প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক শামসুজ্জামানের দ্রুত ও নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেছে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় সোচ্চার আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে)। বুধবার সিপিজের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ দাবি করা হয়।
নিউ ইয়র্কভিত্তিক সংগঠনটি বলেছে, বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষকে অবিলম্বে সাংবাদিক শামসুজ্জামানকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে। তাঁর কাজ সংক্রান্ত তদন্ত বন্ধ করতে হবে এবং প্রথম আলো পত্রিকার কর্মীরা যেন হস্তক্ষেপ বা প্রতিহিংসার শিকার হওয়ার ভয় ছাড়াই খবর তৈরি করতে পারেন তা নিশ্চিত করতে হবে।
সিপিজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার রাত ২টা ১৫ মিনিটে ঢাকার তেজগাঁও থানায় একটি মামলার তথ্য পাওয়া যায়। স্থানীয় এক রাজনৈতিক নেতা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ওই মামলা করেছেন। কর্তৃপক্ষ সেটি তদন্ত করার কথা বলেছে। বুধবার রাত পর্যন্ত শামসুজ্জামানকে আদালতে নেয়া হয়নি।
নিউ ইয়র্কে সিপিজের প্রোগ্রাম ডিরেক্টর কার্লোস মার্টিনেজ দে লা সেরনা বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সাংবাদিক শামসুজ্জামান শামসকে গ্রেপ্তার ও হয়রানি কর্তৃপক্ষের অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখানো, যাতে ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে।
কর্তৃপক্ষকে অবিলম্বে নিঃশর্তভাবে শামসুজ্জামানকে মুক্তি দিতে হবে এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অধীনে সাংবাদিকদের হয়রানি বন্ধ করতে হবে। যাঁরা সরকারের সমালোচনা করেন, তাঁদের কণ্ঠরোধে এই আইন বার বার ব্যবহার করা হচ্ছে।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সাংবাদিক আটক ও মামলায় সম্পাদক পরিষদের উদ্বেগ

প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক শামসুজ্জামান শামসকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২০১৮/এর ২৫(২), ২৬(২), ২৯(১), ৩১(২) এবং ৩৫(২) ধারায় মামলা ও আটকে সম্পাদক পরিষদ গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে। পরিষদ সভাপতি মাহফুজ আনাম ও সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ সাক্ষরিত এক বিবৃতিতে বলা হয়, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ ইতোমধ্যেই সাংবাদিকতাসহ বাকস্বাধীনতা ও মুক্তবুদ্ধিচর্চার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। সাংবাদিক, আইনবিদ, মানবাধিকারকর্মী, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিসহ সরকারের একাধিক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের নিকট হতেও আইনটির পরিবর্তন, পরিমার্জন, বিয়োজন ও সংযোজনের বিষয়ে নানা ধরনের পরামর্শ, সুপারিশ ও উদ্বেগ প্রকাশ অব্যাহত রয়েছে।
