

বর্তমান নির্বাচন কমিশনের (ইসি) মেয়াদ শেষ হতে চলেছে। আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি এর মেয়াদ শেষ হবে। গত পাঁচ বছরে ইসি জাতীয় সংসদ, সিটি করপোরেশন, উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদের প্রায় সাড়ে তিন হাজার নির্বাচন সম্পন্ন করেছে। চলমান রয়েছে আরও দেড় হাজার নির্বাচন। প্রশ্ন উঠতেই পারে, এই পাঁচ বছরে ইসির পারফরম্যান্স কি সন্তোষজনক? উত্তর হচ্ছে ‘না’বোধক। বেশির ভাগ ভোট নিয়েই নানা মহলে উঠেছে প্রশ্ন। এমনকি সমালোচনা ছিল কমিশনের ভেতরেও। এ ছাড়া নির্বাচনব্যবস্থার সংস্কার, আইন ও বিধিমালা সংশোধন এবং ভোটে স্বচ্ছতা আনার কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে না পারায় মেয়াদজুড়েই সমালোচনার মুখে ছিল ইসি। অনেকে এমন কথাও বলেছেন যে, ইসি নির্বাচনব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। ইসির একজন কমিশনারও এই সাংবিধানিক সংস্থাটির কার্যক্রম নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন। তবে অনলাইনে মনোনয়নপত্র দাখিল, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনসহ তৃণমূল পর্যায়ে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার, কুমিল্লা-রংপুর-ময়মনসিংহ সিটিতে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান ইত্যাদি কিছু প্রশংসাযোগ্য কাজও করেছে ইসি।

স্মরণ করা যেতে পারে, নির্বাচন কীভাবে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করা যায়-এ লক্ষ্যে ইসি রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ, মিডিয়া ও সাবেক কমিশনারদের অংশগ্রহণে সংলাপের আয়োজন করেছিল। ওই সংলাপে অংশগ্রহণকারীদের আশ্বস্ত করা হয়েছিল এই বলে যে, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এমনকি নির্বাচনী ব্যবস্থা, আইন ও বিধিমালা সংস্কারের মাধ্যমে যুগোপযোগী করতে কর্মপরিকল্পনা তৈরি করেছিল ইসি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে কোন সময়ে কী ধরনের সংস্কার করা হবে, সেই রোডম্যাপও প্রকাশ করা হয়েছিল এবং সে অনুযায়ী কিছু কাজও এগিয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেগুলোর উল্লেখযোগ্য বাস্তবায়ন হয়নি। সবচেয়ে বড় ব্যাপার, বিভিন্ন নির্বাচন নিয়ে যেসব অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছিল, সেগুলোর নিষ্পত্তি করেনি ইসি। অভিযোগগুলো উপেক্ষা করায় নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। ইসির বিরুদ্ধে আরেকটি বড় অভিযোগ হলো, আইন বা বিধিমালার মৌলিক কোনো পরিবর্তন আনতে না পারলেও গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ-১৯৭২ (আরপিও) থেকে প্রার্থিতা বাতিলে ইসির ক্ষমতাসংক্রান্ত ধারাসহ বেশকিছু মৌলিক ধারা বাতিলের চেষ্টা করা হয়েছে। প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দিয়ে মোটা অঙ্কের ভাতা নেওয়া, বিভিন্ন ইস্যুতে নিজেদের মধ্যকার দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে চলে আসা, কমিশন সচিবালয়ের সঙ্গে কমিশনারদের দূরত্ব ইত্যাদি কারণেও সমালোচিত হয়েছে ইসি।

বলাই বাহুল্য, বর্তমান নির্বাচন কমিশনের ওপর বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থা নেই। এই অনাস্থার যুক্তিসঙ্গত কারণও রয়েছে। অনুষ্ঠিত বিভিন্ন নির্বাচন নিয়ে ইসি যখন সন্তোষ প্রকাশ করেছে, রাজনৈতিক দলগুলো তখন সেটাকে প্রত্যাখ্যান করেছে। মোটা দাগে বলা যায়, বর্তমান ইসি রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ তথা নির্বাচকমণ্ডলীর আস্থা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে। এমতাবস্থায়, গঠিতব্য আগামী কমিশন কেমন হবে-এটিই বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে। এ ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলো কথা বলাও শুরু করেছে। তাদের কথার সঙ্গে সহমত পোষণ করে আমরাও বলতে চাই, আগামী কমিশন এমনভাবে গঠন করতে হবে, যাতে তা নিয়ে কোনো মহলে কোনো প্রশ্ন না ওঠে। রাজনৈতিক দলগুলো ইসি গঠনে আইন তৈরির পরামর্শ দিয়েছে। সময় স্বল্পতার কারণে যদি সেই আইন তৈরি করা না যায়, তাহলে যেন ইসির গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে কোনো কথা না ওঠে। সরকারের সদিচ্ছা থাকলে একটি গ্রহণযোগ্য কমিশন গঠন করা সম্ভব বলে মনে করি আমরা।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments