Monday, March 27, 2023
spot_img
Homeনির্বাচিত কলামশীতলক্ষ্যায় লঞ্চডুবি: নৌদুর্ঘটনা রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিন

শীতলক্ষ্যায় লঞ্চডুবি: নৌদুর্ঘটনা রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিন

গত রোববার নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীতে রূপসী-৯ নামের কার্গো জাহাজের ধাক্কায় নারায়ণগঞ্জ থেকে মুন্সীগঞ্জগামী যাত্রীবাহী লঞ্চ এমএল আশ্রাফ উদ্দিন ডুবে গেলে লঞ্চটির অন্তত ছয় যাত্রী মারা যান। নিখোঁজ হন কমপক্ষে ২০ জন। তবে ফায়ার সার্ভিস, নৌপুলিশসহ সংশ্লিষ্টদের আশঙ্কা-প্রাণহানির সংখ্যা বাড়তে পারে।

রূপসী-৯ কার্গো জাহাজ ও এর চালকদের ইতোমধ্যে মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া থেকে আটক করেছে নৌপুলিশ। নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়, নৌপরিবহণ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসন পৃথক তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। ভিডিও দৃশ্যে এ লঞ্চডুবির যে চিত্র দেখা গেছে, তা খুবই উদ্বেগজনক। এ লঞ্চডুবির ঘটনাকে রীতিমতো হত্যাকাণ্ড আখ্যায়িত করে মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য মৃণাল কান্তি দাস বলেছেন, যেভাবে এসব মানুষকে মারা হলো, সেই ঘটনায় হত্যা মামলা করে তাদের সাজা দেওয়া সম্ভব হলে ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব হবে।

এক সময় নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দর থেকে কলকাতা পর্যন্ত স্টিমার ও বড় আকারের নৌযান নির্বিঘ্নে চলাচল করলেও বর্তমানে কোনো নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে শীতলক্ষ্যা, ধলেশ্বরী ও মেঘনা নদীতে ছোট বড় শত শত নৌযান চলাচল করছে। এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জ থেকে সাত রুটে চলাচলকারী অর্ধশতেরও বেশি যাত্রীবাহী লঞ্চ চালাচ্ছেন সুকানি ও গ্রিজাররা। পাশাপাশি এসব নদীতে এক হাজারেরও বেশি বালুবাহী বাল্কহেডের অবাধ চলাচল রয়েছে। উপরন্তু খেয়া পারাপারের ঘাটগুলোয় অদক্ষ শিশুদের দিয়ে চালানো হচ্ছে ট্রলার, যেগুলোর মাধ্যমে প্রতিদিন নদী পার হচ্ছেন কয়েক লাখ মানুষ। সব মিলে উল্লিখিত তিন নৌপথ দিন দিন মানুষের চলাচলের জন্য বিপদসংকুল ও চরম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে।

অভিযোগ রয়েছে, নারায়ণগঞ্জ রুটে যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচলের পুরো বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করছে একটি চক্র। ফলে অনেক ব্যবসায়ী এ রুটে আধুনিক মানসম্পন্ন নতুন লঞ্চ চালাতে আগ্রহী হলেও সিন্ডিকেটের বাধার মুখে তা সম্ভব হচ্ছে না। এর ফলে মান্ধাতা আমলের পুরোনো লঞ্চে মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে নৌপথ পাড়ি দিতে বাধ্য হচ্ছেন যাত্রীরা, যার দ্রুত অবসান হওয়া উচিত। বিআইডব্লিউটিএ ও নৌপরিবহণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দুর্ঘটনাকবলিত এমএল আশ্রাফ উদ্দিন ৪৯ বছরের পুরোনো একটি ‘সানডেক’ লঞ্চ।

এক গবেষণা প্রতিবেদনে ত্রুটিপূর্ণ নৌযান, মাস্টার-চালক ও ইঞ্জিন অপারেটরের অদক্ষতা, অতিরিক্ত যাত্রী ও মালামাল বহনসহ দুর্ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন বাস্তবায়ন সম্পর্কে উদাসীন থাকাকে নৌদুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। শীতলক্ষ্যায় এমএল আশ্রাফ উদ্দিন দুর্ঘটনায় পৃথক যে তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে; আমরা আশা করব, তাদের দেওয়া প্রতিবেদন গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করে নৌপথে মৃত্যুঝুঁকি কমিয়ে আনার লক্ষ্যে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments