Wednesday, October 4, 2023
spot_img
Homeলাইফস্টাইলশিশুকে যেভাবে নিজের কাজে অভ্যস্ত করে তুলবেন

শিশুকে যেভাবে নিজের কাজে অভ্যস্ত করে তুলবেন

শিশুর বড় হওয়ার সময় তার নিজের কাজ নিজেকে করতে শেখাতে হবে। ঘরের নানা কাজেও তাকে সম্পৃক্ত করা গেলে সে স্বাবলম্বী হতে শিখবে। সানশাইন চাইল্ড ডে কেয়ার সেন্টারের পরিচালক ফারহানা আহমেদের সঙ্গে কথা বলে লিখেছেন আতিফ আতাউর

মিরপুর থেকে উত্তরায় ননদের বাসায় বেড়াতে এসেছিলেন জাকিয়া পারভীন। সকালে ননদের তিন বছর বয়সী মেয়েকে একা ব্রাশ করতে দেখে ভালো লাগে তাঁর।

ননদকে বলেন, ‘এইটুকু মেয়ে তোমার, আর নিজ থেকেই দাঁত ব্রাশ করছে। আমার ছেলেকে তো এখনো আমাদের দাঁত ব্রাশ করিয়ে দিতে হয়।

অথচ দুজনের বয়স সমান। ’ ভাবির মুখে মেয়ের প্রশংসা শুনে হাসি ফোটে ননদের মুখে।

অনেক পরিবারেই শিশুদের নিয়ে জাকিয়ার মতো অভিজ্ঞতা হয়। বয়স বাড়লেও অনেক কিছু নিজ থেকে করতে পারে না বা করতে চায়ও না। অনেক মাকে আদিখ্যেতা করে বলতে শোনা যায়, আমার মেয়েকে এখনো মুখে তুলে খাওয়াতে হয়! ও নিজের হাতে খেতেই চায় না। এগুলো সন্তানের জন্য মোটেও ভালো অভ্যাস নয়। বরং সন্তান বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাকে স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলাটা মা-বাবার কর্তব্য। সন্তান যত তাড়াতাড়ি স্বাবলম্বী হবে তা তার জন্য যেমন ভালো, তেমনি মা-বাবারও বাড়তি কাজ থেকে মুক্তি মিলবে। এ জন্য ছোট থেকেই শিশুকে স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলার জন্য চেষ্টা করতে হবে।

শিশু বসতে, হাঁটতে ও ধরতে পারা শেখার পর খেলনা দিয়েই শুরু হতে পারে শিশুর স্বাবলম্বী হওয়ার প্রথম পাঠ। চাকাযুক্ত খেলনা নিজ থেকে ঠেলে খেলা, সাইকেলে নিজে উঠে বসা, বাক্স থেকে পছন্দের খেলনা নিজে বের করে নেওয়া, পানির বোতল বা গ্লাস নিজে ধরে পান করা, নিজে নিজে ব্রাশ করা—এ রকম ছোট ছোট কাজ দিয়েই শিশুকে নিজের কাজ নিজে করতে শেখাতে হবে। কোনো কিছু একবার করতে না চাইলে তাকে বারবার তা করতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।

শিশুর বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে অন্যান্য কাজের ক্ষেত্রেও স্বাবলম্বী করে তোলার চেষ্টা করতে হবে। শিশুরা সাধারণত অনুকরণপ্রিয় হয়। বড়রা কী করছে, কিভাবে করছে সেটা তারা নিজেরাও করতে চায়। এ জন্য সন্তান নিজ থেকে কিছু করতে চাইলে তা যদি ক্ষতিকর না হয় তবে তাতে বাধা দেওয়া যাবে না।

শিশুর নিজের খাবার নিজে খাওয়া শেখাতে পরিবারের সবাই একসঙ্গে বসে খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। শিশুকে ডাইনিং টেবিলে বসতে উৎসাহিত করতে তার জন্য একটু উঁচু চেয়ার বানিয়ে দেওয়া যেতে পারে। এতে সবার সঙ্গে বসে নিজেই নিজের খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে উঠবে তার মধ্যে।

শিশুর সঙ্গে গল্প করা, খেলাধুলা ও ভাবের আদান-প্রদান করতে হবে। এগুলো শিশুর সঠিক বিকাশে সাহায্য করবে। আপনি কোনো কাজে ব্যস্ত থাকলেও শিশুকে সঙ্গে নিতে পারেন। ঘরের কাজের সময় এটা-ওটা এগিয়ে দিতে বলুন। করতে করতে, দেখতে দেখতে একসময় নিজেও শিখে যাবে আপনার করা কাজ।

শিশু তার বয়স উপযোগী কোনো সমস্যার মুখোমুখি হলে নিজ থেকে সমাধান করে দেবেন না। আপনি যদি তার সমস্যা সমাধান করে দেন, তাহলে তার স্বাবলম্বী হয়ে উঠতে দেরি হবে। তাই যেকোনো বিষয় সমস্যার মুখোমুখি হলে নিজ থেকে সমাধান করতে অনুপ্রেরণা দিতে হবে।

অনেক অভিভাবক শিশুকে টিভি বা মুঠোফোনে গেমস, কার্টুন ধরিয়ে দিয়ে নিশ্চিন্তে থাকেন, এমনটা করা যাবে না। শিশু কোনো প্রশ্ন করলে বা কোনো কিছু করতে চাইলে ধমক দিয়ে থামিয়ে দেবেন না। প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে।  

অনেক মা সন্তানকে এতটাই ভালোবাসেন ও প্রশ্রয় দেন যে তাকে সব কাজ থেকেই বিরত রাখেন। সন্তানের গোসল, দাঁত ব্রাশ, জামা-প্যান্ট পরানো, চুল আঁচড়ে দেওয়া থেকে শুরু করে স্কুলব্যাগ বহনের জন্য আলাদা লোক রাখেন। এগুলো শিশুর স্বাবলম্বী হয়ে গড়ে ওঠার পেছনে সবচেয়ে বড় বাধা। দৈনন্দিন কাজকর্ম যেমন—গোসল, দাঁত ব্রাশ, খাওয়াদাওয়া, পোশাক পরা, জুতা পরা, জুতার ফিতা বাঁধা, ব্যাগ গোছানোর মতো কাজে শিশুকে সাহায্য করতে পারেন। কিন্তু পুরোটাই করে দেবেন না। এতে তার মধ্যে স্বাবলম্বী হওয়ার প্রবণতা তৈরিতে দেরি হবে।  

কেউ কেউ খুব ছোট বয়স থেকেই শিশুকে বই পড়া, নাচ-গান, ছবি আঁকা, আবৃত্তিতে পারদর্শী করে তুলতে অস্থির হয়ে পড়েন। অনেক মা-বাবা একেবারে কম বয়সেই শিশুকে স্বাবলম্বী করে তুলতে চান। এটাও উচিত নয়। শিশুকে সময় দিতে হবে। কোনো কিছুতে জোরাজুরি করা যাবে না। ধৈর্য সহকারে শিশুকে সময় দিয়ে সব কিছু শেখাতে হবে। শিশু কোনো কিছু নিজ থেকে করতে পারলে তার স্বীকৃতি চায়। তার কাজের প্রশংসা করতে হবে। পুরস্কৃত করতে হবে। তাহলেই শিশু সহজে স্বাবলম্বী হয়ে উঠবে।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments