সর্দি-কাশি
শীতে কমন কোল্ড বা সর্দি-কাশি লেগেই থাকে, বিশেষ করে নাক বন্ধ হওয়া, নাক দিয়ে অনবরত পানি ঝরা এবং হাঁচিও হয় ঘন ঘন। হালকা জ্বর, মাথা ব্যথা, শরীর ব্যথা ও ম্যাজ ম্যাজ করা, দুর্বল লাগা ও ক্ষুধামান্দ্যর পাশাপাশি হালকা জ্বরের প্রাদুর্ভাবও দেখা দেয়।
করণীয়
♦ প্রথম কাজ হলো ঠাণ্ডা যাতে না লাগে সেদিকে বেশি খেয়াল রাখা, বিশেষ করে সকাল, সন্ধ্যা এবং রাতে শীতের পোশাক বা গরম জামাকাপড় পরে থাকা উচিত।
♦ টয়লেট ও গোসলের সময় বেশি ঠাণ্ডা পানি ব্যবহার না করা।
♦ শীতে ধূলিকণা, কলকারখানা ও যানবাহনের ধোঁয়া বাতাসকে দূষিত করে। এ সময় বাইরে বের হলে মাস্ক ব্যবহার করা উচিত।
♦ অল্প ঠাণ্ডায় যাঁদের গলা ব্যথা হয় তাঁরা এই সময় গলায় মাফলার ব্যবহার করতে পারেন।
♦ টনসিলাইটিস ও কানে ব্যথা হলে নাক, কান ও গলা বিশেষজ্ঞকে দেখিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চিকিৎসা নিন।
ইনফ্লুয়েঞ্জা
শীতের সময় ঠাণ্ডা থেকে ইনফ্লুয়েঞ্জা হতে পারে। এ ছাড়া নাক দিয়ে পানি আসা বা সর্দি আসা, নাক বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো লক্ষণগুলোও এ সময় দেখা দেয়। এসব সমস্যা ভাইরাস দ্বারাই মূলত বেশি হয়।
করণীয়
♦ অ্যালার্জি ও ঠাণ্ডায় আক্রান্ত না হওয়ার চেষ্টা করতে হবে।
♦ শিশুদের গরম কাপড় পরিয়ে রাখতে হবে। বিশেষ করে রাতের বেলায় তাদের গায়ের ওপর থেকে যেন কাপড় বা লেপ, কম্বল সরে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
♦ ঠাণ্ডায় যাঁদের বেশি অ্যালার্জি, তাঁদের ঘরে হিটিংয়ের ব্যবস্থা রাখুন।
♦ ইনফ্লুয়েঞ্জা দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শে প্যারাসিটামল, অ্যান্টি-হিস্টামিনজাতীয় ওষুধ খাওয়া যেতে পারে।
শ্বাসকষ্ট, অ্যাজমা, সিওপিডি
অ্যাজমা, শ্বাসকষ্ট, সিওপিডিজাতীয় শ্বাসকষ্টের রোগগুলো শুধু শীতকালীন রোগ না হলেও শীতে এসব রোগের প্রকোপ কিছুটা বেড়ে যায়। অ্যাজমা একবার হলে এটিকে নিয়ে চলতে হয় সারা জীবন। তবে অ্যাজমা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে জটিলতা বা ঝুঁকি থাকে না বললেই চলে।
করণীয়
♦ শীতে অ্যাজমা, শ্বাসকষ্ট, সিওপিডির রোগীদের পর্যাপ্ত মোটা কাপড়ের বন্দোবস্ত করতে হবে।
♦ ঘরে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস প্রবেশের ব্যবস্থা করুন, বিশেষ করে শোবারঘরটি উষ্ণ রাখার চেষ্টা করুন।
♦ এসব রোগের ট্রিগারগুলো জেনে সতর্কভাবে চলুন।
♦ শীতের আগেই চিকিৎসককে দেখিয়ে ইনহেলার বা অন্যান্য ওষুধের ডোজ সমন্বয় করে নিন।
বাত ব্যথা
আর্থ্রাইটিস বা বাতের সমস্যা শীতের সময় বেড়ে যায়। মূলত বয়স্কদেরই এ সমস্যা হয় বেশি। বিশেষ করে রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস বা এনকাইলোজিং স্পন্ডিওলাইটিস, স্পন্ডাইলো আর্থ্রাইটিস, রি-অ্যাকটিভ আর্থ্রাইটিস, সোরিয়াসিটিস, অস্টিওআর্থ্রাইটিস রোগীদের শীতের সময় চলাফেরা বা মুভমেন্ট কম হয় বলে ব্যথার প্রকোপ বেড়ে যায়।
করণীয়
♦ সব সময় হাত ও পায়ের মোজা পরিধান করুন।
♦ ব্যায়াম ও খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে দেহের অতিরিক্ত ওজন কমিয়ে আনুন।
♦ একটানা অনেকক্ষণ বসে না থেকে যতটুকু সম্ভব হাঁটাচলা করুন।
♦ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
♦ প্রয়োজনে গরম পানি ব্যবহার করুন।
♦ গরম সেঁক দিন বা ফিজিওথেরাপি নিন।
ত্বকের সমস্যা
শীতের রুক্ষতা আর শুষ্কতা ত্বকে কিছু সমস্যা তৈরি করে থাকে। শীতকালে ত্বকের প্রধান সমস্যা হলো ত্বক অতিরিক্ত শুষ্ক হয়ে যাওয়া। দেখা যায়, কারো হয়তো ত্বক ছিল মসৃণ ও প্রাণবন্ত; কিন্তু শীত আসার সঙ্গে সঙ্গে সেই ত্বকই হঠাৎ হয়ে ওঠে রুক্ষ। অনেকের ত্বকে র্যাশ, সোরিয়াসিস কিংবা ড্রাই অ্যাকজিমার সমস্যা বাঁধতে পারে।
করণীয়
♦ শীতে ত্বকের সমস্যা থেকে বাঁচতে ত্বকের ধরন অনুযায়ী ক্রিম, লোশন, পেট্রোলিয়াম জেলি, গ্লিসারিন, ময়েশ্চারাইজার ইত্যাদি ব্যবহার করুন। তবে খেয়াল রাখতে হবে, তৈলাক্ত ত্বকে অতিরিক্ত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা ঠিক হবে না। এতে ত্বকের সেরামগ্রন্থি থেকে নিঃসরণ বেড়ে ব্রণ ও খুশকির সমস্যা দেখা দিতে পারে।
♦ খাদ্যতালিকায় রাখুন উপকারী ভিটামিন ‘সি’, ‘এ’ ইত্যাদি খাবার।
♦ বেশিক্ষণ রোদে থাকবেন না এবং কড়া আগুনে তাপও পোহাবেন না।
বয়স্কদের জন্য পরামর্শ
বয়স্কদের নড়াচড়া, হাঁটাচলা ও কাজকর্ম অনেক কম হয়। ফলে শরীরে উত্তাপ সৃষ্টি ও তাপ ধরে রাখার ক্ষমতাও কমে যায়। তাই এ সময় শরীর গরম রাখার জন্য কিছু ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। যেমন—
♦ পাকা মেঝের ঠাণ্ডা থেকে রক্ষা পেতে ঘরে চটি বা স্পঞ্জ পায়ে দিন। হাত ও পায়ে মোজা পরিয়ে রাখুন।
♦ ত্বক, ঠোঁট, হাত-পা, নখসহ নানা স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকে বাঁচতে বিভিন্ন ক্রিমসহ প্রয়োজনীয় ওষুধ ব্যবহার করুন।
♦ চাদর, বালিশের কভার নিয়মিত পরিষ্কার করে রোদে শুকাতে দিন।
♦ শোবারঘরের দিকে নজর দিন। বিছানা যেন শীতল না হয়ে যায় সেদিকে বিশেষ খেয়াল রাখুন।
♦ রুম হিটার ব্যবহারে সাবধানতা অবলম্বন করবেন। কেননা এতে চামড়ায় সমস্যা দেখা দেয়।
♦ অজু, গোসলসহ নানা কাজেও গরম পানি ব্যবহার করুন, এতে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক থাকবে।
♦ শীতের সময় রাত জাগা ক্ষতিকর। তাই দ্রুত শুয়ে পড়ার অভ্যাস করুন। পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন।
♦ জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথাসহ অন্য যেকোনো সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।