আইনটি তৈরির সময় থেকেই সম্পাদক পরিষদ এবং সাংবাদিকরা এ আইনের বিষয়ে উদ্বেগ ও আপত্তি জানিয়ে আসছিলেন। আইনমন্ত্রী এই আইনের বিভিন্ন রকম অপব্যবহার এবং সেই প্রেক্ষিতে আইনটি সংশোধনের ইঙ্গিতও দিয়েছিলেন। কিন্তু তারপরও এই আইনের মাধ্যমে সংবাদকর্মী ও মুক্তমত প্রকাশকারী ব্যক্তিরা ক্রমাগতভাবে নিপীড়ন ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, কোনো সংবাদে কেউ সংক্ষুব্ধ হলে তিনি প্রেস কাউন্সিলে অভিযোগ ও মামলা করতে পারেন। কিন্তু সেটি না করে সরাসরি ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে মামলা দায়ের হচ্ছে। তাই সাংবাদিকতার স্বাধীন ও নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের দ্রুত সংশোধন, সাংবাদিক শামসুজ্জামান শামসসহ সকল সাংবাদিকের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি করছে সম্পাদক পরিষদ। একই সাথে এই আইনে কেউ গ্রেপ্তার বা আটক থাকলে অবিলম্বে তার মুক্তি দাবি করছে।
সাংবাদিক শামসুজ্জামানের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে জাবিতে বিক্ষোভ, মানববন্ধন

সাংবাদিক শামসুজ্জামানের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল বিকাল সাড়ে চারটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন চত্বর থেকে প্রগতিশীল শিক্ষার্থীরা একটি বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে। পরে মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারে গিয়ে শেষ হয়। এর আগে বিকাল চারটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক সংলগ্ন ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে মানববন্ধন করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এদিকে ছাত্র ইউনিয়ন ও জাবি সাংবাদিক সমিতি এই ঘটনার নিন্দা জানিয়ে শামসুজ্জামানের নিঃশর্ত মুক্তি চেয়ে প্রতিবাদলিপি দিয়েছে। মানববন্ধনে ছাত্র অধিকার পরিষদের জাবি শাখার সভাপতি জহির ফয়সাল শামসুজ্জামানের নিঃশর্ত মুক্তি চেয়ে বলেন, “শামসের বড়ভাই রবিউল ইসলাম হলি আর্টিজেনে জঙ্গি হামলায় নিরীহ মানুষদের বাঁচাতে গিয়ে শহীদ হয়েছেন। তার ছোট ভাই সংবাদ প্রতিবেদনে ‘মাছ, মাংস, ভাতের স্বাধীনতা চাই’ লেখায় রাষ্ট্র তাকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। আমরা তার প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাই। সিকিউরিটি অ্যাক্টের নামে যে কালো আইন ব্যবহার করা হয়েছে তা বাতিল চাই।” বিক্ষোভ মিছিল শেষে ছাত্র ইউনিয়নের সহ-সভাপতি রিদ্ধ অনিন্দ্য গাঙ্গুলী বলেন, “গতকালের যে ঘটনা ঘটেছে সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন সরাসরি থেকে সহায়তা করেছে সেটা ভয়ঙ্কর ও লজ্জাজনক। আমরা আগেও বলেছি, আজকেও বলছি যে ডিজিটাল অ্যাক্ট প্রণয়ন করা হয়েছে সেটা যত দ্রুত সম্ভব বাতিল করতে হবে।” সমাবেশে সুদীপ্ত দে বলেন, “এদেশে জবাবদিহিতাহীন যে সরকার রয়েছে তারা বিভিন্ন সময়ে যারা তার বিরুদ্ধে কথা বলেছে, বাঁচার মতো বাঁচতে চেয়েছে, প্রতিবাদ করেছে তাদেরকেই জেলে পুরে দেয়া হয়েছে।
সংবাদকর্মী তার জায়গায় যদি সে স্বাধীনতা না পায় তাহলে সমাজ ভেস্তে যায়। এভাবে সংবাদকর্মীকে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ার সকল ঘটনার নিন্দা জানাই।” এর আগে বুধবার ভোর চারটার দিকে সিআইডি’র পরিচয়ে প্রথম আলোর নিজস্ব সাভার প্রতিনিধিকে তুলে নেয়া হয়। সিআইডি’র পরিচয় দেয়া ব্যক্তিরা সাধারণ পোশাকে ছিলেন। সাংবাদিক শামসুজ্জামানের বাসা সাভারে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে আমবাগান এলাকায়। ‘পেটে ভাত না জুটলে স্বাধীনতা দিয়া কী করুম। বাজারে গেলে ঘাম ছুটে যায়। আমাগো মাস, মাংস আর চাইলের স্বাধীনতা লাগবো।’ শীর্ষক শিরোনামে নিউজ করায় তাকে আটক করা হয়েছে।